প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদা বলেছেন, '৭ মার্চের ভাষণে লাখ লাখ জনতার মধ্যে আমরাই ছিলাম। সেই ভাষণ শুনতে গিয়েছিলাম মশারি টানানোর লাঠি নিয়ে। কেননা, স্বাধীনতা আমরা চেয়েছিলাম।'
'মহান স্বাধীন ও জাতীয় দিবস-২০১৯' উপলক্ষে মঙ্গলবার নির্বাচন ভবনের মিলনায়তনে নির্বাচন কমিশন (ইসি) আয়োজিত আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
সিইসি বলেন, 'আজকে বলব তাদের কথা, যাদের বয়স একাত্তর সালে ১৮-২২ ছিল। তারা স্বাধীনতাকে কিভাবে দেখেছিলেন। স্বাধীনতা অর্জনে কিভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কিভাবে তাদের মধ্যে সংগ্রামী চেতনার উন্মেষ ঘটেছিল। এ বিষয়ে বলতে গিয়ে, আমি আমার জীবনের কিছু কথা বলব। এর মানে এই নয়, আমি আমাকেই মহিমান্বিত করার চেষ্টায় বক্তব্য রাখছি। আসলে আমি বলতে চাচ্ছি, একাত্তরে যারা যুবক ছিল, তারা প্রত্যেকেই যার যার নিজের জায়গা থেকে স্বাধীনতা অর্জনের পথে কোনো না কোনোভাবে ভূমিকা রেখেছিল।'
তিনি বলেন, '৩ মার্চ একাত্তরে অধিবেশ স্থগিত ঘোষণা করা হয়। ওইদিন ছিল ঢাকা স্টেডিয়ামে ক্রিকেট খেলা। ইয়াহিয়ার ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত দেশ বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল। আমার ওইদিন মাস্টার্সের ব্যবহারিক পরীক্ষা (ঢাবি) ছিল। আমরাও পরীক্ষা ফেলে পথে নেমে আসি।'
সিইসি বলেন, '৭ মার্চের ভাষণে রেসকোর্স ময়দানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) আমরা কেউ মশারি টানানোর লাঠি, কেউ বাঁশ; এসব নিয়ে ছুটে যাই। সেখানে যে লাখ লাখ মানুষ ছিল, এর মধ্যে আমরাও ছিলাম। রাতে আমার এক স্যারের সঙ্গে দেখা করে বলি, বঙ্গবন্ধু তো দিকনির্দেশনা দিয়ে দিয়েছেন, এখন কী করব? স্যার বলেন, ঢাকা শহর কারো জন্য নিরাপদ নয়, তুমি বরং গ্রামে চলে যাও।'
নুরুল হুদা আরও বলেন, 'আমি ফরিদপুরের এক বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে গ্রামের দিকে রওনা হই। গ্রামে পৌঁছে দেখি, সব তরুণ, জুবা, কৃষক-শ্রমিক-জনতা, সবার মধ্যেই যুদ্ধে যাওয়ার প্রস্তুতি। আমরা শুধু মনোবল সঙ্গী করে বাঁশের লাঠিকে রাইফেল ধরে নিয়ে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেয়া শুরু করি। আসলে তখন দেশের সবাই একজন যোদ্ধা, এ দেশের নদী-নালা, খাল-বিল, গাছ-পালাও ছিল স্বাধীনতার পক্ষে। ওরা (পাক হানাদার বাহিনী) সাঁতার জানত না। ফলে নদী পার হতে পারত না। ওরা গাছে উঠতে পারত না।'
\হআমাদের গেরিলা বাহিনীর সদস্যরা তালগাছের ওপর বসেও তাদের আক্রমণ করত। এভাবে পুরো মুক্তিযুদ্ধটা জনযুদ্ধে পরিণত হয়।'
ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, 'আমাদের সৌভাগ্য যে, আমাদের সিইসি একজন সম্মুখ যোদ্ধা। নির্বাচন কমিশনার রফিকুল স্যার তরুণ যোদ্ধা, মাহবুব তালুকদার স্যার একজন অন্যতম সংগঠক। এ রকম একটি কমিশন আমরা পেয়েছি, এ জন্য আমরা গর্বিত। আমি তখন চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। ফলে মুক্তিযুদ্ধে যেতে পারিনি। মুক্তিযুদ্ধকে আমিও একটি জনযুদ্ধ হিসেবে বিবেচনা করি। এই যুদ্ধে যারা জীবন উৎসর্গ করেছেন, তারা স্বাধীন দেশের সুফল ভোগ করতে পারেননি। আমরা সৌভাগ্যবান যে, আমরা স্বাধীনতার সুফল ভোগ করতে পারছি। সে জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আমরা চিরঋণী।'