আবুধাবি-দুবাই-আবুধাবি; এশিয়া কাপের ম্যাচ খেলতে বাংলাদেশ দলকে চক্কর কাটতে হচ্ছে আন্তঃজেলা পরিবহনগুলোর মতো! চড়াই-উতরাই পেরোতে গলদঘমর্ হতে হচ্ছে। একে আরব আমিরাতের তীব্র গরমে নাজেহাল মাশরাফি বিন মতুর্জার দল, তার ওপর ব্যাটসম্যানদের ব্যাখ্যাতীত বাজে পারফরম্যান্স দলটিকে দঁাড় করিয়ে দিয়েছে খাদের কিনারে। সেখান থেকে ফিরে আসার একটা পথই খোলা, জয়! হারলেই শেষ হয়ে যাবে এশিয়া কাপ। আবুধাবিতে আজ আফগানিস্তানের বিপক্ষে সুপার ফোরের ম্যাচটি তাই টাইগারদের জন্য অগ্নিপরীক্ষা।
আবুধাবিতে গ্রæপ পবের্র শেষ ম্যাচে এই আফগানিস্তানের কাছে ১৩৬ রানে হেরেছিল বাংলাদেশ। ওই হারের দুঃস্মৃতি নিয়ে ১৪০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে দুবাইয়ে গিয়ে ১৫ ঘণ্টার ব্যবধানে খেলতে হয়েছে আরেকটি ম্যাচ, সেটাও সুপার ফোরে শক্তিধর ভারতের বিপক্ষে। ওই ম্যাচেও যারপরনাই বাজে ব্যাটিং প্রদশর্নী দেখিয়েছে টাইগাররা। ১৭৩ রানে অলআউট হয়ে ম্যাচ হেরেছে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে। শেষদিকে মেহেদী হাসান মিরাজ ওয়ানডেতে তার অন্যতম সেরা ইনিংসটি না খেললে ওই ১৭৩ পযর্ন্তও যাওয়া হতো না বাংলাদেশের, তাতে হয়তো আরও বড় ব্যবধানেই হারতে হতো।
রোহিত শমার্, মহেন্দ্র সিং ধোনিদের তেমন কোনো সমস্যায় ফেলতে পারেনি টাইগার বোলাররা। পক্ষান্তরে ভারতীয় বোলাররা নাজেহাল করে ছেড়েছেন সাকিব-মুশফিকদের। ৪ উইকেট নিয়ে বঁাহাতি স্পিনার রবিন্দ্র জাদেজা ভেঙে দিয়েছেন বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের মেরুদÐ। আগের ম্যাচে একইভাবে মুজিব উর রহমান, মোহাম্মদ নবি, রশিদ খানরা গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন টাইগাদের ব্যাটিং লাইনআপ। আজকের ম্যাচেও ওই তিন আফগান স্পিনার মাশরাফির দলের বড় দুশ্চিন্তার নাম। এশিয় কাপে টিকে থাকতে হলে আজ তাদের ভালোভাবে সামলাতে হবে। এর অন্যথা হলে বিপদ অনিবাযর্।
হারলেই সবর্নাশ। এশিয়া কাপের সবশেষ তিন আসরের দুটোতে ফাইনাল খেলা বাংলাদেশকে বিদায় নিতে হবে, শিরোপা ছেঁায়ার যে স্বপ্ন নিয়ে আরব আমিরাতে পা রেখেছে মাশরাফির দল, সেই স্বপ্নের সলিল সমাধি হবে আগেভাগেই। পরপর দুই ম্যাচে প্রতিপক্ষের কাছে নাস্তানাবুদ হওয়ার পরও দলপতি মাশরাফি কিন্তু আশা হারাননি। ভারতের কাছে শেষ ম্যাচে হারের পর তিনি বলেছেন, ‘আমরা টুনাের্মন্ট থেকে এখনও ছিটকে যাইনি। ভালো করে ঘুরে দাঁড়ানোর এখনো সুযোগ আছে। একটা দিন সময় আছে পরের ম্যাচের আগে। নিজেদের একটু গুছিয়ে নিয়ে পরের ম্যাচে নামতে হবে।’
যদিও কাজটা সহজ হবে না। দুবাইয়ের তুলনায় আবুধাবির উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য কঠিন। সেখানেই সামলাতে হবে আফগান স্পিনারদের। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের যা অবস্থা তাতে আশাবাদী হওয়া কঠিন। এরপরও মাশরাফি ভালো একটা দিনের অপেক্ষায়, এখনো ফাইনালের স্বপ্ন দেখছেন তিনি, ‘আমার কাছে মনে হয় এখনো সম্ভব (ফাইনাল)। আমার কাছে মনে হয়, এত হতাশ হওয়ার কিছু নেই। অবশ্যই দুটি ম্যাচে হার হতাশার। এটা কেউই চায়নি। বিশেষ করে এই ম্যাচের ফলাফলটা একটু বেশি হতাশার। কারণ গত ম্যাচের তুলনায় আজকের ম্যাচটা বেশি গুরুত্বপূণর্ ছিল।’
আফগানিস্তানের বিপক্ষে আজকের ম্যাচটা জিতলেই বাংলাদেশ ফাইনালে চলে যাবে, বিষয়টা এমন নয়। এরপর খেলতে হবে অনেকের চোখেই হট ফেভারিট পাকিস্তানের বিপক্ষে। তবে বাংলাদেশের ভাবনায় এখন আর পাকিস্তান নেই, ভাবনার পুরোটাজুড়েই আফগানিস্তান। কারণ, আফগানদের কাছে আজ হারলে পাকিস্তান ম্যাচটির আর কোনো গুরুত্বই থাকবে না। ওই ম্যাচের জয়-পরাজয়ে কিছুই যাবে আসবে না। আরেকটি নিয়মরক্ষার ম্যাচ খেলে ফিরে আসতে হবে দেশে। কিছুতেই এমন পরিস্থিতিতে পড়তে চায় না টাইগাররা।
দলের ব্যাটিংটাই বেশি ভোগাচ্ছে বাংলাদেশকে। দুই ওপেনার লিটন দাস আর নাজমুল হোসেন শান্ত ব্যথর্। তিনে নেমে সাকিব আল হাসানও সুবিধা করতে পারছেন না। আঙুলে চোট আছে তার, সেটাই হয়তো এই বঁাহাতির ব্যাটিংয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। চোট নিয়ে প্রথম ম্যাচ খেলেছিলেন মুশফিকুর রহিম। হঁাকিয়েছিলেন সেঞ্চুরি, ভারত ম্যাচে ফিরে ছন্দটা ধরে রাখতে পারেননি। অগ্নিপরীক্ষার ম্যাচে আজ তার ব্যাটের দিকেই প্রত্যাশার হাত বাড়িয়ে রাখছে টাইগাররা। টপঅডাের্র স্থিতিশীলতা আনতে ইতোমধ্যে সৌম্য সরকার আর ইমরুল কায়েস দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। আজ নাজমুলের জায়গায় ইমরুলের খেলা প্রায় নিশ্চিত।
ব্যাটিং অডাের্র নিচের দিকেও পরিবতর্ন আসতে পারে। সৌম্যকে খেলানো হতে পারে মোসাদ্দেক হোসেনের জায়গায়। তবে জয়ের নেশায় কঠিন পরিস্থিতিতে অত পরিবতের্নর মধ্যে টিম ম্যানেজমেন্ট যাবে কিনা, সেটা একটা প্রশ্ন। দলপতি মাশরাফি কন্ডিশনের কথা মাথায় রেখে খুব বেশি পরিবতের্নর পক্ষে নন। তার ভাবনা একটাই, আফগান ম্যাচ দিয়ে ছন্দে ফেরা, ফাইনালের স্বপ্নটাকে বঁাচিয়ে রাখা, ‘আমাদের এখনো টুনাের্মন্টে ফেরার সুযোগ আছে। একটা ভালো দিনেই সব বদলে যেতে পারে। আফগানিস্তান ম্যাচে যদি আমরা জিততে পারি, তাহলে ৫০-৫০ চান্স চলে আসবে। এরপর পাকিস্তানের সঙ্গে জিতলে ভালো সুযোগ থাকবে (ফাইনালের)।’
বাংলাদেশের মতো এই ম্যাচটি আফগানিস্তানের জন্যও বঁাচা-মরার। শ্রীলংকা আর বাংলাদেশকে উড়িয়ে আসর শুরু করা দলটি সুপার ফোরের ম্যাচে শুক্রবার কঠিন লড়াই গড়ে হেরেছে পাকিস্তানের কাছে। তারাও আজ মরিয়া হয়েই খেলবে।