নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাঁচা-মরার লড়াইয়ে নেমে পাঁচ রানে হারের দুঃখ এখনো ভুলতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আর ভুলবেই বা কী করে? কার্লোস ব্র্যাথওয়েটের অতি দানবীয় ইনিংসে ভর করে সেদিন কিউইদের রানের পাহাড় তো প্রায় টপকেই গিয়েছিল তারা। এমন সময়ে তীরে এসে তরী ডোবায় যন্ত্রণার সঙ্গে রাজ্যের হতাশাও কুঁকড়ে খাচ্ছে ক্যারিবীয়দের। অবশ্য এই বিশ্বকাপে জেসন হোল্ডারের দলের গল্পটা খানিকটা একইরকম। কখনো কখনো তাদের ব্যাটিং আর বোলিং দেখে চোখ ধাঁধিয়ে গেছে, আবার কখনো সহজ পরিস্থিতি থেকেও ম্যাচ বের করে আনতে ব্যর্থ হয়েছে বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম দুই আসরের চ্যাম্পিয়নরা। অঙ্কের হিসাব বলছে ক্যারিবীয়দের সেমিফাইনালে যাওয়ার আশা এখনো ফুরিয়ে যায়নি, কিন্তু ভারতের মতো শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে হারিয়ে সেই দরজার দিকে আর এক পা বাড়াতে কি পারবে তারা? বাংলাদেশ সময় বিকাল সাড়ে ৩টায় ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে দল দুটো একে অপরের মুখোমুখি হবে।
বিশ্বকাপের এবারের আসরে এখন পর্যন্ত হারের স্বাদ পেতে হয়নি কোহলির টিম ইন্ডিয়াকে। পাঁচ ম্যাচে নয় পয়েন্ট নিয়ে তারা এখন পয়েন্ট টেবিলের তিন নম্বরে। শেষ চারের দৌড়ে মোটামুটি নিরাপদ অবস্থানে থাকলেও অস্বস্তি থেকেই যাচ্ছে তাদের টিম ম্যানেজমেন্টের। বিশ্বকাপের মাঝপথে এসে ভারতের সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা ইনজুরির কালো থাবা আর মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানদের নির্বিষ ব্যাটিং। রশিদ-মুজিবদের বিপক্ষেও যা ভারতকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। সেদিন বুমরাহ আর শামিরা সময়মতো আফগান ব্যাটসম্যানদের টুঁটি চেপে না ধরলে আসরের সবচেয়ে বড় অঘটনের সাক্ষী হতে হতো রোজ বলের হাজার হাজার দর্শক-সমর্থককে। গত ম্যাচে বোলাররা ফর্মে থাকায় কোহলিরা তেমন বড় স্কোর না করেও আফগানিস্তানকে হারিয়ে দেয়। ভুবনেশ্বর কুমারের বদলি হিসেবে দলে এসে মোহাম্মদ শামি শেষ ওভারে হ্যাটট্রিক করে আফগানদের বিপক্ষে টিম ইন্ডিয়ার জয় নিশ্চিত করেন। হ্যামেস্ট্রিংয়ের চোটে এখনো কাবু ভুবনেশ্বরের জায়গায় ক্যারিবীয়দের বিপক্ষেও শামিই খেলবেন ধরে নেয়া যায়। মিডল অর্ডার যদি প্রত্যাশামতো খেলে, তাহলে ম্যানচেস্টারে ভারতের বড় স্কোর ঠেকায় কে!
আইপিএলে দারুণ খেলে আসার পর বিশ্বকাপের মঞ্চে আন্দ্রে রাসেলের কাছ থেকে অনেক প্রত্যাশা থাকলেও হাঁটুর চোট তাকে স্বাভাবিক খেলা খেলতে দেয়নি। বিশ্বকাপের আগে ক্যারিবীয় উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান শাই হোপের ব্যাট দু্যতি ছড়ালেও মূল পর্বের খেলায় এক বাংলাদেশ ছাড়া আর কারো সঙ্গেই ভালো করতে পারেননি তিনি। এবারই শেষ বিশ্বকাপ খেলতে নেমেছেন ইউনিভার্স বস ক্রিস গেইল। তবে তিনি এখনো তার নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। যেই ব্যাটিং গভীরতা ক্যারিবীয়দের আশা জোগাচ্ছিল ভালো কিছুর, সেই ব্যাটিং ব্যর্থতাই তাদের ডুবিয়েছে। একই চিত্র তাদের পেসারদেরও। এক শেল্ডন কটরেল ছাড়া আর কেউই তেমন জ্বলে উঠতে পারেননি।
এদিকে, আফগান ম্যাচে ধোনির মন্থর ব্যাটিং নিয়ে ভারতজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। ধোনির এমন স্স্নথ ব্যাটিংয়ের সমালোচনায় মুখর হয়েছে ক্রিকেট বিশ্ব। বাদ যাননি তারই আরেক সতীর্থ শচীন টেন্ডুলকারও। কোনোক্রমে ভারত সেই ম্যাচ জিতলেও তোপের মুখে পড়েছেন ধোনি। সমালোচনার মাঝেই এবার তার পাশে দাঁড়ালেন ভারতের সাবেক অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলী। তার আশা, চলতি বিশ্বকাপেই নিজের চেনা ছন্দ ফিরে পাবেন মাহি। আফগানদের বিপক্ষে সেই ম্যাচে বিজয় শঙ্কর আউট হতেই ক্রিজে আসেন ধোনি। এই রকম অবস্থায় মারকাটারি মাহি ম্যাজিক দেখে অভ্যস্ত ভারতীয় ক্রিকেট সমর্থকরা ধোনির ৫২ বলে মাত্র ২৮ রানের মন্থর ব্যাটিং দেখে হতবাক। বিশ্বের অন্যতম সেরা ফিনিশারের ব্যাট থেকে এমন ইনিংস দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়েন তারা। কিন্তু এত সমালোচনার মধ্যেও সৌরভের আশা আবার নতুনভাবে ফিরে আসবেন ধোনি। শুধু একটা ম্যাচের ওপর ভিত্তি করে ধোনির মতো ক্রিকেটারকে বিচার করা ঠিক নয় বলেও জানান তিনি। তবে চলতি বিশ্বকাপেই ধোনির ব্যাট গর্জে উঠবে, সব সমালোচনাকে মাঠের বাইরে ছুড়ে ফেলবেন মাহি এমনই মনে করছেন ২২ গজে বহু কামব্যাকের নায়ক সৌরভ।