সকালের হালকা কুশায়ায় শীতের আগমনী বাতার্। শিশিরে মাঠ ভেজা, উইকেটে ঘাসের ছেঁায়া; পেস বোলারদের জন্য আদশর্ পরিবেশ। কতটা আদশর্? কাইল জাভির্স-ডোনাল্ড তিরিপানো, তেন্দাই চাতারারা সেটা ভালো করেই বুঝিয়ে দিলেন। মিরপুরে টেস্টের প্রথম ঘণ্টা পেরোনোর আগেই ২৬ রানে তিন উইকেট বাংলাদেশের। লিটন কুমার দাস, ইমরুল কায়েস আর অভিষিক্ত মোহাম্মদ মিঠুনকে হারিয়ে বাংলাদেশ তখন ঘোর বিপাকে। এমন পরিস্থিতিতে ভালো একটি জুটি খুব প্রয়োজন ছিল সিরিজ বঁাচানোর চ্যালেঞ্জ নিয়ে মাঠে নামা স্বাগতিকদের। প্রয়োজনীয় সেই জুটিটাই এনে দিলেন মুমিনুল হক আর মুশফিকুর রহিম। তাদের রেকডর্গড়া জুটিতেই অঁাধার কাটিয়ে আলোয় ফিরেছে বাংলাদেশ।
চতুথর্ উইকেটে মুমিনুল-মুশফিকের ব্যাটে গড়ে উঠল ২৬৬ রানের অনন্য এক জুটি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে যেকোনো উইকেটে জুটিতেই এটি টাইগারদের সবোর্চ্চ। যেকোনো দেশের বিপক্ষে চতুথর্ উইকেটেও বাংলাদেশের সবোর্চ্চ। চলতি বছরই আগের সবোর্চ্চ ১৮০ রানের জুটিটি দেখেছিল বাংলাদেশ, শ্রীলংকার বিপক্ষে সেই জুটিতে লিটন দাসের সঙ্গে ছিলেন মুমিনুলও। জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত সেই ম্যাচে বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করেছিলেন মুমিনুল। আশ্চযের্র বিষয় হলো, এর পরের আট ইনিংসে এই বঁাহাতি ছিলেন নিজের ছায়া হয়ে। যেখানে তার স্কোরগুলো যথাক্রমেÑ ০, ৩৩, ১, ০, ০, ১৫, ১১, ৯। ছন্দ ফিরে পাওয়া সেই মুমিনুল এবার খেলেছেন ১৬১ রানের মহাকাব্যিক এক ইনিংস।
মুমিনুলের মতো ওই আট ইনিংসে বাংলাদেশের দলীয় পুঁজিও ছিল নগণ্য। একবারও ২০০ রানের গÐি পেরোতে পারেনি। তাই প্রতিটি টেস্টেই বড় ব্যবধানে হার দেখতে হয়েছে। ব্যাটিংটা তাতে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের বড় দুশ্চিন্তা হয়ে উঠে। টাইগারদের এই দুভোের্গর শুরু শ্রীলংকার বিপক্ষে, সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে। এই মিরপুরেই প্রথম ইনিংসে ১১০ এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ১২৩ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে প্রথম টেস্টে নিজেদের সবির্নম্ন রানের স্কোর গড়ে টাইগাররা। প্রথম ইনিংসে মাত্র ৪৩ রানে অলআউট হওয়ার লজ্জায় ডুবে তারা। দ্বিতীয় ইনিংসে করে ১৪৪ রান। সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের দুই ইনিংসে টাইগারদের সংগ্রহ ছিল যথাক্রমে ১৪৯ আর ১৬৮।
এরপর চলতি জিম্বাবুয়ে সিরিজের প্রথম টেস্ট। সেটা ছিল আবার সিলেট আন্তজাির্তক স্টেডিয়ামের অভিষেক টেস্ট। সেই টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১৪৩ রানেই অলআউট বাংলাদেশ, স্বাগতিকরা ঘুরে দঁাড়াতে পারেনি দ্বিতীয় ইনিংসেও। ৩২১ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ১৬৯ রানে থামে তারা, মেনে নিতে হয় ১৫১ রানের বড় পরাজয়। ওই পরাজয় বাংলাদেশকে ঠেলে দিয়েছে ঘোর বিপাকে। জিম্বাবুয়ের মতো মিনোস দলের সঙ্গেও এখন সিরিজ বঁাচাতে লড়তে হচ্ছে টাইগারদের। সেই ম্যাচেও শুরুটাও ছিল হাড়ে কঁাপন ধরিয়ে দেয়ার মতো। অবশেষে মুমিনুল-মুশফিক জুটি ত্রাতা হয়ে রক্ষা করেছে টাইগারদের।
আট ইনিংস পর দলকে ২০০ রানের গÐি পার করিয়ে ক্যারিয়ারের সপ্তম সেঞ্চুরিতে রানখড়া কাটিয়েছেন মুমিনুল। রানের খড়া কাটিয়েছেন মুশফিকও। মুমিনুলের মতো টেস্ট ক্রিকেটে সময়টা ভালো যাচ্ছিল না তারও। জানুয়ারিতে শ্রীলংকার বিপক্ষে যে ম্যাচে সবশেষ দুটো পেরোনো পুঁজি গড়তে পেরেছিল বাংলাদেশ, ওই ম্যাচের প্রথম ইনিংসে মুশফিক খেলেছিলেন ৯২ রানের ইনিংস। এরপর আর নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি বাংলাদেশের ক্রিকেটের মিস্টার ডিপেন্ডেবল। এদিন ১১১ রানের হার না মানা ইনিংসে মুশফিকও ফিরেছেন চেনা ছন্দে। বাংলাদেশও তাই বড় পুঁজি গড়ার ভীত পেয়ে গেছে। কেটে গেছে আধার, ফুটেছে আশার আলো।
টেস্টে বাংলাদেশের সেরা জুটি
জুটি রান প্রতিপক্ষ ভেন্যু সাল
সাকিব-মুশফিক ৩৫৯ নিউজিল্যান্ড ওয়েলিংটন ২০১৭
তামিম-ইমরুল ৩১২ পাকিস্তান খুলনা ২০১৫
আশরাফুল-মুশফিক ২৬৭ শ্রীলংকা গল ২০১৩
মুমিনুল-মুশফিক ২৬৬ জিম্বাবুয়ে মিরপুর ২০১৮
মুমিনুল-মুশফিক ২৩৬ শ্রীলংকা চট্টগ্রাম ২০১৮
চতুথর্ উইকেটে বাংলাদেশের সেরা জুটি
জুটি রান প্রতিপক্ষ ভেন্যু সাল
মুমিনুল-মুশফিক ২৬৬ জিম্বাবুয়ে মিরপুর ২০১৮
মুমিনুল-লিটন ১৮০ শ্রীলংকা চট্টগ্রাম ২০১৮
নাঈম-সাকিব ১৬৭ উইন্ডিজ মিরপুর ২০১২
তামিম-সাকিব ১৫৫ অস্ট্রেলিয়া মিরপুর ২০১৭
তামিম-সাকিব ১৩২ জিম্বাবুয়ে খুলনা ২০১৪