শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনের পর পাঁচ মাসে কী করেছে ডাকসু?

যাযাদি রিপোর্ট
  ২২ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০
ঢাবির কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ভবন

প্রায় তিন দশক পর নির্বাচনের মাধ্যমে এ বছরের শুরুর দিকে সচল হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে ডাকসুর নানামুখী ভূমিকা দেশকে পথ দেখিয়েছে বিভিন্নভাবে। সে কারণে নবনির্বাচিত ছাত্র সংসদ ঘিরে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৪৩ হাজার শিক্ষার্থী অনেক আশায় বুক বেঁধেছিলেন। নির্বাচনের পর পেরিয়ে গেছে পাঁচ মাসেরও বেশি সময়। এই পর্যায়ে এসে শিক্ষার্থীরা খুলছেন হিসাবের খাতা- তাদের নির্বাচিত ছাত্র সংসদ কী করেছে গত পাঁচ মাসে?

ডাকসুর ভূমিকার বিষয়ে জানতে চেয়ে পাওয়া গেল মিশ্র প্রতিক্রিয়া। নির্বাচিত ছাত্র সংসদ এখনো কিছুই দিতে পারেনি বলে অনেকে স্পষ্ট অভিমত দিলেও কেউ কেউ দুষছেন সহ-সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের (ভিপি-জিএস) সমন্বয়হীনতাকে।

কথা হচ্ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ছাত্র ওয়াসিফ ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ডাকসু আমাদের কিছুই দিতে পারেনি। ডাকসুর প্রতিনিধিরা নির্বাচনের সময় যে প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছিলেন তা নিয়ে তারা কাজ করছেন না। আবাসিক সংকট থাকছেই। সর্বোপরি ডাকসুর প্রতিনিধিদের কাছে শিক্ষার্থীদের যে চাওয়া-পাওয়া ছিল তা তারা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন।

গত ১১ মার্চ ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্যানেল জিএসসহ মোট ২৩টি পদে জয়ী হয়। অন্যদিকে, ভিপিসহ দুটি পদে জয়ী হয় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের পস্ন্যাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের প্যানেল।

নির্বাচনের সময় হলের আবাসন সংকট, খাবার সমস্যা সমাধান, ক্যাম্পাস মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত করা, গবেষণায় বরাদ্দ বৃদ্ধি, শিক্ষক মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু, মানহীন ও সান্ধ্যকালীন কোর্স এবং সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিলসহ নানা ধরনের ইশতেহার দিয়েছিলেন ছাত্রলীগের প্যানেলের প্রার্থীরা। অন্যদিকে, কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রার্থীরা হলগুলোতে বহিরাগত ও অছাত্রদের বিতাড়ন, ক্যাফেটেরিয়া ও ক্যান্টিনে খাবারের মান নিশ্চিত, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব পরিবহন ও রুটের সংখ্যা বৃদ্ধি, জালিয়াতির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারে কার্যকর ভূমিকা রাখা, পরিবহন সংক্রান্ত খাতে বার্ষিক বাজেটের নূ্যনতম ২ শতাংশ বরাদ্দ রাখা, গবেষণায় বাজেট বৃদ্ধি করা ইত্যাদি প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছিলেন।

এসব ইশতেহার বাস্তবায়নে সক্রিয়তা তেমন লক্ষ্য করা না গেলেও প্রচারমুখী ও দৃশ্যমান কাজেই ডাকসুর নির্বাচিত প্রতিনিধিরা মনোযোগী বলে অভিমত শিক্ষার্থীদের।

বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় একটি ছাত্র সংগঠনের নেতা ইসমাইল হোসেন বলেন, হলগুলোতে আবাসন সংকট, ক্যান্টিনে খাবারের মান নিশ্চিত, ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময় ছিনতাই, মাদক ও সন্ত্রাসমূলক কর্মকান্ড ইত্যাদি নিয়ে ডাকসু নেতারা কাজ করছেন না। অধিভুক্ত সাত কলেজের দীর্ঘদিনের সমস্যা সমাধানের জন্য বিভিন্ন সময় আন্দোলন গড়ে উঠলেও ডাকসু সে বিষয়ে কোনো সমাধান দিতে পারেনি।

এসব সমস্যার প্রধান কারণ হিসেবে ভিপি (কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা নুরুল হক নুর) ও জিএসের (ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী) মধ্যে সমন্বয়হীনতাকেই দায়ী করছেন ইসমাইল। তিনি বলেন, ডাকসু নেতারা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মুখরোচক বক্তব্য দিয়ে নিজেদের শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি দাবি করলেও সমস্যা সমাধানে তারা ততটা আগ্রহী নন।

এ বিষয়ে আলাপ করলে ডাকসুর সাংস্কৃতিক সম্পাদক আসিফ তালুকদার বলেন, ২৮ বছর ধরে ডাকসু না থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেক মান-অভিমান সৃষ্টি হয়েছে। তাই এই এক বছর আমাদের সবকিছু রাতারাতি পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। কিন্তু ডাকসু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সব ধরনের অধিকার আদায়ে কাজ করে যাচ্ছে। এই কাজের অগ্রগতি গত পাঁচ মাসে বেশ ইতিবাচক। এর ধারাবাহিকতা থাকলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে শতভাগ শিক্ষার্থীবান্ধব প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।

ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে কথা বলার জন্য মোবাইল ফোনে কল দিলেও রিসিভ হয়নি।

আলাপ করলে ডাকসুর সহ-সভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুর বলেন, ডাকসু দৃশ্যমান কিছু করতে পারেনি। এর ব্যর্থতা স্বীকার করতেই হবে। তবে সে ব্যর্থতা আমার নয়। আমি পরিবেশ-পরিস্থিতির কারণে কিছুটা ব্যর্থ হয়েছি। কিন্তু এখানে ব্যর্থতা যে ২৩ জন সংখ্যাগরিষ্ঠ রয়েছেন তাদের এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের।

তিনি আরও বলেন, ডাকসু নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনের মতো একটা কলঙ্কিত নির্বাচন হয়েছে। প্রশাসনের সহযোগিতায় ছাত্রলীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। যে কারণে আমরা চাইলেও সবকিছু করতে পারি না। আবার উপাচার্য এবং ডাকসুর কোষাধ্যক্ষেরও কোনো ধরনের ইচ্ছা নেই ডাকসুকে কার্যকর করার। দীর্ঘ তিন টার্মে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার কারণে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের একক আধিপত্য তৈরি হয়েছে। কিন্তু এরপরও ডাকসু নির্বাচনের পর শিক্ষার্থীরা কিছুটা সক্রিয় হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<63356 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1