বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণের সুপারিশ

যাযাদি রিপোর্ট
  ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০
রাজধানীর একটি সড়কে সিগন্যালে আটকে থাকা কয়েকটি মোটরসাইকেল -যাযাদি

সিগন্যালে আটকে আছে সারি সারি যানবাহন। সারির সামনে ২০-২৫টি মোটরসাইকেল। একটু ফাঁকা পেয়েই ভোঁ টান দিয়ে মোড়ের এক পাশ থেকে অন্য পাশে চলে গেল কয়েকটি মোটরসাইকেল। অন্য বাহনগুলো তখনো সিগন্যালে আটকে। বুধবার আসাদ গেট মোড়ে দেখা মেলে এ দৃশ্য। তবে এ চিত্র কেবল আসাদ গেটের নয়, রাজধানীর সড়কে এ দৃশ্য দেখা যায় নিত্যদিন।

ট্রাফিক পুলিশ বলছে, মোটরসাইকেলের এমন বেপরোয়া চালনার কারণে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে। বাড়ছে যানজটও। অথচ রাইড শেয়ারিং সেবার কারণে রাজধানীতে মোটরসাইকেলের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তাই রাইড শেয়ারিং সেবায় মোটরসাইকেল যুক্ত হওয়ার ব্যাপারে বিধিনিষেধ চাইছে তারা। বিআরটিএর কাছে ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে সুপারিশ করা হয়েছে অ্যাপভিত্তিক পরিবহনসেবায় বা রাইড শেয়ারিংয়ে ঢাকার বাইরে নিবন্ধিত কোনো মোটরসাইকেল যাতে যুক্ত হতে না পারে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সঙ্গে আলোচনাও হয়েছে।

জানা গেছে, অ্যাপভিত্তিক পরিবহন সেবার জন্য গত বছর একটি নীতিমালা করেছে সরকার। নীতিমালা অনুযায়ী, ঢাকা শহরে অ্যাপভিত্তিক পরিবহনসেবা চালাতে হলে বিআরটিএর কাছ থেকে নিবন্ধন নিতে হবে। নিবন্ধন থাকতে হবে এই সেবায় যুক্ত মোটরসাইকেলেরও। এ জন্য অ্যাপভিত্তিক পরিবহনসেবায় মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিআরটিএর দ্বারস্থ হয়েছে পুলিশ।

ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশ সূত্র জানায়, অ্যাপভিত্তিক পরিবহনসেবায় ঠিক কতগুলো মোটরসাইকেল যুক্ত, এ সংক্রান্ত কোনো তথ্যভান্ডার এখনো তৈরি হয়নি। তবে মাঠপর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে দেখা গেছে, ঢাকার বাইরের নিবন্ধিত অনেক মোটরসাইকেল অ্যাপভিত্তিক পরিবহনসেবায় যুক্ত। ট্রাফিক পুলিশের দাবি, রাইড শেয়ারিং সেবায় ঢাকার বাইরে নিবন্ধিত মোটরসাইকেল চলতে দেওয়া না হলে ঢাকায় মোটরসাইকেলের সংখ্যা কমবে এবং একে নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে।

বিআরটিএর তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা শহরে নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা ১৩ লাখ ৮৪ হাজার ১৯২টি। এর মধ্যে শুধু মোটরসাইকেলই ৬ লাখ ২৫ হাজার ৪১৮টি।

জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, 'অতিরিক্ত আয়ের জন্য অনেকেই মফস্বল থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে ঢাকায় আসছেন। রাইড শেয়ারিং সেবার মাধ্যমে মোটরসাইকেলগুলো চলছে। রাইড শেয়ারিং সেবার কারণে চলাচলে যেমন সুবিধা হয়েছে, তেমনি যানজটও বেড়েছে। আমরা চাই গণপরিবহনের উন্নতি হোক এবং রিকশা, মোটরসাইকেল ও ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার কমুক। তাই রাইড শেয়ারিং সেবায় ঢাকার (ঢাকা মেট্রো) বাইরে নিবন্ধিত মোটরসাইকেল না চালানোর সুপারিশ করা হয়েছে। সম্প্রতি এ নিয়ে বিআরটিএতে একটি বৈঠকও হয়েছে। এতে অন্যান্য অংশীজনও ছিলেন। তবে বিআরটিএ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি।'

সিদ্ধান্তের ব্যাপারে জানতে বিআরটিএ চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমানকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

ট্রাফিক পুলিশের একাধিক কর্মকর্তার মতে, ঢাকা শহরে চলা যান্ত্রিক বাহনের মধ্যে মোটরসাইকেল চালকদের মধ্যে আইন না মানার প্রবণতা বেশি। ট্রাফিক পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন যানবাহনের বিরুদ্ধে যে মামলা হয়, তার অর্ধেকই হয় মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে। তারপরও ফুটপাত দিয়ে চলা, উল্টো পথে চলা, সিগন্যাল না মানাসহ নানা সমস্যা দূর করা যাচ্ছে না। তাদের মতে, মোটরসাইকেলের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে এ সমস্যা আরও বাড়বে।

ট্রাফিক পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত সোমবার ট্রাফিক আইন অমান্য করায় ঢাকা শহরে ৬ হাজার ১৫১টি মামলা করেছে ট্রাফিক পুলিশ। যার মধ্যে ২ হাজার ৫১৪টি মামলাই হয়েছে মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে।

মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণে পুলিশের সুপারিশ সম্পর্কে জানতে চাইলে পরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সামছুল হক বলেন, মোটরসাইকেলের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে পুলিশের সুপারিশটি যৌক্তিক। মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত জরুরি। এটি শুধু ব্যবহারে নয়, উৎপাদনের ক্ষেত্রেও। তিনি বলেন, অনিয়ন্ত্রিতভাবে মোটরসাইকেলের সংখ্যা বৃদ্ধি ভবিষ্যতের জন্য বিরাট হুমকি হিসেবে আসছে। এ হুমকি সড়কের শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার জন্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<37973 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1