মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

জাহালম: প্রতিবেদন নিয়ে দুদকের সিদ্ধান্ত দেখবেন হাইকোর্ট

যাযাদি রিপোর্ট
  ১৭ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

ঋণ জালিয়াতির ২৬ মামলায় পাটকল শ্রমিক 'জাহালমকে আবু সালেকরূপে চিহ্নিত করার যে ভুলটি হয়েছে তা দুদকের তদন্তকারী কর্মকর্তাদের কারণেই ঘটেছে'- এমন প্রতিবেদনের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কী সিদ্ধান্ত নেবেন তা দেখতে চান হাইকোর্ট।

দুদকের পক্ষে প্রতিবেদন উপস্থাপনের পর মঙ্গলবার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ পরবর্তী আদেশের জন্য ২১ আগস্ট দিন নির্ধারণ করেন।

আদালতে দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। জাহালমের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী অমিত দাশগুপ্ত। আর আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামান ছিলেন ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডের পক্ষে। সোনালী ব্যাংকের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার শেখ মো. জাকির হোসেন।

আদালত বলেন, 'প্রতিবেদনে যাদের নাম আসছে তাদের বিষয়ে দুদক বিভাগীয় ব্যবস্থা কী নেয় আমরা সেটার অপেক্ষায় থাকলাম। আমরা এখন ক্ষতিপূরণের রুলের দিকে যাব।'

আদালত আরও বলেন, প্রতিবেদনে যাদের নাম আসছে (দুদক, ব্যাংক কর্মকর্তারা) তারা যেন টাকা উত্তোলন করতে না পারে, বিশেষ করে প্রভিডেন্ট ফান্ড। এ বিষয়টা নজরে রাখবেন।

এ সময় সোনালী ব্যাংকের আইনজীবী বলেন, সোনালী ব্যাংক তাদের কর্মকর্তাদের বিভাগীয় ব্যবস্থা নিয়েছে।

তখন এ প্রতিবেদন আদালতে দাখিলের আদেশ চান। এরপর আদালত সোনালী ব্যাংকের বিভাগীয় ব্যবস্থার প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে নির্দেশ দেন। এর আগে ১২ জুলাই আদালতের নির্দেশে হাইকোর্টে দুদক তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে।

গত ১৭ এপ্রিল জাহালম কান্ডে কে বা কারা দায়ী তা দেখার জন্য এ বিষয়ে দুদকের প্রতিবেদন চেয়েছিলেন। সে অনুসারে দুদকের পরিচালক (লিগ্যাল) এবং এ সংক্রান্ত দুদকের তদন্ত কমিটির প্রধান আবুল হাসনাত মো. আব্দুল ওয়াদুদের দেয়া প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়।

আবুল হাসনাত মো. আব্দুল ওয়াদুদ প্রতিবেদনে বলেন, 'সার্বিক বিবেচনায় আমার কাছে প্রতীয়মান হয়েছে যে, জাহালমকে আবু সালেকরূপে চিহ্নিত করার যে ভুলটি হয়েছে তা দুদকের তদন্তকারী কর্মকর্তাদের কারণেই ঘটেছে। আর তাদের ভুল পথে চালিত করতে সহায়তা করেছে ব্র্যাক ব্যাংক ও অন্যান্য ব্যাংকের কর্মকর্তারা এবং অ্যাকাউন্টের ভুয়া ব্যক্তিকে পরিচয়দানকারীরা। তবে সঠিক ঘটনা তথা সত্য উদ্‌ঘাটন করে আদালতের কাছে তা উপস্থাপন করাটাই তদন্তকারী কর্মকর্তাদের দায়িত্ব।'

গত জানুয়ারিতে একটি জাতীয় দৈনিকে ৩৩ মামলায় 'ভুল' আসামি জেলে 'স্যার, আমি জাহালম, সালেক না...' শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অমিত দাশ গুপ্ত।

এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তা, মামলার বাদীসহ চারজনকে তলব করেন হাইকোর্ট বেঞ্চ। এ ছাড়া রুলও জারি করেন আদালত।

পরে ৩ ফেব্রম্নয়ারি সংশ্লিষ্টরা হাজিরের পর হাইকোর্ট জাহালমকে মুক্তির নির্দেশ দেন এবং দুদকের কাছে ঘটনার বিষয়ে হলফনামা আকারে জানতে চেয়েছেন। সে আদেশ অনুসারে দুদক হলফনামা আকারে তা উপস্থাপন করেন।

পরে জাহালম প্রশ্নে ব্যাংক ঋণ জালিয়াতির ৩৩ মামলার এফ আই আর, চার্জশিট, সম্পূরক চার্জশিট এবং সকল ব্যাংকের এ সংক্রান্ত নথিপত্র দাখিল করতে দুদককে নির্দেশ দেন।

এর ধারাবাহিকতায় হাইকোর্ট গত ১৭ এপ্রিল জাহালম কান্ডে কে বা কারা দায়ী তা দেখার জন্য এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রতিবেদন চেয়েছিলেন।

জাহালম নিয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, 'স্যার, আমি জাহালম। আমি আবু সালেক না আমি নির্দোষ।' আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়ানো লোকটির বয়স ৩০-৩২ বছরের বেশি না। পরনে লুঙ্গি আর শার্ট। ২০১৭ সালের ফেব্রম্নয়ারি মাসে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬-এ বিচারকের উদ্দেশে তাকে বারবার বলতে দেখা যায়, 'আমি আবু সালেক না।'

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আবু সালেকের বিরুদ্ধে সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির ৩৩টি মামলা হয়েছে। কিন্তু আবু সালেকের বদলে জেল খাটছেন, আদালতে হাজিরা দিয়ে চলেছেন এই জাহালম। তিনি পেশায় পাটকল শ্রমিক।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<58531 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1