বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নিজেকে ‘বড়’ ভাবছেন না লিটন

এখনো বড় প্লেয়ার হইনি (হাসি)। আমার কাছে এতটা মনে হয় না। কিন্তু আমি চেষ্টা করব, ধারাবাহিকতা বজায় রেখে নিয়মিত পারফমর্ করার। আমার কাছে মনে হয়, প্রতিদিন প্রতিটা ম্যাচ অনেক গুরুত্বপূণর্। এটা সত্যি, একটি ম্যাচ অনেকের ক্যারিয়ারে অনেক প্রভাব ফেলতে পারে
ক্রীড়া প্রতিবেদক
  ১৭ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০
আপডেট  : ১৭ অক্টোবর ২০১৮, ১৪:১৮

ঘরোয়া লিগে ব্যাট হাতে ঝড় তুললেও জাতীয় দলের হয়ে বারবারই ব্যথর্তার প্রমাণ দিচ্ছিলেন লিটন কুমার দাস। কিন্তু দুবাইয়ে সদ্য সমাপ্ত এশিয়া কাপে যে সামথের্্যর প্রমাণ তিনি দিয়েছেন তা তুলনাহীন। বিশেষ করে ফাইনালে তার ব্যাটেই শিরোপা জয়ের স্বপ্ন দেখছিল টাইগাররা। ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে তার অভিষেক সেঞ্চুরি (১২১ রান) এবং এক ম্যাচ আগে আফগানদের বিপক্ষেও তার ব্যাট হেসেছে। দলের প্রয়োজনে খেলেছেন দায়িত্বশীল এক একটি ইনিংস। আন্তজাির্তক ক্রিকেটে এমন পারফরমেন্স করার কারণেই সামনে এগিয়ে যাওয়ার আত্মবিশ্বাস বেড়েছে তার। সামথর্্য অনুযায়ী যা কিছুই করেছেন, তারপরও এখনো নিজেকে বড় খেলোয়াড় ভাবছেন না এই ওপেনিং ব্যাটসম্যান। মিরপুর শেরে বাংলায় ক্যাম্পের দ্বিতীয় দিনে চলেছে বাংলাদেশ দলের কঠোর অনুশীলন। সোমবার ক্যাম্প শুরুর দিনে দুই বেলা অনুশীলন হলেও দ্বিতীয় দিনে তা হয়নি। বিসিবির নিধাির্রত সূচি অনুযায়ী অনুশীলন শুরুর কথা ছিল সকাল সাড়ে ৯টায়। তবে হঠাৎই বদলে গেছে অনুশীলনের সময়সূচি। সকাল সাড়ে ৯টার বদলে মঙ্গলবার শুরু হয়েছে দুপুর ১টায়। যদিও সাড়ে ১২টার পর থেকেই হালকা ওয়ামর্আপ ও স্ট্রেচিং করেছেন ক্রিকেটাররা। দুপুর ১টা বাজার ঠিক আগমুহূতের্ তাদের সঙ্গে যোগ দেন ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মতুর্জা। এরপর শেরে বাংলার সেন্ট্রাল উইকেটে ব্যাটিং-বোলিং অনুশীলনে নামেন তারা। দলের সঙ্গে অনুশীলনে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন লিটনও। অনেকটা সময় কিপিং অনুশীলনও করেছেন তিনি। তবে দলে লিটনের ভ‚মিকা এখন ব্যাটসম্যান, অতি প্রয়োজনে কিপার। তবে লিটন এখন দুই ভ‚মিকাতেই ভালো করছেন। ব্যাট হাতে এশিয়া কাপে ভালো খেলার কারণেই চাপমুক্ত আছেন তিনি। মঙ্গলবার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে দলের সঙ্গে অনুশীলনের আগে গণমাধ্যমকে এই ডানহাতি বলেছেন, ‘আমি বলব না যে পূণর্ আত্মবিশ্বাস আছে। তবে আগে থেকে একটু চাপ মুক্ত অবস্থায় আছি, এটা বলতে পারেন। আর নিজের প্রতি একটু আত্মবিশ্বাস এসেছে। যখন ভালো কিছু করি তখন নিজের ভেতর এই জিনিসটা আসে।’ এশিয়া কাপে যাওয়ার আগে বলেছিলেন, বড় ইনিংস খেলতে পারছেন না কারণ বড়দের কাতারে যেতে পারেননি। এশিয়া কাপের ফাইনালের মতো বড় মঞ্চে ভারতের মতো শক্তিধর প্রতিপক্ষের বিপক্ষে খেলে ফেলেছেন বড় ইনিংস। এরপরও নিজেকে বড় মনে করছেন না এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান। এশিয়া কাপে ব্যাটে যে ধার তিনি দেখিয়েছেন তা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন লিটন, ‘এখনো বড় প্লেয়ার হইনি (হাসি)। আমার কাছে এতটা মনে হয় না। কিন্তু আমি চেষ্টা করব, ধারাবাহিকতা বজায় রেখে নিয়মিত পারফমর্ করার। আমার কাছে মনে হয়, প্রতিদিন প্রতিটা ম্যাচ অনেক গুরুত্বপূণর্। এটা সত্যি, একটি ম্যাচ অনেকের ক্যারিয়ারে অনেক প্রভাব ফেলতে পারে। কিন্তু আমাকে পরের ম্যাচে কিন্তু আবার শূন্য থেকেই শুরু করতে হবে। আমার চেষ্টা শূন্য থেকে বড় কিছু করা। ওটা নিয়ে এখন আশা করে বা চিন্তা করে কোনো লাভ নেই।’ এশিয়া কাপ থেকে ফিরেই জাতীয় লিগে (এনসিএল) ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন লিটন। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে নিজের আগের দ্রæততম সেঞ্চুরির রেকডর্ ভেঙে করলেন নতুন রেকডর্। ১৪০ বলে ২০০। আগেরটি ছিল ১৯২ বলে। কি করে সম্ভব হলো? লিটন বললেন, ‘একজন ক্রিকেটার পারফমর্ করলে মাথা থেকে সেই জিনিসটা সরে যায়। ক্রিকেট তো সম্পূণর্ মানসিকতার খেলা। মানুষ বলে, মন যত পরিষ্কার থাকবে তত ভালো খেলবেন। যেহেতু পারফমর্ করিনি, তখন মনে নিজের সামথের্্য একটু প্রশ্ন থাকেই। আর পারফমর্ করার পর মানসিকভাবে একটু চাপ মুক্ত হওয়া যায়। এই জন্য হয়তো ভালো হয়েছে।’ আন্তজাির্তক ক্রিকেটে কোনো কিছু হচ্ছিল না মনমতো, এতদিনে নিজের ঘাটতির জায়গা চিনেছেন ভালো করে। এবার লক্ষ্যটাও ঠিক করে ফেলেছেন এই ওপেনার, ‘হ্যঁা, আমার মূল লক্ষ্য এটাই। আমার মনে হয়, আমি যখন ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলি, তখন ধারাবাহিক পারফরমেন্স দিয়ে থাকি। ওই জিনিসটাই ঘাটতি ছিল আন্তজাির্তক ক্রিকেটে। আমি চেষ্টা করছি, আন্তজাির্তক ক্রিকেটেও ধারাবাহিকভাবে পারফমর্ করে যাওয়ার।’ এশিয়া কাপে ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতে সাফল্যের রেসিপি কী? লিটন দাস বলেন, ‘আমার খেলার ধরনটাই এমন। রেসিপিটা কী, সেটা কীভাবে বলব বুঝতে পারছি না। আমার ন্যাচারাল খেলার ধরনটাই এমন।’ এশিয়া কাপের ফাইনালে আউট ও আরও কিছুক্ষণ ব্যাট না করতে পারার আক্ষেপ নিয়ে বলেন, ‘হ্যঁা, আরও কিছুক্ষণ খেলতে পারলে ভালো হতো, দলের জন্য ও আমার জন্য। আর আউট নিয়ে কিছু বলার নেই। আম্পায়ার যেহেতু আউট দিয়েছে, সেটা আউটই।’ তামিম না থাকায় লিটন সিনিয়র, কীভাবে দেখছেন ব্যাপারটাকে? লিটন জবাব, ‘আমিও যে দলে নিয়মিত ছিলাম, তাও না। তামিম ভাই ছিল নিয়মিত। তার সাথে সাথে সবাই আসা-যাওয়ার মধ্যে ছিল। আমার নিয়মিত হওয়ার কোনো সুযোগই ছিল না। আমার সাথে যে সঙ্গী হবে, সেও নতুন হবে, আমিও নতুন। হ্যঁা, আত্মবিশ্বাসের জায়গা থেকে একটু ভালো জায়গায় আছি হয়তো। কিন্তু আমি আগেও বলেছি, প্রতিটা ম্যাচ নিভর্র করে সেই দিনের ওপরে। হতে পারে পরের ম্যাচে আমি শূন্যও করতে পারি। সেই আকাশ ছেঁায়া আত্মবিশ্বাস নিয়ে কোনো লাভ নেই।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে