শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চসিক নির্বাচনের ১ মাস আগেই বন্ধ ইসির বাকি সব কাজ!

যাযাদি ডেস্ক
  ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনের বাকি আরও ৩২ দিন। অথচ চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসে মঙ্গলবার সকাল থেকে চসিক নির্বাচন ছাড়া নির্বাচন কমিশনের বাকি সব কাজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। দূর-দূরান্ত থেকে সেবাপ্রার্থীরা নানা সমস্যা নিয়ে আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসে আসলেও তাদের ফিরে যেতে হচ্ছে হতাশ হয়ে। এ নিয়ে গণমাধ্যমের কাছে নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগীরা।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নগরের লাভ লেইনে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসে গিয়ে দেখা যায়, চট্টগ্রাম নগর ও জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে নানা সমস্যা নিয়ে জেলা নির্বাচন অফিসে এসেছেন প্রায় একশ মানুষ। এদের কারও জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে গেছে, কেউ নাম সংশোধন করবেন। আবার কেউ পাসপোর্ট তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় কাগজ সংগ্রহের জন্য এসেছেন। কিন্তু চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসের প্রধান ফটক দিয়ে তাদের প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।

গেটের বাইরে দাঁড়ানো দুই পুলিশ সদস্য আগত সেবাপ্রার্থীদের বলেন, মঙ্গলবার থেকে নির্বাচন অফিসের সব কাজ বন্ধ। আপনারা আগামী ৯ এপ্রিলের পরে আসবেন। এ সময় বিভিন্ন জরুরি কাজে নির্বাচন অফিসে আসা লোকজনের সঙ্গে পুলিশ সদস্যদের তর্কে জড়াতেও দেখা যায়।

ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা একেকজন একেক সমস্যা নিয়ে নির্বাচন অফিসে এসেছিলেন। কিন্তু এখন জানানো হচ্ছে, সিটি নির্বাচনের কারণে আগামী প্রায় দেড়মাস চট্টগ্রামে নির্বাচন কমিশনের সব কাজ বন্ধ থাকবে। এতে করে অনেকের বিদেশ যাওয়া আটকে যেতে পারে, অনেকে আবার পাসপোর্টের আবেদন করতে পারছেন না বলেও জানান।

দুর্ভোগের শিকার এসব সেবাপ্রার্থীরা বলছেন, নির্বাচনের সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন বা স্মার্টকার্ড পাওয়ার কী সম্পর্ক? নির্বাচনের প্রায় একমাস আগে থেকে কেন এসব কাজ বন্ধ থাকবে? অন্ততপক্ষে জরুরি প্রয়োজন মেটানোর জন্য একটি বা দুটি স্পেশাল ডেক্সের ব্যবস্থা চাইলেই নির্বাচন কমিশন করতে পারে।

শিশু সন্তান নিয়ে রাজধানী ঢাকা থেকে আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসে এসেছিলেন চট্টগ্রামের মেয়ে সামিরা। তিনি বলেন, 'আমি চট্টগ্রামের ভোটার হলেও এখন ঢাকায় শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে থাকি। একটি জরুরি প্রয়োজনে আমার জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম সংশোধনের প্রয়োজন হচ্ছে। তাই নির্বাচন অফিসে এসেছিলাম। কিন্তু এখন তারা বলছেন, এপ্রিলে আসতে। এত দূর থেকে ছোট বাচ্চা নিয়ে চট্টগ্রাম আসলাম, উনারা চাইলেই বিষয়টা বিবেচনায় নিতে পারতেন। কিন্তু এখন আমাকে ফিরে যেতে হচ্ছে।'

ফটিকছড়ি উপজেলা থেকে সংশোধিত স্মার্টকার্ড নিতে এসেছিলেন কামাল হোসেন। তিনি বলেন, 'গত ৬ নভেম্বর আমাকে স্মার্টকার্ড দেয়ার কথা ছিল, অথচ আজও পাইনি। এখন বলা হচ্ছে, আগামী এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে আসতে। আমাকে প্রতিবার ফটিকছড়ি থেকে আসতে গেলে পাঁচশ টাকা প্রয়োজন হয়। গত চার মাসে অন্তত ১০ বার নির্বাচন অফিসে এসেও বারবার ফিরে গেছি। এভাবে হয়রানির কোনো মানে হয় না।'

চলতি মাসেই স্পন্সর ভিসায় মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা রয়েছে নগরের হামজারবাগের বাসিন্দা তরুণ ব্যবসায়ী ইলিয়াস হোসেনের। কিন্তু গত জানুয়ারিতে তিনি স্মার্টকার্ডের নাম সংশোধন করার জন্য দিলেও তা এখনো পাননি। জানুয়ারি মাসে তাকে জানানো হয়েছিল, চট্টগ্রাম-৮ আসনে উপ-নির্বাচনের কারণে তার কাজটি করা যাচ্ছে না। দুমাস পর আজ আবারও নির্বাচন অফিসে এসে জানতে পারলেন, চসিক নির্বাচনের কারণে তা কাজটি আগামী এপ্রিলের আগে হচ্ছে না।

এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ইলিয়াস হোসেন। তিনি বলেন, 'শুধু ভোটগ্রহণ করাই কি নির্বাচন কমিশনের কাজ? বর্তমান বাস্তবতায় সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ মানুষ ভোট দেয় বা নির্বাচন নিয়ে আগ্রহী। এর বাইরে ৭৫ শতাংশ মানুষের কাজ কারা করবে?'

তিনি হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, 'স্পন্সর ভিসায় এ মাসে মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তা হয়তো আর হচ্ছে না। আমার মাথায় আসছে না, নির্বাচনের সঙ্গে ন্যাশনাল আইডি কার্ড সংশোধনের সম্পর্ক কী?'

সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, 'নির্বাচনের সময় সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটার তালিকা ও জাতীয় পরিচয়পত্রের সকল প্রকার সংযোজন, বিয়োজন, মাইগ্রেশন ও কারেকশন আইন বিরুদ্ধ। তাই আগামী ৯ এপ্রিলের আগ পর্যন্ত চট্টগ্রাম নগর এলাকার নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র ও স্মার্টকার্ডের সকল প্রকার কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<90051 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1