বিশ্বকাপ বাছাইয়ের দ্বিতীয় পর্ব ও এএফসি এশিয়ান কাপের বাছাই পর্বে আজ ভারতের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। কলকাতার সল্টলেক স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় রাত ৮ টায় অনুষ্ঠিত হবে ম্যাচটি। আন্ডারডগ হলেও ফেবারিট ভারতের বিপক্ষে মোটেই চাপ নিচ্ছে না বাংলাদেশ। জানিয়েছেন দলীয় অধিনায়ক জামাল ভুইয়া।
দুই দলের লড়াইটা হয়ে আসছে প্রায় চার যুগ ধরে। পরিসংখ্যান বলছে ২৮ বারের দেখায় ১৩ বার জয় পেয়েছে ভারত। দুই দল ড্র করেছে ১৩ টি ম্যাচ। বাংলাদেশ জিতেছে মাত্র দু'টি ম্যাচ। সর্বপ্রথম ভারত-বাংলাদেশ ফুটবল ম্যাচটি হয় ৪১ বছর আগে। এশিয়ান গেমসে ১৪ অক্টোবর অনুষ্ঠিত ঐ ম্যাচে ৩-০ গোলের জয় পায় ভারত। একই টুর্নামেন্টে ১৯৮২ সালে ২-০ গোলে জিতে ভারত। ১৯৮৫ সালে বিশ্বকাপের বাছাইয়ে দু'টি ম্যাচেই ২-১ গোলে বাংলাদেশকে হারায় প্রতিবেশি দেশটি। একই বছর সাউথ এশিয়ান ফেডারেশন গেইমে সর্বপ্রথম ভারতের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করে লাল-সবুজরা। সেই থেকে ভারতের সঙ্গে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বীতা গড়ে উঠে বাংলাদেশের। প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ভারতের সামনে অপরাজীত ছিলো বাংলাদেশ। ১৯৮৮ সালে এএফসি এশিয়ান কাপের দু'টি ম্যাচই গোলশূন্য ড্র হয়। ১৯৮৯ সালে সাউথ এশিয়ান ফেডারেশন গেমে ১-১ গোলের ড্র। এর দু'বছর পর একই টুর্নমেন্টে ভারতকে প্রথমবারের মতো হারায় বাংলাদেশ দল। সে জয়টি ছিলো ২-১ গোলের। দীর্ঘ ১ যুগেরও বেশি সময় পরে ১৯৯৪ বাংলাদেশকে আবারো হারায় ভারত। যেটি ছিলো ৪-১ গোলের ব্যবধানে। ১৯৯৫ সালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে আবারো বাংলাদেশের কাছে পয়েন্ট হারায় ভারত। এবারের ম্যাচটি গোলশূণ্য ড্র হয়। একই বছর আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে বাংলাদেশ ১-০ গোলে হারে। ৯৭ সালে সাফের ম্যাচে বাংলাদেশকে ৩-০ গোলে হারায় ভারত। পরের বছর সাউথ এশিয়ান নেশন কাপে আবারো গোলশূণ্য ড্র করে মাঠ ছাড়ে দু'দল। ১৯৯৯ সালে সাফের প্রথম ম্যাচেও একই ফল ছিলো। তবে দ্বিতীয় ম্যাচে ২-০ গোলে জিতে ভারত। একই বছর সাউথ এশিয়ান ফেডারেশন গেমে ভারতকে ১-০ গোলে হারিয়ে দেয়া লাল-সবুজের ছেলেরা ২-২ গোলের ড্র করে এএফসি এশিয়ান কাপে। ২০০০ সালে গোল্ডেন জুবলি টুর্নামেন্টে ১-১ গোলের ড্র করে দুই দল। একই বছর আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে আবারো মুখোমুখি হয় দু'দল। এবার ১-০ গোলের জয় পায় ভারত।২০০২ সালে এশিয়ান গেমসেও বাংলাদেশকে ৩-০ গোলে হারিয়ে দেয় তারা।২০০৩ এবং ২০০৫ সালে উভয় সাফেই ১-১ গোলে পয়েন্ট ভাগাভাগি করে দু'দল। ২০০৫ সালের সাফে ভারত জিতেছিলো ২-০ গোলের ব্যবধানে। ২০০৭ সালের নেহেরু কাপ এবং ২০০৯ সালের সাফে ভারত জিতে ১-০ গোলে। ২০১৩ সালের সাফে ১-১ গোলের ড্র এবং ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে ২-২ গোলের ড্র করেছিলো এই দুই দল।
নিজেদের ঘরের মাঠে ম্যাচ। তাই গ্যালারীভর্তি দর্শক এনে বাংলাদেশকে চাপের মুখে রাখার পরিকল্পনা ভারতের। কিন্তু ভারত যদি ভালো না খেলতে পারে তাহলে তো দর্শকদের তোপের মুখে তারাই পরবে। সে কথাটিই ম্যাচের আগেরদিন আরো একবার মনে করিয়ে দিলেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক জামাল ভুইয়া। বাংলাদেশ আন্ডারডগ, এটা কী আপনাকে অনুপ্রাণিত করবে নাকি চাপে রাখবে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে জামাল হেসে বলেন,'আমি আপনাদের এই বিশ্বাস কাল (আজ) ভেঙে দিব। কোনো চাপ অনুভব করছি না। আমি ব্যক্তিগতভাবে তো মোটেই না। আমি মনে করি চাপটা ভারতের উপর। তারা যদি ভালো খেলতে না পারে তাহলে দর্শকরা তাদের বিপক্ষে চলে যাবে। আমি সবাইকে বলেছি। তোমরা ম্যাচটি উপভোগ করো। এমন সুযোগ সব সময় আসে না। মুহূর্তটা উপভোগ করো। তিন পয়েন্টকে তাড়া করো। আর ভারত অবশ্যই ফেভারিট। এটা মিথ্যে নয়।'
মাঠে নামার আগে লাল-সবুজদের জন্য সুখবর হচ্ছে ভারতের রক্ষণভাগের সন্দেশ ঝিংগাং, রাউল নিষিদ্ধ। জামাল বলেন,'তারা অবশ্যই ভারতের খেলোয়াড়। গোল করতে হলে আমাদেরকে সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। সুযোগ কাজে লাগিয়ে আমরা যদি গোল না করতে পারি। ভারত গোল করবে।'
কোচ জেমি ডে বলেন,'বাংলাদেশকে দুর্বল ভাবলে ভুল করবে ভারত। তাদের থেকে আমাদের মাত্র ১ পয়েন্টের পার্থক্য। আমরা অবশ্যই ভালো ফুটবল খেলতে চেষ্টা করবো। এই ম্যাচে গোল করাটা ছেলেদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।'