শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামে সিএনজি অটোরিকশায় 'যেমন খুশি' ভাড়া আদায়

নতুনধারা
  ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০
চট্টগ্রামের একটি সড়কে বুধবার সিএনজির মিটার পরীক্ষা করেন এক ট্রাফিক পুলিশ -যাযাদি

যাযাদি ডেস্ক

চট্টগ্রাম শহরে সিএনজি অটোরিকশার ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য চলছেই। সিএনজি অটোরিকশা নীতিমালায় মিটারের মাধ্যমে ভাড়া নিয়ে যাত্রীর চাহিদা অনুযায়ী গন্তব্যে যেতে চালকের বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা মানছেন না তারা। 'যেমন খুশি তেমন' স্টাইলে ভাড়া হাঁকিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে।

গত কয়েকদিন নগরের অক্সিজেন, মুরাদপুর, ২ নম্বর গেট, জিইসি, ওয়াসার মোড়, দেওয়ান হাট, আগ্রাবাদ, নিউমার্কেট, কোতোয়ালী, নতুন ব্রিজ, বহদ্দার হাটসহ বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সিএনজি অটোরিকশার চালকরা মিটারে নয়- চুক্তির মাধ্যমে ভাড়ায় যেতেই আগ্রহী। যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় করতেই এ কৌশল তাদের।

নগরের অক্সিজেন মোড় থেকে কাজীর দেউড়ি মোড়ের দূরত্ব আট কিলোমিটারের একটু বেশি। সরকার নির্ধারিত ভাড়ায় মিটারে এ পথের সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া ১০৫ থেকে ১১৫ টাকা হওয়ার কথা। তবে চালকরা স্বাভাবিক সময়ে এ পথের ভাড়া আদায় করছেন ১৫০ টাকা। বৃষ্টি হলে নেয়া হয় ১৮০ টাকা।

জিইসি থেকে মুরাদপুরের দূরত্ব আড়াই কিলোমিটার। মিটারে এ পথের ভাড়া ৪৬ থেকে ৫০ টাকা হওয়ার কথা থাকলেও চালকরা ৮০ টাকার নিচে যান না কখনও। প্রায় একই দূরত্ব জিইসি থেকে দেওয়ান হাটের। সেখানেও প্রায় মিটারের ভাড়ার চেয়ে ৩০ টাকা বাড়তি ভাড়া আদায় করেন চালকরা। নেন ৭০-৮০ টাকা।

নিউ মার্কেট থেকে কোতোয়ালির মোড় এক কিলোমিটার থেকে একটু বেশি। এ পথের ভাড়া মিটারে ৪০ টাকা হওয়ার কথা থাকলেও ৭০ টাকা আদায় করছেন চালকরা। নিউ মার্কেট থেকে চার কিলোমিটার দূরত্বে থাকা নতুন ব্রিজ পর্যন্ত পথের ভাড়া ৬৪ থেকে ৭০ টাকা হওয়ার কথা থাকলেও সেখানে আদায় করা হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা।

সিএনজি অটোরিকশার ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য। ছবি: সোহেল সরওয়ারনীতিমালায় যা আছে

সিএনজি অটোরিকশা নীতিমালা-২০০৭ অনুযায়ী প্রতিটি সিএনজি অটোরিকশায় ডিজিটাল মিটার স্থাপন এবং গন্তব্যের ভাড়া মিটারে আদায় করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ কারণে সেই সময় প্রথম দুই কিলোমিটারের ভাড়া ১৩.৫০ টাকা এবং পরবর্তী প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া ৫.৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি এবং সিএনজি অটোরিকশা চালক-মালিকদের দাবির মুখে পরে ভাড়ার হার দুই দফা বাড়ায় সরকার। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ১০ সেপ্টেম্বর সিএনজি অটোরিকশার ভাড়া প্রথম দুই কিলোমিটারের জন্য ৪০ টাকা এবং পরবর্তী প্রতি কিলোমিটারের জন্য ১২ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

