মঙ্গলবার এক বল না হয়েই ভেস্তে যায় বাংলাদেশ-শ্রীলংকা ম্যাচ। এর আগে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে শ্রীলংকার ম্যাচও বৃষ্টিতে ভেসে যায়। ?বুধবার টন্টনে পাকিস্তান-অস্ট্রেলিয়া আর বৃহস্পতিবার ট্রেন্ট ব্রিজে ভারত-নিউজিল্যান্ড ম্যাচ হওয়া নিয়েও বড় প্রশ্নচিহ্ন আছে। কারণ ইংল্যান্ড তো বটেই, ইউরোপের সর্বত্র প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে। যা থামার কোনো লক্ষণ নেই। আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, ১৭ জুন পর্যন্ত বৃষ্টি এ রকমই ভোগাতে পারে বিশ্বকাপকে। তারপর বৃষ্টি হয়তো কমতে পারে।
চলতি বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত পাকিস্তান-শ্রীলংকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ-দক্ষিণ আফ্রিকা ও বাংলাদেশ-শ্রীলংকার মধ্যকার ম্যাচ বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হয়েছে। ইংল্যান্ডে এখন যে আবহাওয়া বিরাজ করছে তাতে চলতি টুর্নামেন্টে আরও বেশকিছু ম্যাচই ভেসে যাওয়ার আশঙ্কা করছে ক্রিকেটপ্রেমীরা।
তিন ম্যাচ বাতিল হয়েছে। আরও বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা। প্রকৃতির সামনে অসহায় আইসিসি, কিন্তু সমালোচনার তীর তাতে থেমে থাকার কথা নয়। ফলে লেজে-গোবরে অবস্থা আইসিসি কর্মকর্তাদের। তবুও বৃষ্টির পক্ষেই সাফাই গেয়েছে তারা।
আইসিসি জানিয়েছে, রিজার্ভ ডে রাখলে টুর্নামেন্টের ক্রীড়াসূচিতে ব্যাঘাত ঘটতো। পিচ তৈরি, দল স্থানান্তর, ম্যাচ অফিসিয়াল ও ভলান্টিয়ারদের পাওয়া নিয়েও সমস্যা হত। সঙ্গে সরাসরি সম্প্রচারের ব্যাপারটিও আছে। তবে সেমিফাইনাল থেকেই রিজার্ভ ডে থাকছে।
ইংল্যান্ডের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে চলতি বছরের জুন-জুলাইয়ে বৃষ্টির সম্ভাবনা ছিল। ব্যাপারটি আইসিসি জানা সত্বেও চলতি বিশ্বকাপে কেন রিজার্ভ ডে রাখা হয়নি। অনেকের মতো এমন প্রশ্ন করেছেন বাংলাদেশ দলের কোচ স্টিভ রোডসও।
বাংলাদেশ দলের ইংলিশ কোচ স্টিভ রোডস অবশ্য আইসিসিকে দোষারোপ করতে চান না। তার মতে, রিজার্ভ-ডে রাখা আইসিসির জন্য এবং খেলোয়াড়দের জন্য খুব কঠিন হয়ে যেত, 'আমরা সবাই ইংলিশ আবহাওয়া সম্পর্কে জানি। আনপ্রেডিক্টেবল। কখন বৃষ্টি আসবে সেটা কেউ জানে না। আমি জানি আবহাওয়াটা টুর্নামেন্ট আয়োজকদের জন্য ভাবনার কারণ। তবে রিজার্ভ-ডে রাখাটা কঠিন। যেহেতু আমাদের ভ্রমণ বেশি এবং এক শহর থেকে আরেক শহরে যেতে হয়। এই ধরনের টুর্নামেন্ট লম্বা হয়ে থাকে।'
ব্রিস্টলে মঙ্গলবার নেমেছিল বাংলাদেশের সমর্থকদের ঢল। তীব্র ঠান্ডার মাঝেও সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তারা বৃষ্টিতে ভিজে অপেক্ষা করেছে ম্যাচ দেখার আশায়। তাদের মন খারাপের দিনটিতে সান্তনা দিলেন রোডস।
খেলা না হওয়ায় নিজের হতাশা ভাগাভাগি করলেন সমর্থকদের সঙ্গে, 'আমি বলব এটা দর্শকদের জন্যও হতাশার। কেননা তারা টিকিট কিনে খেলা দেখতে আসে।'
নিজেদের পক্ষে সাফাই গেয়ে আইসিসির প্রধান নির্বাহী ডেভিড রিচার্ডসন বলেছেন, 'বিশ্বকাপে প্রতিটি ম্যাচের জন্য রিজার্ভ ডে রাখলে টুর্নামেন্টের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পাবে এবং এটা আয়োজন করা অনেক জটিল হয়ে যাবে। এর সাথে পিচ তৈরি, দলগুলোর তত্ত্বাবধান, ভেনু্য পাওয়া, টুর্নামেন্টের কর্মচারী, স্বেচ্ছাসেবক, ম্যাচ কর্মকর্তা, সম্প্রচার, সরবরাহকারী এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভ্রমণকারী দর্শকদের ম্যাচে থাকার সঙ্গে প্রভাব রয়েছে। রিজার্ভ ডেতে বৃষ্টি হবে না তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই।'
জুন মাসেই ইংল্যান্ডের আবহাওয়া যে এমন বর্ষণমুখর হয়ে উঠবে সেটা ভাবা যায়নি। কারণ ২০১৮ সালের জুনে এখানে মাত্র দুই মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। সেখানে গত ২৪ ঘণ্টায় ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
রিচার্ডসন বলেন, 'প্রতি ম্যাচে ১২০০ মানুষ যুক্ত থাকে। যারা ম্যাচের প্রতিটি ক্ষণের সঙ্গে জড়িত থাকেন। এই ১২০০ মানুষ নিয়েই আমাদের এক ভেনু্য থেকে অন্য ভেনু্যতে যেতে হয়। সবকিছু মিলিয়ে জটিল একটা বিষয়কে আরও বড় করা সম্ভব ছিল না। সবকিছু বিবেচনা করেই আমরা নকআউট পর্বে রিজার্ভ ডে রেখেছি। যেখানে একটা ম্যাচ আসলেই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে বর্তমানে একেবারেই অদ্ভুত আবহাওয়া চলছে। গত দুদিনে আমরা প্রায় গড়ে এক মাসের বৃষ্টি দেখে ফেলেছি। অথচ জুন ইংল্যান্ডের তৃতীয় শুষ্ক মাস হওয়ার কথা।'