যাযাদি রিপোর্ট
রাগ বা গোসসা কমাতে রাজধানীর গুলিস্তান সংলগ্ন ওসমানী উদ্যানে তৈরি হচ্ছে একটি অত্যাধুনিক পার্ক। সেখানে একঘেয়েমি আর অবসাদ কাটানোর নানা ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। এই পার্কের নাম দেয়া হয়েছে, 'গোসসা নিবারণী পার্ক' বা রাগ কমানোর পার্ক।
সরেজমিন পার্কে গিয়ে দেখা গেছে, পার্কটি নির্মাণের জন্য পুরো ওসমানী উদ্যানের চারদিকে রঙিন টিন দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। ভেতরে চলছে নির্মাণ কাজ। এ ধরনের পার্ক বাংলাদেশে প্রথম। আন্তর্জাতিক মহলে এরই মধ্যে পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
পার্কটিতে জলাধার, আলাদা আলাদা বসার জোন, বাচ্চাদের জন্য বিশেষ জোন থাকার পাশাপাশি চা, কফি, স্যান্ডউইচ খাওয়া, ওয়াই-ফাই জোন, ফুড কর্নার, বড় স্কিনে টিভি দেখার ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়াও পার্কে নগর মিউজিয়াম ও লাইব্রেরি থাকবে। পার্কের ভেতর একটি লেক তৈরি করা হবে, যেখানে সারা বছর পানি থাকবে। খেলা দেখা বা গানও শোনা যাবে সেখানে। পানি, প্রকৃতি আর আধুনিকতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এটি নির্মাণ করা হচ্ছে।
কোনো কারণে রাগে ছটফট করছেন? মেজাজটা খিটখিটে? এমন সমস্যায় জর্জরিত নাগরিকদের মন ভালো করে দিতে বা রাগ/গোসাসা নিবারণ করতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্মাণ করছে 'গোসসা নিবারণী পার্ক'। প্রায় ৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ওসমানী উদ্যানের ২৯ একর জায়গায় পার্কটি নির্মাণ কাজ চলছে। তবে কাজের ধীর গতির কারণে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন নগরবাসী।
২০১৮ সালের ২৭ জানুয়ারি পার্কটির নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। সে সময় বলা হয়েছিল ৯ থেকে ১০ মাসের মধ্যে এই পার্কের নির্মাণ কাজ শেষ হবে। ঘোষণা অনুযায়ী নয় মাসের কাজ ২১ মাস পেরিয়ে গেলেও উলেস্নখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি।
পার্কটির সীমানার বাইরে অস্থায়ী চায়ের দোকানদার জয়নাল হক বলেন, প্রায় ২০/২২ মাস ধরে পার্কটির কাজ চলছে। ভেতরে কাউকে ঢুকতে দেয়া হয় না। আমরা মাঝে মাঝে ঢুকেছি, ভেতরে পিলার নির্মাণসহ অবকাঠামোগত অনেক কাজ চলছে। তবে কাজের যে গতি তাতে মনে হয় শেষ হতে আরও এক বছর লাগতে পারে।
রাজধানীর আগাসাদেক লেনের বাসিন্দা সোবহান আহমেদ বলেন, 'এই পার্কে আগে নিয়মিত হাঁটতে আসতাম। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে পার্কটি বন্ধ। শুনেছি এটি হবে গোসসা নিবারণী পার্ক। তাই খুব আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি পার্কটি চালু হবে কবে?'
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিজেদের মধ্যে অনেক সময় মান, অভিমান, গোসসা হয়ে থাকে। এ অবস্থায় এই পার্কে যখন মানুষ আসবে, স্বাভাবিকভাবে তাদের ভালো লাগবে, উৎফুলস্ন লাগবে। এখানকার যেসব আয়োজন, সেগুলো স্বাভাবিকভাবেই মানুষের গোসসা বা রাগ কমিয়ে দেবে। এই চিন্তা থেকেই এটাকে 'গোসসা নিবারণী পার্ক' নাম দেয়া হয়েছে।
পার্কের প্রকল্প পরিচালক আরিফ আহমেদ বলেন, 'আমরা চাই একটি সুন্দর পার্ক করতে। সে ক্ষেত্রে মানুষের চাহিদার প্রেক্ষিতে কিছু ডিজাইন পরিবর্তন করতে হয়েছে। এছাড় বর্ষা মৌসুমে কাজ কিছুটা পিছিয়ে গিয়েছিল। আশা করছি, খুব দ্রম্নতই এই পার্কের কাজ শেষ করে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিতে পারব।'
পার্কটির বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ সিরাজুল ইসলাম জানান, 'পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ সম্পন্ন হলে পার্কটি পুরোপুরি বদলে যাবে।
এখানকার যেসব আয়োজন, সেগুলো স্বাভাবিকভাবেই মানুষের গোসসা বা রাগ কমিয়ে দেবে বলে আশা করছি। আমাদের প্রকৌশলী বিভাগ পরিকল্পনা অনুযায়ী পার্কটির কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।'