প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে রোববার ২০০ ওয়ানডে ম্যাচ খেলার মাইলফলক স্পশর্ করেছেন মাশরাফি বিন মতুর্জা। এমন দিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বল হাতেও দ্যুতি ছড়িয়েছেন টাইগারদের ওয়ানডে অধিনায়ক। ১০ ওভার বোলিং করে ৩০ রান দিয়ে ফিরিয়েছেন প্রতিপক্ষের টপ ও মিডলঅডাের্রর তিন ব্যাটসম্যানকে। ৬০টি ডেলিভারির মধ্যে ডট বল ছিল ৪১টি। মাশরাফির ১০ ওভারে বাউন্ডারি এসেছে মাত্র দুটি। নিজের প্রথম ওভারের প্রথম বলে একটি চার ও শেষ ওভারের শেষ বলে একটি ছক্কা। রান আটকে বোলিং করে যাওয়াতেই এসেছে সফলতা। অঁাটোসঁাটো বোলিংয়ে সফরকারী ব্যাটসম্যানের কঠিন পরীক্ষায় ফেলেন তিনি।
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের উইকেট বরাবরই রহস্যময়। টেস্ট সিরিজের পর ওয়ানডে সিরিজের শুরুতেও সেই রহস্য ভেদ করতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানরা। উইকেটটা অবশ্য ব্যাটিংয়ের জন্য যথেষ্টই কঠিন ছিল। অসমান বাউন্সের কারণে স্বাভাবিক শট খেলতে বেগ পেতে হয়েছে ব্যাটসম্যানদের। সেই সুবিধাটাই নিয়েছেন টাইগার বোলাররা। বিশেষ করে পেসাররা। টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ক্যারিবীয় দলপতি রোভম্যান পাওয়েল, সেটা বুমেরাং হয়ে যায় টাইগারদের দুদার্ন্ত বোলিংশৈলীতে। যেখানে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন মাশরাফি।
টেস্ট সিরিজে স্পিনারদের রাজত্ব ছিল। তাইজুল ইসলাম, মেহেদী হাসান মিরাজরা মুড়িমুড়কির মতো উইকেট পেয়েছেন। রোববার মিরপুরে দুই প্রান্তেই স্পিনারদের দিয়ে বোলিং শুরু করিয়েছিলেন মাশরাফি। তবে স্পিনাররা নন, এবার রঙিন পোশাকে পেসাররা নেতৃত্ব দিয়েছেন সামনে থেকে। তাতে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি উইন্ডিজ। শুরু থেকেই বোলিংয়ে দারুণ ছন্দ ধরে রাখে টাইগাররা। এক পযাের্য় মাশরাফি জ্বলে ওঠেন। তার সঙ্গে নিজেদের মেলে ধরেন সাকিব, মিরাজ, মুস্তাফিজ, রুবেলরাও।
বাংলাদেশি স্পিনারদের নিয়ে উইন্ডিজদের মধ্যে যে আতঙ্ক ছিল, সেই আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে পেসাররা। মাশরাফি ৩০ রানে নিয়েছেন ৩ উইকেট। অপর দুই পেসার মুস্তাফিজুর রহমান ৩৫ রান দিয়ে ৩টি এবং রুবেল হোসেন ৬১ রান দিয়ে ১টি উইকেট নিয়েছেন। এছাড়া স্পিনারদের মধ্যে মেহেদী হাসান মিরাজ ৩০ রান দিয়ে ১টি এবং সাকিব আল হাসান ৩৬ রান দিয়ে ১টি উইকেট দখল করেন। অথার্ৎ উইন্ডিজের হারানো ৯ উইকেটের মধ্যে ৭টিই পেসারদের। সেখানে একটু বেশিই উজ্জ্বল ছিলেন মাশরাফি।
উইন্ডিজ শিবিরে দ্বিতীয় আঘাত হানেন মাশরাফি। ড্যারেন ব্রাভোকে (১৯) বিভ্রান্তিতে ফেলে উইকেট আদায় করেন এ পেসার। মাশরাফির ছোড়া ডেলিভারিটি ¯েøায়ার ছিল, সেটি বোঝার আগেই তার ব্যাট চলে আসে বলের কাছে। বল আকাশে ভাসে কিছুক্ষণ। লং-অফ থেকে দৌড়ে আসেন তামিম ইকবাল। অসাধারণ ডাইভে বাজপাখির মতো উড়ে বল হাতে জমিয়ে অধিনায়কের ২০০তম ম্যাচে উপহার দেন প্রথম উইকেট। ৬৫ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারানোর পর ৭৮ রানে আবার সেই মাশরাফির কাছেই পরাস্ত হন সাই হোপ।
প্রথম স্পেলে দুই উইকেট নেয়ার পর বিরতি দেন মাশরাফি। মাঝে মিরাজ-মুস্তাফিজরা উইকেট নেয়ার পর আবার আক্রমণে ফেরেন। নতুন স্পেলে বল হাতে নিয়েই টাইগার দলপতি ফেরান প্রতিপক্ষ অধিনায়ক রোভম্যান পাওয়েলকে (১৪)। নিজের ২০০তম ওয়ানডেতে বাংলাদেশ অধিনায়কের এটি তৃতীয় শিকার। মাশরাফির কাটার বুঝতে না পেরেই ব্যাট চালিয়েছিলেন পাওয়েল। যে কারণে শটে জোর হয়নি। তাই মিডঅফে সহজ ক্যাচ চলে যায় লিটন দাসের হাতে।
ইনিংসের শেষ দিকে এসে আলো ছড়িয়েছেন কাটার মাস্টার মুস্তাফিজও। রোস্টন চেস আর কিমো পলের সৌজন্যে কিছুটা লড়াই গড়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ইনিংসের প্রথম অধর্শত রানের জুটি পায় দলটি সপ্তম উইকেটে। চেসকে ফিরিয়ে সেই জুটি ভাঙেন মুস্তাফিজ। কাটার মাস্টারের লেংথ বল অন সাইডে উড়িয়ে মারতে চেয়েছিলেন চেজ। বল ব্যাটের কানায় লেগে ক্যাচ ওঠে পয়েন্টে। সহজ ক্যাচ নিতে সমস্যা হয়নি মিরাজের।
ইনিংসের শেষ ওভারে কেমো পলকে (৩৬) মিরাজের ক্যাচে ফেরান মুস্তাফিজ। কিছুক্ষণ পরই বিশুকে নিজের বলে নিজের ক্যাচে ফেরান সাজঘরে তিনি। উইন্ডিজের ইনিংস শেষ হয় ১৯৫ রানে। তাতে ২-০ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজে ক্যারিবীয়দের ধবলধোলাই করার পর তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজেও দুদার্ন্ত শুরু পেয়ে যায় বাংলাদেশ।