বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ৪৪০

মুগদা হাসপাতালে শয্যা সংকট

হাসপাতালের প্রতিটি বিভাগে জনবল সঙ্কটের কারণে রোগীরা পর্যাপ্ত সেবা পাচ্ছেন না। অপরিচ্ছন্নতার জন্যও জনবল স্বপস্নতাকে দায়ী করা হচ্ছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে যেখানে তিন থেকে চারজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী প্রয়োজন, সেখানে আছেন মাত্র একজন।
হাসান মোলস্না
  ০৬ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০
আপডেট  : ০৬ আগস্ট ২০১৯, ০০:১৪
মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে শয্যা সংকটের কারণে বারান্দা, রাস্তা থেকে শুরু করে সিঁড়ির মেঝেতে অবস্থান নিয়ে রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। ছবিটি সোমবার তোলা হয়েছে -ফোকাস বাংলা

৫০০ শয্যার মুগদা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন ৪৪০ জন। শয্যা সংকটের কারণে বারান্দা, রাস্তা থেকে শুরু করে সিঁড়ির মেঝেতে অবস্থান নিয়ে রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। জনবল সংকট, কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার পাশাপাশি ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ও তাদের স্বজনদের চাপে সরকারি হাসপাতালটির ভেতরের পরিবেশ এতই নোংরা হয়েছে যে, সেখানে সুস্থ মানুষের টিকে থাকাই দায়। মুগদা হাসপাতালে রোববার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নবম তলার মেডিসিন বিভাগের পাশাপাশি অষ্টম তলায়ও ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা চলছে। এ দুটি তলায় চাহিদা অনুযায়ী বেড বা শয্যা খালি না থাকলেও ডেঙ্গু আক্রান্ত কাউকে ফেরাচ্ছেন না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ওয়ার্ডে নির্দিষ্ট শয্যার বাইরে ডেঙ্গু রোগীরা মেঝেতে জায়গা পেয়েছেন। খিলগাঁও গোড়ানের মোহম্ম্‌দ মুসার ৯ বছরের সন্তান নুসরাত ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে তিনদিন আগে মুগদা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। ৮ তলার ওয়ার্ডের বাইরের মেঝেতে চাদর বিছিয়ে চিকিৎসা নেয়া এই পরিবারের সদস্যরা জানান, বেড খালি নেই। এজন্য মেঝেতেই কষ্ট করে থাকতে হচ্ছে। তাতেও সমস্যা হতো না যদি পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকত। মশারি টানানোর মতো ব্যবস্থা থাকত। কিন্তু পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ উদাসীন। এরপরেও শয্যা ফাঁকা না থাকা সত্ত্বেও মেঝেতে রেখে কর্তৃপক্ষ চিকিৎসা দিতে রাজি হওয়ায় সন্তুষ্ট তারা। নয় তলার মেঝেতে বিছানা পেতে থাকা ডেঙ্গু রোগী সুমন জানান, তার সেবা করতে আসা সুস্থ বড় বোন এখানে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। হাসপাতালের পরিবেশের কারণে সুস্থ মানুষ যদি অসুস্থ হয়ে পড়ে তাহলে বিপদ আরও বেড়ে যায়। এজন্য চিকিৎসা সেবা দেয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিতে কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ নেয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি। হাসপাতালের ভেতরে-বাইরে ঘুরে দেখা গেছে, ৫০০ শয্যার মুগদা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের বাইরে চাকচিক্য থাকলেও ভেতরের পরিবেশ একেবারেই উল্টো। অবর্জনা ফেলার জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো জায়গা নেই। যার যেখানে খুশি ময়লা-আবর্জনা ফেলছেন। মশা-মাছি ঘুরে বেড়াচ্ছে অবাধে। ডেঙ্গু জীবাণু বহনকারী মশা তাড়ানোর কোনো উদ্যোগও নেই। ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হওয়ার পর থেকে হাসপাতালেরই ৭ জন ডাক্তার এবং ৩৪ জন নার্স ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া হাসপাতালের ভেতরের সবগুলো ভয়েডে অর্থাৎ ফাঁকা জায়াগায় পানি জমে আছে। এসির পানিগুলোও বাইরে পড়ে জমছে। একই জায়গায় ময়লা-আবর্জনাও ফেলা হচ্ছে। সেসব স্থান থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এদিকে হাসপাতালের বাথরুমগুলোর অবস্থা এতটাই নোংরা যে, তা ব্যবহার করাই সম্ভব নয়। এজন্য অনেক রোগী ও তাদের স্বজনরা বাথরুম ব্যবহারের জন্য হাসপাতালের বাইরে যেতে বাধ্য হন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের একজন স্টাফ জানান, মূলত হাসপাতালে কোনো ক্লিনার নেই। তদ্বিরের মাধ্যমে অন্য পেশার লোকদের ক্লিনার হিসেবে নিয়োগ দেয়ায় তারা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করে না। ফলে রোগীদের ভোগান্তির স্বীকার হতে হয়। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের বিষয়ে মুগদা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালকের দায়িত্বে থাকা উপ-পরিচালক ডা. মো. খায়রুল আলম যায়যায়দিনকে বলেন, হাসপাতালের ভেতরে ও বাইরে পরিষ্কার করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নিজস্ব ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি সিটি কর্পোরেশেনের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে। ২/১ দিনের মধ্যে অপরিচ্ছন্ন অবস্থার অবসান হবে। রোগী ও হাসপাতালের বিভিন্ন স্তরের স্টাফদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিটি সেক্টরের জনবল সঙ্কটের কারণে রোগীরা পর্যাপ্ত সেবা পাচ্ছেন না। অপরিচ্ছন্নতার জন্যও জনবল সংকটই দায়ী। প্রতিটি ওয়ার্ডে যেখানে তিন থেকে চারজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী প্রয়োজন, সেখানে আছেন মাত্র একজন। তাকে আবার অন্য কাজও করতে হয়। ফলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ ঠিকমত হচ্ছে না। এছাড়া রোগীর স্বজনরাও সচেতন নন। তারাও হাসপাতালের পরিবেশ নোংরা করছেন। এ কারণে মশা-মাছির আনাগোনা বাড়ছে। এদিকে পর্যাপ্ত মেডিকেল টেকনোলজিস্ট না থাকার কারণেও আছে রোগীদের ভোগান্তি। তিন তলার ল্যাবে গিয়ে দেখা যায়, রোগ শনাক্তে আসা অসংখ্য মানুষের লাইন। এনএস ওয়ান এবং সিভিসি পরীক্ষার জন্য রোগীরা গিয়েছেন সেখানে। ওয়ান স্টপ সার্ভিসও চালু করা হয়েছে। পর্যাপ্ত মেডিকেল টেকনোলজিস্ট না থাকার কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে রোগীদের। মেডিকেল টেকনোলজিস্ট দেবাশীস দত্ত জানান, মূলত ডায়গনোসিসের কাজটাই করেন মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা। ডেঙ্গু বাদ দিয়ে হাসপাতালের ৭টি বিভাগে ৯ জন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট কর্মরত, যা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। কিন্তু ডেঙ্গু রোগীর চাইতে শনাক্তকরণের জন্য আসা রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। সবার জন্যই কাজ করতে হয় মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের। এজন্য এসব স্টাফরা দিন-রাত পরিশ্রম করছেন। নির্দিষ্ট সময়ের বাইরেও কোনো ধরনের ছুটিছাটা ছাড়াই কাজ করে যাচ্ছেন। অবিলম্বে জনবল বাড়ানোর প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। শনাক্তকরণের জন্য আসা রোগীদের পরিসংখ্যানের বিষয়ে ল্যাব ইনচার্জ ইমরান হাসান জানান, গত ৩০ জুলাই থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত এক হাজার দু'শ বাইশজন রোগীর ডেঙ্গু শনাক্তে রক্ত পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে পজিটিভ হয়েছে ২৩৭ জন। রোগীর সঙ্গে আসা যাদের ডেঙ্গুর লক্ষণ নেই তারাও বিনামূল্যে সেবা পাওয়ার কারণে এই টেস্টটা করছেন। ফলে প্রকৃত রোগীদের ভোগান্তি বাড়ছে। আর সকাল ৮টা থেকে ২টা পর্যন্ত রেগুলার এবং ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ওয়ানস্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে সেবা দেয়ার পরেও মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে