বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

আদিবাসী মানুষ দেশান্তরী হতে চান না: সন্তু লারমা শহীদ মিনারে অনুষ্ঠান

যাযাদি রপিােটর্
  ১০ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০
আন্তজাির্তক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সন্তু লারমা Ñযাযাদি

যাযাদি রিপোটর্

নিজ ভ‚মি রক্ষায় ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় ওরফে সন্তু লারমা। তিনি বলেন, ‘আদিবাসী মানুষ দেশান্তরী হতে চায় না। এই বাংলাদেশ তাদের মাতৃভ‚মি। এ দেশের আর সব মানুষের মতো মযার্দা নিয়ে, সম্মান নিয়ে তারা বেঁচে থাকতে চায়।’

আন্তজাির্তক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সন্তু লারমা এ কথা বলেন। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের অধিকার নিয়ে বিশ্বব্যাপী পালিত আন্তজাির্তক আদিবাসী দিবস। বাংলাদেশেও এসব জাতিসত্তার মানুষের সংগঠনগুলো পালন করে দিবসটি।

দেশে ৫০টির বেশি জাতিসত্তার মানুষের বাস। বিভিন্ন প্রান্তে আজ দিবসটি পালিত হচ্ছে। বরাবরের মতো এবারও ঢাকায় কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেছে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম।

শহীদ মিনারে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সেখানে জড়ো হতে থাকেন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষ। এদের মধ্যে জেমসন বম এসেছেন বান্দরবানের রোয়াংছড়ি থেকে, নিখিল টুডু বরেন্দ্রভ‚মি রাজশাহীর পবা থেকে, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের মণিপুরীপাড়া থেকে নিরেন সিনহা, পটুয়াখালীর রাখাইনপল্লিতে থেকে উ মে ম্রং। তারা একা নন, দলে দলে এসেছেন আদিবাসী দিবস উদযাপনে।

বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত এসব জাতিসত্তার মানুষ প্রান্তিক অবস্থায় আছেন। বাংলাদেশের নানা সরকারি দলিলেও তাদের প্রান্তিক অবস্থার কথা উল্লেখ রয়েছে। আথির্ক, রাজনৈতিক, সামাজিক সুযোগ এখনো এসব মানুষ পাননি। এসব জাতির মানুষ বলছেন, এই অবস্থার ফলে তাদের ওপর নিগ্রহ বাড়ছে। এতে তাদের ভ‚মি ও আবাসস্থল দখল হচ্ছে। তারা দেশান্তরী হচ্ছেন। এবারের আদিবাসী দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয়Ñ ‘আদিবাসী জাতিসমূহের দেশান্তর : প্রতিরোধের সংগ্রাম।’

সন্তু লারমা বলেন, ‘পাবর্ত্য চট্টগ্রামসহ অনেক জায়গায় জাতিগত ও ধমীর্য় সংখ্যালঘুদের ভ‚মি ও সম্পদ দখল হচ্ছে। তাদের অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে। শাসকগোষ্ঠীর দশর্ন ও চিন্তাধারা গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক নয়। আর এ জন্যই বিভিন্ন জাতিসত্তার মানুষের ওপর নিগ্রহ বাড়ছে।’

এই নিগ্রহ থেকে বঁাচার পথের দিশাও দেন সন্তু লারমা। বলেন, ‘আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য দরকার নিরন্তর সংগ্রাম ও আন্দোলন।’ আর এ আন্দোলনে শুধু ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষ নয়, বৃহত্তর বাঙালি জনগোষ্ঠীর অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক শক্তির সহায়তা চান পাবর্ত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান সন্তু লারমা।

সকালে আদিবাসী গানের দল মাদলের সদস্যদের গান দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। ‘এখানে ভোর আসে’ গানের মাধ্যমে এসব শিল্পী তাদের এগিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। আজকের দিবসের অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন মানবাধিকারকমীর্ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা একটি বৈষম্যহীন ও মানবিক রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছিলাম। সেই স্বপ্ন এখনো বাস্তবায়িত হয়নি; বরং আদিবাসীরা দিন দিন প্রান্তিক অবস্থানে চলে যাচ্ছে। তাদের জমিজমা কেড়ে নেয়া হচ্ছে।’

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু স্বীকার করেন, দেশের ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। পাবর্ত্য চট্টগ্রাম চুক্তির কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের সঙ্গে দীঘর্ দ্ব›েদ্বর অবসানের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ওই চুক্তি করেছিল। সেই চুক্তির অনেক কিছুই হয়তো বাস্তবায়িত হয়নি। তবে চুক্তির সঠিক বাস্তবায়নের বিষয়ে সরকার সচেতন ও সতকর্ আছে।’

মন্ত্রী ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের কাছে আবেদন করেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি অসাম্প্রদায়িকতার ছাতা ধরে রেখেছেন। তিনি সংবিধানে ধমির্নরপেক্ষতা ধরে রাখতে উদ্যোগ নিয়েছেন। এর রাজনৈতিক তাৎপযর্ অনুধাবন করতে হবে।’

অনুষ্ঠানে বষীর্য়ান রাজনীতিক পঙ্কজ ভট্টাচাযর্ বলেন, জাতিগত ও ধমীর্য় সংখ্যালঘুদের ভ‚মি ও সম্পদ দখলের যেন এক উৎসব চলছে। এর পেছনে লুটেরা ভ‚মিদস্যুরা।

লেখক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘বাংলাদেশে দুই শ্রেণির মানুষ দেশ ত্যাগ করে। এরা হলো মন্ত্রী-এমপি-বড় আমলাদের ছেলেমেয়েরা আর অন্যরা ক্ষুদ্র জাতিসত্তার। মন্ত্রী-আমলাদের ছেলেমেয়রা উড়োজাহাজে করে দেশ ত্যাগ করে গিয়ে ওঠে নিজেদের দ্বিতীয় হোমে। আর ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষ দেশ ত্যাগ করে হেঁটে। তারা সেখানে গিয়ে থাকে পথে পথে, গাছের তলায়।’

অনুষ্ঠানে দিবসটি উপলক্ষে জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারির বাণী পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রোবায়েত ফেরদৌস। আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রংয়ের পরিচালনায় বক্তব্য দেন নাট্যকার মামুনুর রশীদ, অধ্যাপক মেজবাহ কামাল, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন প্রমুখ।

আলোচনা পবর্ শেষে বাংলাদেশ আদিবাসী কালচারাল ফোরামের পরিবেশন করে নৃত্যানুষ্ঠান ‘বিপ্লব দীঘর্জীবী হোক’। এটি পরিচালনা করেন চন্দ্র ত্রিপুরা ও সাচিং মারমা। এ ছাড়া হাজং, সঁাওতাল, গারো ও মাহাতো জাতিসত্তার সাংস্কৃতিক দলও নাচ-গান পরিবেশন করে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<7313 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1