শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বীর সেনানিদের মুখে যুদ্ধজয়ের গৌরবগাথা, মুগ্ধ তরুণরা

নতুনধারা
  ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০
আপডেট  : ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ১০:৫৩
চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক মিলনায়তনে শুক্রবার আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনসহ অন্য অতিথিরা -যাযাদি

যাযাদি ডেস্ক মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানিদের মুখে যুদ্ধজয়ের গৌরবগাথা শুনে মুগ্ধ হয়েছেন তরুণরা। পাকিস্তানি সেনা, রাজাকার ও আল বদরদের হত্যার ঘটনা শুনে হাত তালি যেমন দিয়েছেন তারা, তেমনি আবার চোখ ছলছল করছিল হানাদারদের অত্যাচারের রোমহর্ষক বর্ণনা শুনে। কখনো আবার সহযোদ্ধা হারানোর ব্যথা, বাড়িঘরে পাকিস্তানি বাহিনীর গান পাউডার ছিটিয়ে আগুন দেওয়া, স্বজনদের নির্মম আত্মদানের বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বয়ং মুক্তিযোদ্ধারা। শুক্রবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক মিলনায়তনে 'বিজয়ের শেষ ৩ দিন, কেমন ছিল চট্টগ্রাম' শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় এসব দৃশ্য দেখা যায়। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) চট্টগ্রাম অফিস আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে নগরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ছিলেন মনোযোগী শ্রোতা। অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ হারিছ বলেন, এ মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। চট্টগ্রামে ৩ ডিসেম্বর থেকে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত যুদ্ধ হয়। বিহারিরা যে বাঙালিকে কলোনিতে ধরে নিয়ে গেছে সে ফিরে আসেনি। ট্রেন দাঁড় করিয়ে বাঙালিদের বেছে বেছে হত্যা করেছিল তারা। চট্টগ্রামের এসব ঘটনার প্রতিশোধ নেওয়ার স্পৃহা থাকলেও সুযোগ পাইনি। তিনি তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশে বলেন, তোমরা জঙ্গি থেকে সাবধান থেকো। সঠিকভাবে লেখাপড়া করো। মুক্তিযোদ্ধা-গবেষক ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, চট্টগ্রামে ফৌজদারহাট, পতেঙ্গা, আমিন জুট মিল এলাকায় একসঙ্গে একই সময়ে অপারেশন হয়েছিল। ৩ ডিসেম্বর বন্দরের অয়েল ডিপোতে বিমান আক্রমণ হয়। আমি ভেবেছিলাম পাক বাহিনীর বিমান! তখন যোগাযোগ ব্যবস্থা বলতে গেলে ছিলই না। আফসোস করতাম, হাতে যদি একটি রাইফেল থাকত গুলি করে বিমান ফেলে দিতাম। আবু সাঈদ সর্দার বলেন, জাতীয়ভাবে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস হলেও, চট্টগ্রাম মুক্ত হয় ১৭ ডিসেম্বর। ১৪-১৭ ডিসেম্বর আমি ছিলাম আগ্রাবাদ এলাকায় মৌলভী সৈয়দের বেইস ক্যাম্পে। তখন ওয়ারল্যাস ছিল না বলে খুব দূরের খবর পেতাম না। ১৭ বার আমার বাড়িতে সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী পাক সেনা নিয়ে হামলা চালিয়েছিল। জলস্নাদ জাফরুলস্না ও খোকা বারবার এ বাড়িতে এসেছিল। জলস্নাদ খোকা আমার মায়ের নাকে রিভলবার ঢুকিয়ে বলেছিল, তোর পোয়া হডে (তোমার ছেলে কোথায়)? বলতে বলতে আবেগাপস্নুত হয়ে পড়েন তিনি। নগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোজাফফর আহমদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের কথা বললে আমার মায়ের কথা বলতে হয়। তার চার সন্তানকে যুদ্ধে পাঠিয়েছিলেন। অথচ আমার মা লেখাপড়া জানতেন না। আফসোস মীর কাশিম আলীকে অল্পের জন্য ধরতে পারিনি। মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক মনজুরুল আলম মঞ্জু বলেন, আমি পদকের জন্য যুদ্ধ করিনি। দেশ স্বাধীনের জন্য যুদ্ধে যাই। পতাকার জন্য যুদ্ধ করি। অনেকের নামে স্কয়ার, সড়ক হচ্ছে। মিত্র ও মুক্তিবাহিনীর নামে স্কয়ার করার জন্য মেয়রের প্রতি অনুরোধ জানাই। কারণ মিত্রবাহিনীর সহায়তা, অবদান ভোলার নয়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন বাসসের চট্টগ্রাম প্রধান কলিম সরওয়ার।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে