বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১
শহিদ মিনারে নাগরিক শ্রদ্ধা

অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষ ছিলেন অধ্যাপক অজয় রায়

শ্রদ্ধা নিবেদন করতে এসে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম বলেন, অধ্যাপক অজয় রায় মানুষের অধিকারে বিশ্বাস করতেন। সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর সংঘটিত সব হত্যাকান্ডে তিনি প্রতিবাদ করতেন।
যাযাদি রিপোর্ট
  ১১ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মঙ্গলবার অধ্যাপক অজয় রায়ের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হলে জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানসহ সর্বস্তরের মানুষ তার কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান -ফোকাসবাংলা

মানুষ এসেছিলেন দলে দলে। এর ভেতরে অনেকেই ছিলেন, যাদের সঙ্গে অধ্যাপক অজয় রায়ের ছিল নিবিড় সম্পর্ক। সমাজের এসব বিশিষ্টজন বলেন, অজয় রায় ছিলেন আপাদমস্তক একজন অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষ। তিনি কর্মে সব সময় প্রগতিশীলতার কথা বলেছেন। স্বপ্ন দেখেছিলেন একটি অসাম্প্রদায়িক, উদার গণতান্ত্রিক দেশের। একই সঙ্গে ছেলে অভিজিৎ রায়ের হত্যাকারীদের বিচার না হওয়ার বেদনাও ছিল তার মধ্যে- সে কথাও জানিয়েছেন তারা। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অধ্যাপক অজয় রায়ের নাগরিক শ্রদ্ধানুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তারা এসব কথা বলেন। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ব্যবস্থাপনায় এ শ্রদ্ধা নিবেদনের আয়োজনে যোগ দেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। শ্রদ্ধা নিবেদন করতে এসে অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, অজয় রায়ের লেখায় বিজ্ঞানসম্মত দৃষ্টিভঙ্গি বাংলাদেশে গড়ে ওঠার কথা বলতেন। তিনি বাঙালির ইতিহাসে গভীরভাবে আগ্রহী ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সার্বভৌমত্বের পক্ষে সোচ্চার কণ্ঠস্বর ছিলেন। তিনি তার সময়ে ঢাবির শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের একজন ছিলেন। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম বলেন, তিনি আপাদমস্তক একজন অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষ ছিলেন। সমাজতন্ত্রে, মানুষের অধিকারে বিশ্বাস করতেন। সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর সংঘটিত সব হত্যাকান্ডে তিনি প্রতিবাদ করতেন। সেটা তার ছেলে অভিজিৎ রায়ের মৃতু্যর আগেও। এ ধরনের মানুষ তৈরি হচ্ছে না। তৈরি হলে আমাদের আক্ষেপ থাকতো না। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, মুক্তচিন্তার জগতে তার বিশাল অবদান রয়েছে। আজকে অজয় রায় আমাদের মধ্যে আর নেই। তার লেখাগুলো আছে, তার বিশাল কর্মযজ্ঞ আছে। যা নতুন প্রজন্মের কাছে বিশাল প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। প্রবীণ রাজনীতিবিদ পংকজ ভট্টাচার্য বলেন, ছেলের মরদেহ কাঁধে নিয়ে বাবার সংগ্রাম বড় কঠিন। তার চলে যাওয়ায় প্রচন্ড শূন্যতা গ্রাস করেছে আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজে। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, মানুষ হিসেবে তিনি অসাম্প্রদায়িক চেতনা ধারণ করে মানবতার পক্ষে নিজের শক্ত অবস্থান রেখেছিলেন। তিনি পঞ্চাশ-ষাটের দশকে যে জ্ঞানের সাধনা করেছেন, তখন তা নিয়ে অনেকেই মাথা ঘামাননি। তিনি আমাদের একজন জাতির বিবেক হিসেবে পথ দেখিয়েছেন। আমরা একজন জাতির বিবেককে হারালাম। ঢাবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, দেশের শিক্ষানীতি প্রণয়নে ও পাঠ্যক্রমের সংশোধনে তার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। তিনি ছিলেন জাতির শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের অন্যতম। ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহফুজা খানম বলেন, 'আমি অজয় স্যারের প্রত্যক্ষ ছাত্রী। দীর্ঘ ৫০ বছর তার সঙ্গে আমার পরিচয়, উঠাবসা। ষাটের দশকে আমরা যখন আইয়ূব-মোনায়েম খানদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতাম, তখন যে কয়জন মানুষ আমাদেরকে প্রেরণা জুগাতেন অজয় স্যার তাদের মধ্যে অন্যতম। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবাহী সব সংগঠনের সঙ্গে তিনি সব সময় ছিলেন। তিনি সব আন্দোলনে নির্ভয়ে ছুটে যেতেন।' বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুলস্নাহ সিরাজী বলেন, বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির উন্নয়নের পাশাপাশি আধুনিক বিজ্ঞানচর্চায় তিনি নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেছেন। অধ্যাপক অজয় রায় একজনই তার কোনো বিকল্প নেই। অধ্যাপক অজয় রায় সোমবার (৯ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিটে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। ওইদিন রাতে অজয় রায়ের মরদেহ বারডেম হাসপাতালের হিমাগারে রাখা হয়। সেখান থেকে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় অজয় রায়ের মরদেহ নিয়ে আসা হয় তার বেইলি রোডস্থ বাসভবনে। সেখান থেকে সকাল সাড়ে ১১টায় অজয় রায়ের মরদেহ নিয়ে আসা হয় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে। শুরুতেই সেখানে ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। শহিদ মিনার থেকে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য অজয় রায়ের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় ঢাবির কার্জন হলের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে। সেখানে বিভাগের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় ঢাবির জগন্নাথ হলে। সেখান থেকেই বারডেম হাসপাতালে তার মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে