যাযাদি ডেস্ক
চট্টগ্রাম নগরের হালিশহর টোল রোডে চলাচল করে বিভিন্ন পণ্যবাহী ট্রাক। রড উৎপাদনকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ট্রাকও চলে এই সড়কে। এসব চলন্ত ট্রাক থেকে লোহা ও রড চুরি করে এমন পাঁচটি চক্রের ২৬ জন সদস্যের সন্ধান পেয়েছে পুলিশ।
দীর্ঘদিন ধরে রড ও লোহা চুরি হলেও তা বুঝতে বা ধরতে পারতেন না বিএসআরএম, আবুল খায়ের গ্রম্নপসহ বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো।
সম্প্রতি টোল রোডে চলন্ত ট্রাক হতে ৫ থেকে ১০ মিনিটের মাথায় লোহা চুরি করে এমন চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য পেয়েছে পুলিশ।
ওই চার যুবক পুলিশের কাছে অনায়াসে স্বীকারও করেছে চুরির কথা। গ্রেপ্তার চারজনের দেয়া তথ্যে পরে আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গত ১৫ এপ্রিল রাতে গ্রেপ্তার করা হয় মো. তানভীর হোসেন ফয়সাল (২২), মো. নাজিমুল ইসলাম (১৯) ও মো. রায়হান (২১) নামের ৩ চোরকে। পরে গ্রেপ্তার করা হয় মামুন নামে একটি গ্রম্নপের দলনেতাকে। শুক্রবার ভোরে গ্রেপ্তার করা হয় মানিক হোসেন (৩৮) ও তুষার আহমেদ (১৮) নামে আরও দুজনকে।
গ্রেপ্তার হওয়া ফয়সাল পুলিশকে জানায়, গত তিন বছর ধরে টোল রোডে সে চুরির সঙ্গে সম্পৃক্ত। মাদক সেবন ও দৈনন্দিন খরচের টাকা জোগাড় করতে চুরি করে বলে পুলিশের কাছে দাবি করে ফয়সাল।
চক্রের সদস্য যারা: পাঁচটি গ্রম্নপে বিভক্ত হয়ে ২৬ জন সদস্য চুরির কাজ করে থাকে। পুলিশের তদন্তে পাওয়া ২৬ জন হলেন- মো. তানভীর হোসেন ফয়সাল, মো. নাজিমুল ইসলাম, মো. রায়হান, মো. সাইদুল, মো. নিজাম, আরিফ, মো. তুহিন, গালিব, মো. মামুন, মো. জসিম, মিন্টু, আবদুল তৈয়ব, আনোয়ার, জিসান, সুজন, সোহেল, জাহাঙ্গীর, সেলিম, আলামিন, ওমর ফারুক, পারভেজ, মানিক হোসেন, দুলাল, বেলাল, তুষার আহমেদ ও মিনহাজ।
এদের মধ্যে মামুন একটি গ্রম্নপের দলনেতা, মানিক হোসেন একটি ও তুষার আহমেদ আরেকটি গ্রম্নপের দলনেতা।
চুরি করে যেভাবে: দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার কাজ চলছে টোল রোডে। সড়কের বিভিন্ন জায়গায় খানাখন্দকের সৃষ্টি হয়েছে। রড বোঝাই ট্রাকগুলো ওই সড়কে খুব ধীর গতিতে চলাচল করে।
এ সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান করা সদস্যরা গাড়ি থেকে লোহা নামিয়ে ফেলে চালক ও সহযোগীর অগোচরে।
গ্রেপ্তার হওয়া এ চক্রের সদস্যদের দেয়া বর্ণনা অনুযায়ী, টোল রোডে ঢুকতে রড বা লোহার গাড়ি চিহ্নিত করা হয়। পরে কোনো জায়গায় গাড়ি ধীরগতিতে এলেই সেটিতে উঠে পড়ে সদস্যরা। গাড়ি চলন্ত অবস্থায় উপরে থাকা সদস্যরা রড ও লোহা খুলে নিয়ে প্রস্তুত থাকে। পড়ে অন্য কোনো জায়গায় গাড়ি আবার ধীরগতিতে এলেই দ্রম্নত সেসব নামিয়ে ফেলে। এতে সময় লাগে ১০ মিনিট। আর পুরো ঘটনার একটুও টের পান না চালকরা।
বিএসআরএম, আবুল খায়েরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালামাল চুরি করেছে বলে স্বীকার করেছে এই চক্রের সদস্যরা।
যেভাবে ধরা পড়ে তারা: চট্টগ্রাম বন্দর থেকে রড তৈরির কাঁচামাল লোহা নিয়ে বিএসআরএমের সীতাকুন্ড কারখানায় যাওয়ার সময় প্রায় চুরি হয় লোহা।
বিষয়টি প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা বিভাগের সন্দেহ হয়। লোহা নিয়ে যাওয়ার সময় নিজেদের নিরাপত্তা কর্মীদের দিয়ে টহল জোরদার করা হয়।
১৫ এপ্রিল টোল রোডের আব্বাসপাড়া সাদেক শাহ মাজার সংলগ্ন এলাকায় বিএসআরএমের ট্রাক থেকে ১২০ কেজি লোহা নামিয়ে ফেলে কিছু যুবক। পরে তাদের ধাওয়া করে বিএসআরএমের নিরাপত্তা কর্মীরা।
বিএসআরএমের নিরাপত্তা বিভাগের সহকারী এক্সিকিউটিভ মো. নুরুল করিম বাদী হয়ে হালিশহর থানায় মামলা দায়ের করলে পুলিশ অভিযান চালিয়ে মো. তানভীর হোসেন ফয়সাল, মো. নাজিমুল ইসলাম ও মো. রায়হানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
পরে তাদের দেয়া তথ্যে গ্রেপ্তার করা হয় মামুন নামে একটি গ্রম্নপের দলনেতাকে। শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) ভোরে গ্রেপ্তার করা হয় মানিক হোসেন (৩৮) ও তুষার আহমেদ (১৮) নামে আরও দুজনকে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (ডবলমুরিং জোন) মো. আশিকুর রহমান বলেন, 'টোল রোডে চলন্ত গাড়ি থেকে লোহা চুরি করে এমন পাঁচটি চক্রের সন্ধান পেয়েছি আমরা। পাঁচ চক্রে ২৬ জন সদস্যের নাম পেয়েছি। ইতোমধ্যে ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।'
পুলিশ কর্মকর্তা আশিকুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তারা চুরি করে এলেও ধরা পড়েনি। সম্প্রতি বিএসআরএমের সন্দেহ হলে তারা নিজেরা টহল দেয়। পরে চুরির বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে থানায় মামলা করে।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া চোর চক্রের সদস্যরা স্বীকার করেছে তারা দীর্ঘদিন ধরে চুরি করে আসছে। এদের কয়েকজন জানিয়েছে- তারা মাদক সেবনের টাকা জোগাড় ও দৈনন্দিন পকেট খরচের টাকা জোগাড় করতে চুরির কাজে সম্পৃক্ত হয়েছে।