সিএনজি অটোরিকশার ভাড়া পুনর্নির্ধারণের পর চট্টগ্রামেও সিএনজি অটোরিকশায় মিটার স্থাপন এবং মিটারে ভাড়া আদায়ে তোড়জোড় শুরু হয়। এরই প্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে বিআরটিএ, পুলিশ এবং সিএনজি অটোরিকশা চালক-মালিক ত্রিপক্ষীয় বৈঠক শেষে ১ ফেব্রম্নয়ারি থেকে সিএনজি অটোরিকশায় মিটার স্থাপন এবং গন্তব্যের ভাড়া মিটারে আদায়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

পুলিশ ও বিআরটিএর কড়াকড়িতে সেই সময় মিটারেই চলেছিলেন চালকরা। এতে স্বস্তিও এসেছিল নগরবাসীর মধ্যে। কিন্তু কয়েকদিন যেতে না যেতেই আবার পুরনো চিত্র ফিরে আসে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চালক মিটার অনুযায়ী ভাড়া নিতে আগ্রহী নন। হয় তারা মিটার বন্ধ রাখেন, নয়তো মিটারে ওঠা ভাড়ার চেয়ে বেশি দাবি করেন।

মিটারে 'পোষায় না' চালকদের : চট্টগ্রাম অটোরিকশা অটোটেম্পো শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ বলেন, মিটারে ভাড়ার যে হার নির্ধারণ করা আছে তা ৪ বছর আগের। এর মধ্যে কয়েক দফা গ্যাসের মূল্য বাড়ানো হলেও মিটারে ভাড়ার হার বাড়ানো হয়নি। যে কারণে মিটারে ভাড়া নিলে আমাদের পোষায় না।

তিনি বলেন, মিটার নিয়ে বিআরটিএ ও পুলিশ বাণিজ্য করে। কমিশন খেয়ে নিম্নমানের মিটার লাগাতে আমাদের বাধ্য করে। এসব মিটার বেশিদিন টেকসই না হওয়ায় সিএনজি অটোরিকশায় মিটার সচল দেখতে পাওয়া যায় না। মালিকরাও ৬-৭ হাজার টাকা খরচ করে ঘন ঘন মিটার লাগাতে চান না।

এক প্রশ্নের উত্তরে এ শ্রমিক নেতা জানান, সিএনজি অটোরিকশার ভাড়া প্রথম দুই কিলোমিটারের জন্য ৪০ টাকার পরিবর্তে ৬০ টাকা এবং পরবর্তী প্রতি কিলোমিটারের জন্য ১২ টাকার পরিবর্তে ২০ টাকা এবং ওয়েটিং চার্জ ২ টাকার পরিবর্তে ৩ টাকা নির্ধারণ করা হলে মিটারে চালাতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।

যাত্রীর কাঁধেই দায়িত্ব চাপাতে চায় বিআরটিএ : বিআরটিএর উপ-পরিচালক মো. শহীদুলস্নাহ বলেন, চট্টগ্রাম নগরে ১৩ হাজার নিবন্ধিত সিএনজি অটোরিকশা রয়েছে। কয়েক বছর আগেই এসব সিএনজি অটোরিকশায় মিটার স্থাপনের বিষয়টি নিশ্চিত করে বিআরটিএ। অনেক সিএনজি অটোরিকশার চালক মিটারে গন্তব্যে যান না এটি ঠিক। তবে এর বিরুদ্ধে যাত্রীকেই সবার আগে সচেতন হতে হবে।

তিনি বলেন, সিএনজি অটোরিকশা যাতে মিটারে ভাড়া নেয়- তা নিশ্চিত করতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বিআরটিএ নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। মিটারে কোনো চালক না গেলে বিআরটিএর হটলাইন আছে, সড়কে ট্রাফিক সার্জেন্ট আছে- তাদের কাছে সহায়তা চাইলে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। যাত্রীরা সচেতন হলে এ সমস্যা আর থাকবে না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<66348 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1