বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রাঙ্গাটুঙ্গিতে নারী ফুটবলারদের বীরত্মগাথা

জাকির মোস্তাফিজ মিলু, ঠাকুরগাঁও
  ২৭ মার্চ ২০১৯, ০০:০০
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল রাঙ্গাটুঙ্গি এলাকা থেকে গড়ে ওঠা জাতীয় নারী ফুটবল দলের ৬ খেলোয়াড়ের মাঝে প্রশিক্ষক অধ্যক্ষ তাজুল ইসলাম -ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

তাদের সামনে কেবল সামাজিক বাধাই ছিল না, ছিল দারিদ্র্য, বাল্যবিয়ের চোখ রাঙানি, ছিল ফুটবলার হওয়ার জন্য নানান প্রতিবন্ধকতা। সব প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার নিভৃতপলস্নীর সুযোগ-সুবিধাবঞ্চিত গ্রামের মেয়েরা ফুটবল খেলছে, দেশের পরিসর অতিক্রম করে কেউ কেউ লাল-সবুজ জার্সিতে আন্তর্জাতিক সীমানায় পা রাখছে, অর্জন করছে ফুটবলার হিসেবে পেশাদারিত্ব, যা ছিল স্বপ্নেরও অতীত। এমনিতেই যেখানে তারা ফুটবল খেলছে সেসব প্রত্যন্ত গ্রামের চোখগুলো নারীদের হাফপ্যান্ট আর জার্সিতে ফুটবল খেলা দেখতে মোটেই অভ্যস্ত ছিল না। আজ সেই চোখগুলোতে ঝরছে নারী খেলোয়াড়দের জয়ের উচ্ছ্বাস, তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তিত হয়ে ফুটবল বীরাঙ্গনাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে নিজেদের মেয়েদের উৎসাহিত করছেন মাঠে যেতে।

ঠাকুরগাঁওয়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলের নিম্নবিত্ত পরিবারের মেয়েদের জাতীয় পর্যায়ের ফুটবলার হয়ে উঠার এই ব্যতিক্রমী সাহসী উদ্যোগের পুরোভাগে ছিলেন এলাকার ক্রীড়া অনুরাগী অধ্যক্ষ তাজুল ইসলাম। এই ক্যারিসমাটিক সংগঠক দরিদ্র ও নিম্নবিত্ত পরিবারের মেয়েদের নিয়ে জেলা শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে অজপাড়াগাঁয়ে ব্যক্তিমালিকানায় গড়ে তুলেছেন রাঙ্গাটুঙ্গি মহিলা ফুটবল একাডেমি নামে একটি মহিলা ক্রীড়া প্রশিক্ষণকেন্দ্র।

এই মেয়েরা বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব গোল্ডকাপ টুর্নামেন্টে জেলায় কয়েকবার চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেই দলটি রংপুর বিভাগেও চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। জাতীয় পর্যায়ে গিয়েও দুইবার রানার্সআপ হয়েছে। কয়েকজন বিএকেএসপিতে সুযোগ পেলেও অর্থের অভাবে ভর্তি হতে পারেনি বলে জানা গেছে।

ফুটবল ফেডারেশন থেকে ২ জন খেলোয়াড় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে ১০ লাখ টাকা করে আর্থিক অনুদান পেয়েছেন। সেই টাকায় তাদের দরিদ্র পরিবার ঘরবাড়ি নির্মাণনহ জমি কিনে ফসল ফলাচ্ছেন। তাদের দেখে এলাকায় মহিলা খেলোয়াড়ের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও অর্থের অভাবে কার্যক্রম চালাতে হিমশিম খাচ্ছে মহিলা ক্রীড়া প্রতিষ্ঠানটি।

ইতোমধ্যে রাঙ্গাটুঙ্গির ৬ জন নারী ফুটবলারের ঠাঁই হয়েছে জাতীয় দলে। এদের মধ্যে অনূর্ধ্ব-১৬ দলে সোহাগী কিসকু ও মুন্নী আক্তার আদূরী সম্প্রতি মায়ানমারে বাংলাদেশের হয়ে খেলেছেন। আর অনূর্র্ধ্ব ১৫ দলে বিথীকা কিসকু, কোহাতী কিসকু, কাকলী আক্তার, শাবনুর নিয়মিত অনুশীলন করছেন।

শুরুর কথা রূপকথার মতোই মনে হতে পারে। ২০১৪ সালে রাণীশংকৈল রাঙ্গাটুঙ্গি এলাকার মাঠে একটি প্রীতি ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। খেলার বেশির ভাগ দর্শক ছিলেন নারী। মাঠের পাশেই কয়েকজন মেয়ে ফুটবল নিয়ে খেলছিল।

তখন তাদের ডেকে এলাকার ক্রীড়া অনুরাগী অধ্যক্ষ তাজুল ইসলাম ফুটবল খেলার কথা বলেন। তাদের ফুটবল খেলার আগ্রহ দেখে পরেরদিন মাঠে অনুশীলনের জন্য আসতে বলেন। প্রথম দিনে ৫ জন, এভাবে বর্তমানে আরও ২৪ জন ক্ষুদে ফুটবলার নিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

২০১৪ সালের পর থেকে রাঙ্গাটুঙ্গি মহিলা ফুটবল একাডেমিকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বাকি মেয়েদেরও স্বপ্ন জায়গা করে নিতে হবে জাতীয় দলে। সেই সঙ্গে ঠাকুরগাঁওয়ের নাম ছড়িয়ে দিবে বিশ্বব্যাপী। সেই লক্ষ্যে ক্ষুদে এই খেলোয়াড়রা কোচ জয়নুল ইসলাম, শুগা মরমু ও পরিচালক অধ্যক্ষ তাজুল ইসলামের অধীনে অনুশীলন করছে প্রতিদিন।

ক্রীড়া অনুরাগী অধ্যক্ষ তাজুল ইসলাম জানান, 'অনেক কষ্ট করে গ্রামের মেয়েদের ভালো ফুটবলার তৈরিতে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। নিজ উদ্যোগে একটি একাডেমি তৈরি করেছি। সরকারি বা কোন অর্থশালী ব্যক্তি যদি এগিয়ে আসে তাহলে এখান থেকে দেশের ভাল মানের নারী ফুটবলার তৈরি হবে। তারা এলাকার ও দেশের সুনাম বয়ে নিয়ে আসার ক্ষমতা রাখে।

তিনি আরও বলেন, রাঙ্গাটুঙ্গি মহিলা ফুটবল একাডেমীর ৬ জন খেলোয়াড় জাতীয় দলে খেলছে। ২ জন ১০ লাখ করে অনুদান পেয়েছে তাদের পরিবার লাভবান হয়েছে। আশা করি বাকিরাও পাবে। তবে বাফুফের উচিত লোকালয়ে যে সকল খেলোয়াড় তৈরির প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়ানো। কারণ প্রতিষ্ঠান না থাকলে জাতীয় পর্যায়ের খেলোয়াড় তৈরি হবে না। খেলোয়াড়দের পাশাপাশি খেলার প্রতিষ্ঠানকেও সরকারি সহযোগিতা উচিত। নিজের অর্থ ব্যয় করে একাডেমিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু অর্থের অভাবে ইচ্ছে থাকলেও সবার চাহিদা পূরণ করতে পারছি না।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<42733 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1