ক্রীড়া প্রতিবেদক
বিশ্বকাপটা দুর্দান্ত কেটেছিল। বিশ্বকাপ শেষে শ্রীলংকা সফরে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলতে যাননি সাকিব। বিশ্রাম চেয়েছিলেন। বিসিবি তাকে সেই বিশ্রামের অনুমোদন দেয়। ঈদের আগেভাগে শুরু হওয়া কন্ডিশনিং ক্যাম্পেও যোগ দিতে পারেননি মাকে নিয়ে হজ পালনের কারণে। পবিত্র হজ পালন শেষে দেশে ফিরে দিন কয়েকের জন্য সাকিব আমেরিকা যান। সেখানেই তার স্ত্রী-কন্যা রয়েছে। পরিবারকে সময় দেয়ার পর এবার পুরোপুরি মনোযোগী হতে যাচ্ছেন ক্রিকেটে। শনিবার শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে এসে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন বাংলাদেশের টেস্ট ও টি২০ অধিনায়ক।
৫ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে আফগানিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র ম্যাচের টেস্ট সিরিজ। সেই টেস্টেও যেন ব্যাট হাতে নিজেকে হেভিওয়েট হিসেবে মেলে ধরা যায়- সেই পরিকল্পনা নিয়েই ব্যাটিংয়ে বাড়তি মনোযোগ বাংলাদেশ টেস্ট দলের অধিনায়কের।
সূচি অনুযায়ী শনিবার মিরপুরের ক্রিকেটারদের কন্ডিশনিং ক্যাম্পে ফিটনেস এবং ফিল্ডিং অনুশীলনের কথাই ছিল। কিন্তু কন্ডিশনিং ক্যাম্পে দারুণ সিরিয়াস সব ক্রিকেটার। ফিটনেস এবং ফিল্ডিং সেশন শেষে কয়েকজন লম্বা সময় ধরে ব্যাটিং অনুশীলনেও মনোযোগ দিলেন। সেই ক্লাসের সবচেয়ে মনোযোগী ছাত্র সাকিব আল হাসান। আজকাল যে ব্যাট হাতেই বেশি চমক দেখাচ্ছেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার। শেষ হওয়া বিশ্বকাপেই সেই প্রমাণ রেখেছেন সাকিব।
বিশ্বকাপের পর এই প্রথম সাকিবকে দেখা গেল জাতীয় দলের ক্যাম্পে, অনুশীলনে। নিজের ব্যক্তিগত সব কাজ শেষ করে গত শুক্রবার মধ্যরাতে দেশে ফেরেন সাকিব। দেশে ফেরার পর মাঠে ফিরতে দেরি করেননি তিনি। শনিবার সকালেই নেমে পড়েন শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের সবুজ গালিচায়। ছুটি শেষে ক্যাম্পে যোগ দিয়ে ফুরফুরে মেজাজে ছিলেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।
গত সপ্তাহে দলের সঙ্গে যোগ দেয়া প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো আর পেস বোলিং কোচ শার্ল ল্যাঙ্গাভেল্টের সঙ্গে অনুশীলনের ফাঁকে ফাঁকে কথাও বলেছেন সাকিব। নতুন কোচিং স্টাফের সঙ্গে পরিচয় পর্ব শেষে ব্যাট হাতে নেমে পড়েন সেন্টার উইকেটে। লম্বা সময় ধরে সাকিব ব্যাটিং করলেও ফিল্ডিং সেশনে যোগ দেননি।
প্রায় আধ ঘণ্টার অনুশীলনে রুবেল-তাসকিন-এবাদত-রাহীদের বোলিং সাবলীলভাবে খেলেছেন সাকিব। দেখে মনেই হয়নি প্রায় দুই মাস পর ব্যাট হাতে নিয়েছেন তিনি।
সেন্ট্রাল উইকেটে ব্যাটিং অনুশীলন করা সাকিবের সঙ্গে কী নিয়ে যেন খুনসুটি করলেন ল্যাঙ্গাভেল্ট। দেশের প্রধান ক্রিকেট তারকাও একগাল হেসে জবাব দিলেন খুনসুটির।
আগামী মাসে চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট। তাই অনুশীলন শেষে ক্রিকেট পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান আকরাম খান, প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন এবং দুই কোচের সঙ্গে আলোচনায় বসেছেন টেস্ট অধিনায়ক সাকিব। চট্টগ্রামে কেমন উইকেট চান সেটাও জানিয়েছেন তিনি। রশিদ-নবী-মুজিবদের আফগানিস্তানের বিপক্ষে চট্টগ্রামের উইকেট স্পিন সহায়ক না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি অবশ্য।
সাকিবের মাঠে ফেরা প্রসঙ্গে আকরাম খান বলেন, 'অধিনায়ক রাত তিনটায় দেশে পৌঁছে সকালে অনুশীলনে এসেছে, এটা খুব ইতিবাচক। সামনেই সিরিজ সেটা নিয়ে আমরা আলাপ-আলোচনা করলাম। খুবই ভালো আলোচনা হয়েছে। এটা আমরা ধারাবাহিকভাবে চালিয়ে যাব। কোচ-অধিনায়ক-নির্বাচকরা ছিলেন। পরিচয় পর্ব হলো। কীভাবে কাজ করব তা ঠিক করে ফেললাম। কীভাবে দেশে-বিদেশে ভালো করা যায়। কোচ-অধিনায়কের কী চাহিদা থাকবে, নির্বাচকদের কী ভূমিকা থাকবে। আমি কী করতে পারি। এসব নিয়ে কথা হয়েছে।'
১৯ আগস্ট শুরু হওয়া কন্ডিশনিং ক্যাম্পে গত কয়েকদিন ধরে অনুশীলন চললেও সেটি শেষের পথে। আজ রোববার শেষ হবে এই ক্যাম্প। এরপর শুরু হবে স্কিল অনুশীলন। আগামী ২৭ আগস্ট আফগানিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্ট ম্যাচের জন্য দল ঘোষণার কথা রয়েছে বলে জানান প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু।
আগামী ৩০ আগস্ট থেকে দুদিন চলবে একটি প্রস্তুতি ম্যাচ। ২৪ সদস্য নিয়ে লাল-সবুজ দলে ভাগ হয়ে খেলবে এই প্রস্তুতি ম্যাচ। কেননা, টেস্ট ম্যাচ খেলা হয়েছে দীর্ঘ পাঁচ মাস আগে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। নিজেদের টেস্টের আমেজে ফেরাতেও এই ম্যাচটার গুরুত্ব দিতেই হবে। দুদিনের প্রস্তুতি ম্যাচ শেষে চট্টগ্রামে ১ সেপ্টেম্বর থেকে আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলতে হবে দুদিনের প্রস্তুতি ম্যাচ। এরপর ৫ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচটি। এই ম্যাচের পর তিনদিন বিরতি দিয়ে শুরু হবে জিম্বাবুয়ে ও আফগানিস্তান নিয়ে ত্রিদেশীয় টি২০ সিরিজ।