বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
নগরবাসীর ভোগান্তি

দখল-উচ্ছেদের খেলায় জিতবে কে?

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কার্তিক দাস বলেন, উচ্ছেদ অভিযানের কারণে সড়ক বন্ধ, জ্যামে বসে আছেন অনেকক্ষণ। কিছুদিন আগে একবার উচ্ছেদ করল। আবার এখন। তাহলে সেদিন যে উচ্ছেদ করল সেগুলো আবার দখল হলো কীভাবে?
নতুনধারা
  ০৪ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০
আপডেট  : ০৪ অক্টোবর ২০১৯, ০০:১১
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য বৃহস্পতিবার ফের অভিযান চালান ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন -যাযাদি

যাযাদি রিপোর্ট নিজেদের এলাকা থেকে অবৈধ দখল ও স্থাপনা উচ্ছেদে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)। একবার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে দেওয়ার কিছু সময় পরেই আবার দখল হয়ে যাচ্ছে সেই জায়গা। সেখানে আবার অভিযান পরিচালনাও করছে ডিএনসিসি। দখল-উচ্ছেদের এ 'খেলা'য় ডিএনসিসি এ পর্যন্ত কঠোর ও অনড় অবস্থানে থাকলেও নগরবাসীর মনে প্রশ্ন, শেষ পর্যন্ত কে জিতবে এ খেলায়? গত ৩০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অবৈধ স্থাপনার বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে ডিএনসিসি। এদিন নতুন কিছু অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পাশাপাশি পুনঃউচ্ছেদ করা হয় কিছুদিন আগেই অভিযানের পর ফের দখল হয়ে যাওয়া জায়গায়ও। ২৬ সেপ্টেম্বর খোদ ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলামের উপস্থিতিতে সেসব জায়গা থেকে অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে দিয়েছিল করপোরেশন। দিন দুই গড়াতেই সেগুলোও পুনর্দখল হয়ে গেলে পুনরায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করতে হয় কর্তৃপক্ষকে। একই জায়গায় উচ্ছেদ, তারপর দখল এবং আবার উচ্ছেদে ইতোমধ্যে নিজেদের অসন্তুষ্টির কথা জানাতে শুরু করেছেন নগরবাসী। কঠোর পদক্ষেপের মাধ্যমে স্থায়ী সমাধান না করে বারংবার এমন অভিযানে ভোগান্তির কথাও বলছেন তারা। বলছেন সরকারি অর্থের অযথা খরচের কথাও। ৩০ সেপ্টেম্বরের অভিযানের সময় কারওয়ান বাজারে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কার্তিক দাস বলেন, উচ্ছেদ অভিযানের কারণে সড়ক বন্ধ (হলিক্রস-কারওয়ান বাজার)। জ্যামে বসে আছি। কিছুদিন আগে একবার উচ্ছেদ করলো। আবার আজকে। তাহলে সেদিন যে উচ্ছেদ করলো সেগুলো আবার দখল হলো কীভাবে? আমিনুল ইসলাম নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, একবার উচ্ছেদের পর আবার দখল হচ্ছে আর সেটি উচ্ছেদে আবার অভিযান হচ্ছে। এতে তো সিটি কর্পোরেশনের লোকবল এবং সরঞ্জামাদির পাশাপাশি অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ও হচ্ছে। এই টাকা তো সরকারি কোষাগার থেকে ব্যয় হচ্ছে। আমার মতো অনেকের ট্যাক্সের টাকা। অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে সিটি কর্পোরেশন কঠিন কোনো পদক্ষেপ নেয় না। কাউকে জেল বা জরিমানা তো করতে শুনলাম না। অবৈধ দখলদারদের কাউকে জরিমানা করলে তো এই টাকা উঠে আসত। জেল দিলে হয়তো কেউ আর বসতো না। আসলে এটা তাদের নিজেদের মধ্যে এক ধরনের খেলা। প্রশাসনের লোকেরাই অসদুপায়ে তাদের বসায়। আবার তারাই উঠিয়ে দেয়। দেখার বিষয় হচ্ছে, এই খেলায় জিতবে কে? মাঝে কষ্ট আমাদের মতো সাধারণ নাগরিকদের। কারওয়ান বাজারের উচ্ছেদ হওয়া কাঠপট্টি ও কামারপট্টিতে চালের আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সেখানে চালের আড়ত আছে ৫২টি। এসব দোকানের ভাড়া সর্বনিম্ন ৫ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৮ হাজার টাকা; অগ্রিম জামানত ২ থেকে ৫ লাখ টাকা। সিটি কর্পোরেশনের ইজারাদারদের থেকে ভাড়া নিয়েছেন তারা। এসব দোকানের ট্রেড লাইসেন্স আছে বলেও দাবি তাদের। এখানকার জনতা রাইস এজেন্সির কর্ণধার আবু ওসমান বলেন, 'আমরা প্রতিমাসে এসব দোকানের ভাড়া দেই। সিটি কর্পোরেশনের ইজারাদারদের কাছে আমরা ভাড়া দেই। তাহলে আমরা অবৈধ হলাম কীভাবে?' ভাড়া তোলা ব্যক্তিদের নাম জানতে চাইলে বলেননি এই ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, 'আপনারা তো নাম নিয়ে চলে যাবেন? কিন্তু থাকতে তো হবে আমাদের। নাম নিয়েও তো কিছু করতে পারবেন না তাদের। শুধু ক্ষতি হলো আমাদের।' সিটি কর্পোরেশনের জায়গা দীর্ঘদিন অবৈধ দখলে থাকার ব্যর্থতা কর্পোরেশনের কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএনসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, এর দায় শুধু একা সিটি কর্পোরেশনের নয়। এর জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ব্যবসায়ী নেতা এমনকি মিডিয়াও দায়ী। যতবার দখল হবে ততবার উচ্ছেদ হবে। তবে বারংবার উচ্ছেদে সরকারি অর্থ ব্যয় হচ্ছে। কোনো স্থায়ী সমাধান কেন করা হচ্ছে না- এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএনসিসির ৫ নং অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা (আনিক) মোহাম্মদ মাসুদ হোসেন বলেন, একবার উচ্ছেদের পর সেখানে পাহারা তো বসানো যায় না। তাই আবার বসে। অত লোকবলও নেই তাদের। তাই কেউ কেউ হয়তো বসে পরে। তবে এটার এখন একটা স্থায়ী সমাধান হবে বলে তাদের বিশ্বাস। নগর ভবন থেকে একটি চিঠি পেয়েছেন তারা, যেখানে একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। এই কমিটির কাজ হবে উচ্ছেদ করা জায়গা যেন আবার দখল না হয়, তার তদারকি করা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে