চট্টগ্রাম অফিস
তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, 'আঞ্চলিক উন্নয়ন ছাড়া যেমন দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। তেমনি আমদানি-রপ্তানি ছাড়াও দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। আমরা ধীরে ধীরে দেশের উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।' বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে নবগঠিত উপদেষ্টা কমিটির প্রথম সভায় তিনি মাহমুদ এসব কথা বলেন।
তথ্য মন্ত্রী বলেন, বন্দরের উন্নয়নে শেখ হাসিনা খুবই আন্তরিক। তাই তিনি বে টার্মিনাল নির্মাণ, বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সব করে যাচ্ছে। যাতে করে আমদানি-রপ্তানি বাড়ানো সম্ভব হবে। বন্দর বিশ্ব তালিকায় ৬ ধাপ এগিয়ে আসার কথা উলেস্নখ করে তিনি বলেন, ৭০ থেকে বন্দর তালিকায় ৬৪ তে এসেছে। এ উন্নয়ন কয়েক শতাব্দী থেকে যাত্রা শুরু করে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ। তবে পূর্ণাঙ্গ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে এবং দেশকে মধ্যম আয়ের দেশ হতে এগিয়ে নিতে বন্দরের উন্নয়ন অত্যন্ত জরুরী। নবগঠিত চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) উপদেষ্টা কমিটির সভাপতি নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী সভায় সভাপতিত্ব করেন।
তথ্যমন্ত্রী আরো বলেন, বাংলাদেশের লাইফলাইন চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে এ অঞ্চল ও সমগ্র দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি জড়িত। তাই এ বন্দরকে অপারেশন সক্ষমতার সর্বোচ্চ স্তরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পতেঙ্গা টার্মিনাল, লালদিয়া টার্মিনাল ও বে-টার্মিনাল নির্মাণের মতো যুগান্তকারী ও দূরদর্শী সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকার এ বন্দরকে বিশ্বমানে উন্নীত করেছে। বর্তমানে বন্দরে জাহাজ জট ও জাহাজের গড় অবস্থানকাল কমেছে।
তিনি বলেন, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ৭টি রাজ্য তাদের বাণিজ্যিক কার্যক্রমে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করতে আগ্রহী। এ লক্ষ্যে ত্রিপুরাসহ কয়েকটি রাজ্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ শুরু করেছে। আমদানী রপ্তানীর গড় সময় কমিয়ে বন্দরের বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে বন্দরের আয় বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক স্বার্থের পরিবর্তে দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়নে আরো সহযোগিতা করার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহবান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর বিশ্বর্ যাংকিং-এ উঁচু স্থানে উঠে এসেছে। আগামী ২ বছরের মধ্যে এ বন্দরকে বিশ্বর্ যাংকিং-এ ৫০ এর মধ্যে নিয়ে আসা হবে। জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়ার কথা উলেস্নখ করে তিনি বলেন, 'তারা দেশের অনেক ষড়যন্ত্র করেছে। এ বন্দরও তাদের ষড়যন্ত্রের বাহিরে ছিল না। কিন্তু আমাদের নেত্রী বাঙালি জাতিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে।'
তিনি আরো বলেন, 'সম্প্রতি তালিকায় বন্দর এখন ছয় ধাপ এগিয়ে। আমরা চাই ধাপের মাত্রায় ৫০ ধাপ এগিয়ে যেতে। এরজন্য আমরা কাজ করছি। তিনি আরো বলেন, নতুন কমিটির সদস্যদের কাছ থেকে লিখিত প্রস্তাবনা চাওয়া হয়েছে। এর অনেকগুলো পাওয়া গেছে। সবগুলো পাওয়া গেলে দ্রম্নত সময়ের মধ্যে উপদেষ্টা কমিটির আরেকটি সভার আয়োজন করা হবে।'
সভায় সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, পটিয়ার এমপি ও কমিটির সদস্য জাতীয় সংসদের হুইপ শামসুল হক চৌধুরী, বাঁশখালীর এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, চন্দনাইশের এমপি নজরুল ইসলাম, সিডিএ'র চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক মুফিজুর রহমানসহ বিভিন্ন সংস্থার উপদেষ্টারা উপস্থিত আছেন।
বুধবার দীর্ঘদিন পর অবশেষে অনুষ্ঠিত হয় বন্দর উপদেষ্টা কমিটির এই সভা। সর্বশেষ ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর হয়েছিল উপদেষ্টা কমিটির সভা। প্রতি তিন মাস পর পর সভা হওয়ার কথা থাকলেও গতকালের সভাটি হয়েছে ২০ মাস পর। জানা গেছে, বন্দরের উপদেষ্টা কমিটি বন্দর ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রণয়ন করে থাকার বিধান রয়েছে। এছাড়া বন্দর ব্যবহারকারী ও বন্দরের সাথে সম্পর্কিত দপ্তরসমূহের সাথে সমন্বয় সাধনে প্রয়োজনীয় সুপারিশও দেবে এই কমিটি। একইসাথে বন্দরের উন্নয়নে প্রয়োজনীয় আইন কিংবা বিধি সংশোধনের প্রয়োজন হলে সরকারের কাছে সুপারিশ আকারে পেশ করবে এই কমিটি। আর প্রতি তিন মাস অন্তর অন্তর একবার উপদেষ্টা কমিটির সভা করার ব্যাপারে বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে গত ৩ আগস্ট ৬০ সদস্যের বন্দরের উপদেষ্টা কমিটি গেজেট আকারের প্রকাশ করা হয়। নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীকে সভাপতি করে নতুন এই কমিটি গঠন করা হয়। আগে এই কমিটির সদস্য ছিল ৫৭ জন এবার প্রথমবারের মতো জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রামের সংরক্ষিত আসনের দুই মহিলা সংসদ সদস্যকে উপদেষ্টা কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।