শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
যোগ্য প্রতিষ্ঠানের অভাব

ফেরত যাচ্ছে এমপিওর ৪১৪ কোটি টাকা

নূর মোহাম্মদ
  ১৫ মে ২০২০, ০০:০০

টাকা থাকার পরও যোগ্য প্রতিষ্ঠান না পাওয়ায় চলতি অর্থবছরের এমপিও খাতের বরাদ্দ থেকে ফেরত যাচ্ছে ৪১৪ কোটি টাকা। পুরো টাকাটা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের। অন্যদিকে সরকারের তরফ থেকে প্রতি বছর প্রতিষ্ঠান এমপিও দেওয়ার কথা বলা হলেও আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এ খাতের কোনো বরাদ্দ রাখা হচ্ছে না। এতে চরম হতাশা প্রকাশ করেছেন এমপিওবঞ্চিত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা। শুধু তাই নয়, এমপিও নীতিমালায় অসংগতি দূর করতে দুটি কমিটি গঠন করা হলেও সেই নীতিমালা এখনো আলোর মুখ দেখেনি। এতে নতুন করে আবেদন নিতে পারছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের প্রস্তাবিত বাজেট রাখা হয়েছে ৩৩ হাজার ১১৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এর মধ্যে উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৯ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকা। যেখানে আগামী বছরের নতুন প্রতিষ্ঠান এমপিও খাতের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়নি। গত বছর এটি ছিল ২৯ হাজার ৬৫১ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার কত তা পাওয়া যায়নি।

চলতি অর্থবছরের এমপিও বরাদ্দ ফেরত যাচ্ছে- এমন তথ্য তার কাছে নেই বলে জানান মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক-২) ও এমপিওভুক্ত নীতিমালা কমিটির প্রধান মোমিনুল রশিদ আমিন। তিনি যায়যায়দিনকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রম্নতি অনুযায়ী প্রতিবছর নতুন এমপিও হবে এমনটাই আমরা জানি। নীতিমালা সংশোধনীর ব্যাপারে কমিটির প্রধান এই কর্মকর্তা বলেন, আমাদের সবকিছু প্রস্তুত। করোনার কারণে চূড়ান্ত করতে পারছি না।

জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে স্কুল ও কলেজ এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে বরাদ্দ ছিল ৮৬৫ কোটি টাকা। কিন্তু এমপিও পাওয়া প্রতিষ্ঠানের মধ্যে স্কুল ও কলেজের সংখ্যা এক হাজার ৬৫১। তাদের পেছনে বছরে ব্যয় হবে ৪৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। যোগ্য প্রতিষ্ঠান না পাওয়ায় ৪১৪ কোটি টাকা ব্যবহার করতে পারল না শিক্ষা মন্ত্রণালয়। অন্যদিকে কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগে ১ হাজার ৭৯টি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের পেছনে বছরে ব্যয় হবে ৪৩০ কোটি টাকা। আর এই বিভাগে এমপিওভুক্তির জন্য বরাদ্দ ছিল ২৮২ কোটি টাকা। বাকি ১৪৯ কোটি টাকা চলতি বছরের সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ সাপেক্ষে সমন্বয় করা হবে বলে জানা গেছে। যদিও একশর বেশি প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত এমপিও থেকে ছিটকে গেছে। যদিও তারা আপিলের সুযোগ পাবে। সর্বশেষ এসব প্রতিষ্ঠান যদি যোগ্য না হয় তবে সংশোধিত বাজেটে সমন্বয়ের টাকা আরও কমতে পারে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগকে একত্র করে এমপিও বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা। আর যে পরিমাণযোগ্য প্রতিষ্ঠান পাওয়া গেছে তাদের পেছনে বছরে ব্যয় হবে ৮৮১ কোটি টাকা। আর ২৬৬ কোটি টাকা অব্যয়িত থাকবে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে ১ হাজার ৯৬৭টি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দুই হাজার ৭৩৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৩৩৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৫৪৪টি উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ ও ৫৫৫টি ডিগ্রি কলেজের আবেদন পড়েছিল। মোট স্কুল ও কলেজের আবেদন পড়েছিল ৬ হাজার ১৪১টি। এর মধ্যে এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী যোগ্য বলে বিবেচিত হয়েছে ১ হাজার ৬৫১টি। বাকি ৪ হাজার ৪৯০টি প্রতিষ্ঠানকে এমপিও দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এমপিওভুক্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছিলেন, যেহেতু মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে ৪১৪ কোটি টাকা অবশিষ্ট আছে, তাই এই অর্থ দিয়ে আবার যাচাই-বাছাই করে চলতি অর্থবছরেই আবারও এমপিওভুক্ত করা হবে। সেজন্য এমপিও নীতিমালা সংশোধনের জন্য গত বছর নভেম্বরে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের আলাদা দুটি কমিটি করা হয়। ছয় মাসের বেশি সময়ে এ কমিটি সংশোধনী নীতিমালা মন্ত্রণালয়ের কাছে জমা দিতে পারেনি। সেজন্য নতুন করে এমপিওভুক্তির আবেদন নেওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে অব্যয়িত ৪১৪ কোটি টাকা ফেরত যাচ্ছে।

এ ব্যাপারে নন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীর ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার বলেন, এটা খুবই হতাশাজনক খবর। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গাফিলতির কারণে এমনটা হয়েছে। তিনি বলেন, সারাদেশে এমপিওবঞ্চিত হাজার হাজার শিক্ষক বাজেটের দিকে তাকিয়ে আছেন। বাজেটের এমপিও খাতে বরাদ্দ রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<99571 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1