শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

শিশুদের বইয়ের বোঝা কমছে না

যাযাদি রিপোর্ট
  ০৭ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০
আপডেট  : ০৭ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০৮
বইয়ের ব্যাগ কাঁধে শিশুরা -ফাইল ছবি

সহসা কমছে না শিশুদের স্কুলব্যাগের ওজন। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কারিকুলাম পরিবর্তন করে বইয়ের সংখ্যা কমানোর উদ্যোগের কথা বললেও বিশ্লেষকরা বলছেন, কনটেন্টের পরিসর নিয়ে না ভেবে কেবল বইয়ের সংখ্যা কমিয়ে ভার কমানো সম্ভব না। আর শিশুদের ভিন্নরকমভাবে পাঠদান আন্দোলনে যারা যুক্ত তারা বলছেন, শিশুর বোঝা কেবল শারীরিক নয়, মানসিকও। সেই বোঝা কমাবেন কী করে? তারা এও বলছেন, শিশু যেন তার নিজের ব্যাগ নিজে বহন করতে পারে সে অনুযায়ী ওজন নির্ধারণ করতে হবে। শিশুকে আত্মনির্ভরশীল করে তোলার জন্যও সেটা জরুরি। ২০১৬ সালের ৮ ডিসেম্বর বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাসের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ প্রাথমিক স্কুলের শিশুদের শরীরের ওজনের ১০ শতাংশের বেশি ভারী স্কুলব্যাগ বহন নিষেধ করে সুনির্দিষ্ট একটি আইন প্রণয়নের নির্দেশ দেন। রায় পাওয়ার ছয় মাসের মধ্যে এই আইন করতে আইন সচিব, শিক্ষাসচিব, গণশিক্ষা সচিবসহ বিবাদীদের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। পরে দুই বছরেও আইন না হওয়া এবং নির্দেশনা না মানায় সংশ্লিষ্টরা একটি আদালত অবমাননা আবেদনও করেছিলেন। সেটি এখনো শুনানির অপেক্ষায় আছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার মাসুদ হোসেন দোলন বলেন, ৬ মাসের মধ্যে আইন করার কথা বলা হলেও বছরের পর বছর সেটি না হতে দেখে আমরা আদালত অবমাননার আবেদন করেছিলাম। এখনো সেটি শুনানির অপেক্ষায় আছে। এই বিষয়টি সমাধান না করতে পারার গস্নানি থেকে তিনি বলেন, আমার সন্তান আমাকে একই প্রশ্ন করে, 'বোঝা কমানোয় আমি কিছু করতে পারলাম না কেন?' বইয়ের বোঝা যেন শিশুর ওজনের ১০ শতাংশের বেশি না হয় সেটিকে ধরে আইন করতে হাইকোর্টের দেওয়া নির্দেশ বিষয়ে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, আমি নিজেও বিষয়টি নিয়ে সংবেদনশীল। কেন আমাদের শিশুরা বোঝা বহন করবে। কিন্তু একইসঙ্গে উচ্চ আদালত বলেছিল সার্কুলার জারি করে বিষয়টি বাস্তবায়ন করার বিষয়ে, এবং সেটি করা হয়েছে, কাজও হচ্ছে। এরপরও এখন আইনটি দরকার আছে কিনা সেটির বিভিন্ন দিক দিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। বর্তমানে এনসিটিবির পাঠক্রম অনুযায়ী প্রথম থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে তিনটি করে পাঠ্যবই এবং তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ছয়টি করে পাঠ্যবই পড়তে হয়। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ১৩টি পাঠ্যবই পড়তে হয়। নবম-দশম শ্রেণিতে ২৭টি এবং একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে ৩৯টি পাঠ্যবই আছে। তবে, বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ আলাদা আলাদা থাকায় নবম-দশম ও একাদশ শ্রেণিতে সব শিক্ষার্থীকে সব বিষয়ের বই পড়তে হয় না। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, আগামী বছর শিশুরা পরিমার্জিত বই পাবে। আমরা প্রাথমিকের শিশুদের বইও কমিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছি। কয়েকটি বিষয় আছে যেগুলোর পৃথক বই না হয়ে একসঙ্গে করা যায়, সেসব নিয়ে কাজ হচ্ছে। সহজ পাঠের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও সচিব সিদ্দিক বেলাল মনে করেন, শারীরিক বোঝার চেয়ে শিশুর মনের বোঝা আরও বেশি। বইয়ের সংখ্যা কমিয়ে, কনটেন্ট ঠিক না করে আসল চাপ কমবে না উলেস্নখ করে তিনি বলেন, আমরা প্রাথমিকে যদি ৫০টা বইয়ের লিস্ট দেই, সেসব বই শিশুর জন্য সম্পদ, চাপ নয়। তার নিজের বইয়ের কালেকশন হবে। সেগুলো বাইরের বই। ছোট থেকেই শিশুরা মনের আনন্দে বই পড়তে শেখে, যারা পড়তে পারে না তাদের অভিভাবকরা পড়ে শোনান, বইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন হবে। তিনি আরও বলেন, আমাদের স্কুলে ক্লাসের বই যা থাকবে তার সব শিশুকে বহন করতে হয় না, ভালো ফলাফলের চাপে তাকে ক্লাসের বাইরে কোচিং-টিউশনি নিতে হয় না, এরকম শিক্ষা ব্যবস্থাই শিশুর ওপর চাপ কমাবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে