শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

৩১৬ শতাংশ পর্যন্ত দাম বেড়েছে পোল্ট্রি ফিড কাঁচা মালের!

যাযাদি রিপোর্ট
  ০৯ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০

লাগামহীনভাবে বেড়েছে পোল্ট্রি ফিড (হাঁস-মুরগির খাবার) তৈরিতে ব্যবহৃত কাঁচামালের দাম। গত ১২ বছরে (২০০৭-২০১৮) কাঁচামালভেদে সর্বনিম্ন ২৭-৩১৬ শতাংশেরও বেশি দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে খামারিদের কাছে সম্ভাবনাময় পোল্ট্রি শিল্প ক্রমেই ঝুঁকিপূর্ণ শিল্প হয়ে উঠছে।

উৎপাদন ব্যয় অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পেলেও সে হিসেবে ডিম ও মুরগির কাঙ্ক্ষিক্ষত দাম পাচ্ছেন না খামারিরা। এমন অবস্থা চলতে থাকলে দেশীয় পোল্ট্রি শিল্প ধ্বংসের ঝুঁকিতে পড়বে। সেই সঙ্গে বিদেশিদের হাতে চলে যাবে পোল্ট্রি শিল্পের বাজার।

পোল্ট্রি ফিড তৈরির জন্য মোট ৯ ধরনের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল- প্রোটিন কনসেনট্রেট, ভুট্টা, লাইম স্টোন, হুইট পলিশ, সয়াবিন মিল, রাইস ব্রান, ফিস মিল, ব্রয়লার ফিড ও লেয়ার ফিড অন্যতম।

ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (ফিআব) কাছ থেকে প্রাপ্ত পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০০৭ সালে এই ৯ ধরনের কাঁচামালের প্রতি কেজির দাম ছিল যথাক্রমে ৩৯ টাকা ২৭ পয়সা, ১৪ টাকা ৭৭ পয়সা, ৫ টাকা ৫০ পয়সা, ১৪ টাকা ৯১ পয়সা, ২০ টাকা ৬৮ পয়সা, ১০ টাকা ৯ পয়সা, ৩৬ টাকা, ২১ টাকা ৮ পয়সা এবং ১৮ টাকা ৭৮ পয়সা।

১২ বছরের ব্যবধানে একই পণ্যের প্রতি কেজির দাম বৃদ্ধি পেয়ে যথাক্রমে ৫০ টাকা, ২২ টাকা ৪৩ পয়সা, ১০ টাকা, ২৮ টাকা ২৯ পয়সা, ৪১ টাকা ৯৩ পয়সা, ২১ টাকা ৭১ পয়সা, ১৫০ টাকা, ৪৩ টাকা ৫৭ পয়সা এবং ৩৭ টাকা ৭৮ পয়সা দাঁড়িয়েছে।

শতকরা হিসাবে এই ৯টি কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে যথাক্রমে ২৭ দশমিক ৩২, ৫১ দশমিক ৮৬, ৮১ দশমিক ৮২, ৮৯ দশমিক ৭৪, ১০২ দশমিক ৭৬, ১১৫ দশমিক ১৬, ৩১৬ দশমিক ৬৭, ১০৬ দশমিক ৬৯ এবং ৯৭ দশমিক ৯৮ শতাংশ।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, চলতি বছরপ্রতি কেজি ভুট্টা ১৬ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ২০ টাকা ৭০ পয়সা, সয়াবিন মিল ৩১ টাকা ৮৬ পয়সা থেকে ৩৮ টাকা, ডিওআরবি ১১ টাকা ৬৩ পয়সা থেকে ২০ টাকা ৫০ পয়সা, রাইস পলিশ ১৩ টাকা ৯৪ পয়সা থেকে ২০ টাকা ৪৮ পয়সা, কর্ন গ্রটেন মিল ৬১ টাকা ৭৫ পয়সা থেকে ৬৫ টাকা, মাস্টার্ড অয়েল কেক ২১ টাকা ৮৮ পয়সা ২৪ টাকা, হুইট ফ্লাওয়ার (৩২% গ্রটেন) ২৩ টাকা থেকে ২৭ টাকা।

এ ছাড়া লাইমস্টোন (পাউডার) ৮ টাকা ২৫ পয়সা থেকে ৯ টাকা, লবণ ১৪ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১৭ টাকা, পাম অয়েল ৫৩ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ৬৩ টাকা পয়সা, সয়াবিন অয়েল ৭৪ টাকা থেকে বেড়ে ৭৮ টাকা ৭৫ পয়সা হয়।

ফিআব-এর সভাপতি এহতেশাম বি শাহজাহান বলেন, গত ১২ বছরে পোল্ট্রি সামগ্রীর দাম সামান্য বেড়েছে। তিনি পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, ২০০৭ সালে ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল প্রতি কেজি ১০০ টাকা। অথচ বিগত ৪-৫ মাসে খামার পর্যায়ে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে কেজি প্রতি ৮৫-১০০ টাকায়। উৎপাদন খরচ ছিল অন্তত ১১০-১১৫ টাকা। এ সময়কালে একদিন বয়সী বাচ্চার দাম বেশ কম ছিল বলেই খরচ কম হয়েছে। কিন্তু বাচ্চার স্বাভাবিক দর থাকলে উৎপাদন খরচ ১৫ টাকা থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেশি হতো।

তিনি জানান, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর থেকে চলতি বছরের বেশ কয়েক মাস পর্যন্ত ডিমের দামও তলানিতে গিয়ে ঠেকেছিল। তখন বাধ্য হয়ে ডিমপাড়া মুরগিও বিক্রি করে দিতে হয়েছিল খামারিদের। মূল কথা হচ্ছে, উৎপাদন খরচ অনেক বেড়েছে এবং বাড়ছে, কিন্তু খামারিরা ডিম ও মুরগির দাম পাচ্ছেন না। এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশের পোল্ট্রি শিল্প পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে। আর দেশীয় পোল্ট্রি শিল্পের বাজার চলে যাবে বিদেশিদের হাতে। তখন আফসোস ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না।

ফিআব মহাসচিব এমডি আহসানুজ্জামান বলেন, পণ্য হ্যান্ডেলিংয়ে বন্দরের অদক্ষতা ও দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশের তুলনায় প্রতি টন ভুট্টা আমদানি করতে ২০-২৫ ডলার, অর্থাৎ ৫২ হাজার টনের একটি কনসাইমেন্টের ক্ষেত্রে ১০-১৩ লাখ ডলার বা প্রায় ১০ কোটি ৪০ লাখ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত খরচ গুনতে হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<74814 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1