বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গণপরিবহণ শ্রমিকদের মানবেতর জীবনযাপন

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ায় গত ২৬ মার্চ থেকে দেশে গণপরিবহণ ও দূরপালস্নার সব যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন পরিবহণ শ্রমিকরা
যাযাদি রিপোর্ট
  ২৩ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০
আপডেট  : ২৩ এপ্রিল ২০২০, ১০:২৬
সারাদেশে আন্তঃজেলা সড়ক যোগাযোগ কার্যত বন্ধ থাকায় রাজধানীর সায়েদাবাদ টার্মিনালে সারিবদ্ধভাবে রাখা গণপরিবহণ। ছবিটি সম্প্রতি তোলা -যাযাদি

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দেশ লকডাউন। সড়কে ঘুরছে না গাড়ির চাকা। থেমে আছে পরিবহণ খাতের মানুষের জীবন-জীবিকা। এতে মানবেতর জীবন-যাপন করছে এ খাতের কর্মীরা। উপার্জন না থাকায় বাস ও গাড়ি চালকদের কেউ কেউ রিকশা চালাচ্ছেন আবার কেউ ফেরি করে সবজি ও ফলমূল বিক্রি করছেন। ভালো নেই রাইড শেয়ারিং চালকরাও। তাদের কেউ কেউ ডাব বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন। ভুক্তভোগীরা বলছেন, লকডাউন দীর্ঘায়িত হলে না খেয়ে মরতে হবে তাদের। অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে তাদের। বাস মালিকরা বলছেন, শ্রমিকরা যেমন বেকার হয়ে পড়েছে, ঠিক তেমনি মালিকরাও বিপাকে। শ্রমিকদের কষ্ট দেখে সহানুভূতি জাগলেও ইচ্ছে হয় কিছু টাকা দিয়ে সাহায্য করার, কিন্তু তাদেরও সামর্থ্য নেই। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ায় গত ২৬ মার্চ থেকে দেশে গণপরিবহণ ও দূরপালস্নার সব যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতেই সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন পরিবহণ শ্রমিকরা। খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছে কেউ কেউ। আবার কোনো চালক ফেরি কিংবা রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। স্বাধীন পরিবহণের চালক আশিক মিয়া। গণপরিবহণ বন্ধ হওয়ার পর পরিবারের খরচ চালাতে হিমশিম খান। দৈনিক হাজিরা না হওয়ায় বাস মালিকও কোনো টাকা দেয়নি। ফলে কিছুদিন অপেক্ষা করেই রিকশা চালানো শুরু করেন আশিক। প্রায় ২০ দিন ধরে রাজধানীতে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি। আশিক বলেন, 'আমাদের সবাই চেনে বাসচালক। তারপরও কোনো উপায় না দেখে রিকশা চালাচ্ছি। মালিককে দিয়ে যে দুই-তিনশ' টাকা থাকে, সেটা দিয়ে পরিবার চালাই।' এয়ারপোর্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ পরিবহণের চালক সহকারী আকুল মিয়াও ১৫ দিন ধরে রিকশা চালান। তিনি বলেন, 'গণপরিবহণে দৈনিক হাজিরা দিলে টাকা পাই। যেহেতু বাস বন্ধ, তাই হাজিরাও বন্ধ। ফলে রিকশা চালিয়ে যা আয় হয়, তা দিয়েই স্ত্রী-সন্তান নিয়ে খেয়ে বেঁচে আছি।' উবার চালক ইসহাক আলী বলেন, '২৬ মার্চ থেকে রাইড শেয়ারিং বন্ধ রয়েছে। ফলে বিপাকে পড়েছি পরিবার নিয়ে। প্রতিদিন যে আয় হতো সেটা দিয়েই পরিবারের খরচ চলত। রাইড শেয়ারিং না থাকায় ক'দিন ধরে কারওয়ান বাজার থেকে ডাব কিনে বিক্রি করছি।' বাস মালিক এবিএম রুহুল বলেন, 'শ্রমিকরা যেমন বেকার হয়ে পড়েছে, ঠিক তেমনি মালিকরাও বিপাকে। করোনার কারণে যানবাহন না চলায় ব্যাংক ঋণের কেনা গাড়ির কিস্তির টাকা কীভাবে পরিশোধ করব সেই চিন্তাও রয়েছে। শ্রমিকদের কষ্ট দেখে আমাদেরও খারাপ লাগে, কিন্তু বাস বন্ধ থাকায় আমরাও বিপদে। তাই তাদের সাহায্য করার ইচ্ছে থাকলেও পারি না।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে