বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সাহায্যের ত্রাণই বাড়িয়ে দিল চালের দাম

করোনাভাইরাসের কারণে কষ্টে থাকা গরিব মানুষের পাশে অনেকে দাঁড়াচ্ছেন। গরিব মানুষকে ত্রাণ হিসেবে মোটা চাল দিচ্ছেন। এ কারণে মোটা চালের চাহিদা বেড়ে গেছে। আর চাহিদা বাড়ার কারণে দামও বেড়ে গেছে
যাযাদি রিপোর্ট
  ০৯ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়া চিকন চালের দাম কিছুটা কমেছে। তবে দাম আরও বেড়েছে গরিবের মোটা চালের। বুধবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনাভাইরাসের কারণে কষ্টে থাকা গরিব মানুষের পাশে অনেকে দাঁড়াচ্ছেন। তারা গরিব মানুষকে ত্রাণ হিসেবে মোটা চাল দিচ্ছেন। এ কারণে মোটা চালের চাহিদা বেড়ে গেছে। আর চাহিদা বাড়ার কারণে দামও বেড়ে গেছে।

অপরদিকে, যারা চিকন চাল কিনে খান তাদের বড় অংশই করোনাভাইরাস আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার পর পরই বেশি পরিমাণে কিনে বাসায় মজুদ করেছেন। যে কারণে চিকন চালের চাহিদা কিছুটা কমেছে। এছাড়া কিছু ব্যবসায়ী কয়েকদিন চিকন চালের সরবরাহ বন্ধ রেখেছিলেন। এখন বাজারে সেই ব্যবসায়ীদের চাল আসছে। এ কারণেই দাম কিছুটা কমেছে- এমনটাই জানিয়েছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।

চালের খুচরা ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে মিনিকেট ও নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে; যা এক সপ্তাহ আগেও ছিল ৬০ থেকে ৬৮ টাকা কেজি। আর করোনাভাইরাস আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার আগে ছিল ৫২ থেকে ৫৬ টাকা কেজি। অর্থাৎ চিকন চালের দাম কিছুটা কমলেও, তা এখনো করোনা আতঙ্কের আগের থেকে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে, গরিবের চাল হিসেবে পরিচিত মোটা চাল এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৪ থেকে ৪৬ টাকা কেজি দরে, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৩৮ থেকে ৪০ টাকা। আর করোনাভাইরাস আতঙ্কের আগে ছিল ৩২ থেকে ৩৫ টাকা। অবশ্য মাঝারি মানের চাল গত সপ্তাহের মতো ৫০ থেকে ৫২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে করোনা আতঙ্কের আগে এ চালের কেজি ছিল ৪২ থেকে ৪৫ টাকা।

খুচরা ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্যের মতো সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যেও সপ্তাহের ব্যবধানে চিকন চালের দাম কমেছে এবং মোটা চালের দাম বেড়েছে। তবে চিকন ও মোট কোনো চালের ক্ষেত্রেই খুচরা ব্যবসায়ীদের দেওয়া দাম এবং টিসিবির দামের মধ্যে মিল নেই।

টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, ৭ এপ্রিল রাজধানীর খুচরা বাজারে মিনিকেট ও নাজির চালের কেজি বিক্রি হয় ৫৫ থেকে ৬৫ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৬০ থেকে ৬৮ টাকা। আর এক মাস আগে ছিল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা।

সরকারি এই প্রতিষ্ঠানের তথ্য অনুযায়ী, এখন মাঝারি মানের চালের কেজি ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগে ৫০ থেকে ৫৬ টাকা এবং এক মাস আগে ৪৬ থেকে ৪৮ টাকা ছিল। আর মোটা চালের কেজি এখন বিক্রি হচ্ছে ৪২ থেকে ৫০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ৪০ থেকে ৫০ টাকা এবং এক মাস আগে ৩৪ থেকে ৩৮ টাকা কেজি বিক্রি হয়।

খিলগাঁওয়ের ব্যবসায়ী মো. জানে আলম ভূঁইয়া বলেন, বাজারে এখন মিনিকেট চালের সরবরাহ বেড়েছে। রশিদের মিনিকেট কিছুদিন আসা বন্ধ ছিল, এখন আবার আসা শুরু হয়েছে। তবে আগের মতো মিনিকেট চালের চাহিদা নেই। এছাড়া চলের বাড়তি দামের কারণের্ যাবও অভিযান চালিয়েছে। এসব কারণে চিকন চালের দাম কিছুটা কমেছে।

এই ব্যবসায়ী বলেন, 'করোনা আতঙ্কের আগে রশিদের ২৫ কেজি মিনিকেট চালের বস্তা ১৩৫০ টাকা বিক্রি করেছি। করোনা আতঙ্কের মধ্যে দাম এক লাফে বেড়ে হয় ১৫০০ টাকা হয়। তবে এখন ১৪৫০ থেকে ১৪৭০ টাকা বিক্রি করছি। এভাবে সব ধরনের মিনিকেট চালের দাম কেজিতে এক থেকে দুই টাকা কমেছে।'

মোটা চালের দামের বিষয়ে এই ব্যবসায়ী বলেন, চিকন চালের দাম কিছুটা কমলেও এখন মোটা চালের দাম বেড়েছে। এখন বাজারে মোটা চালের অনেক চাহিদা। এর অন্যতম কারণ যারা ত্রাণ দিচ্ছেন, তারা এই চাল কিনছেন। যে কারণে সপ্তাহের ব্যবধানে মোটা চালের দাম কেজিতে ৮ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আর মাসের ব্যবধানে ১৫ টাকার মতো বেড়ছে। আগে যে মোটা চাল ৩২ থেকে ৩৪ টাকায় বিক্রি করেছি এখন তা ৪৬ টাকা কেজি বিক্রি করতে হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগেও এই চাল ৩৮ টাকা কেজি বিক্রি করেছি। কিছু ক্ষেত্রে ৩৬ টাকা কেজিও বিক্রি করেছি।

টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, এখন খুচরা বাজারে মোটা চাল ৪২ টাকা কেজি দরে পাওয়া যাচ্ছে, এই তথ্য তুলে ধরা হলে জানে আলম বলেন, 'টিসিবি কোথায় এই তথ্য পেয়েছে তা আমরা বলতে পারব না। এখন কোথাও মোটা চালের কেজি ৪৪ টাকার নিচে নেই। এটা হয়তো এক সপ্তাহ আগের দাম।'

রামপুরার ব্যবসায়ী জুয়েল বলেন, করোনা আতঙ্কে চালের দাম বেড়ে যাওয়ার পর কিছুদিন দাম স্থির ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে মোটা চালের দাম আবার বাড়ছে। এক সপ্তাহ আগেও যে মোটা চাল ৩৮ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে, তা এখন ৪৬ টাকা হয়েছে। তবে চিকন চালের দাম কিছুটা কমেছে। আগে যে মিনিকেট চালের কেজি ৬০ টাকা বিক্রি করেছি, এখন তা ৫৬ থেকে ৫৮ টাকা কেজিতে বিক্রি করছি।

এই ব্যবসায়ী বলেন,র্ যাবের অভিযানের পর বাজারে চিকন চালের সরবরাহ কিছুটা বেড়েছে। তবে করোনা আতঙ্কের আগে চালের সরবরাহ যেমন ছিল, এখন তার থেকে অনেক কম। এরপরও মিনিকেট চালের দাম কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু মোটা চালের দাম বেড়ে গেছে। এর কারণ হিসেবে আড়তের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন- মোটা চালের এখন অনেক চাহিদা, সরবরাহ দিয়ে পারছেন না। মিল থেকে অনেক বেশি দামে মোটা চাল কিনতে হচ্ছে। এ কারণে দাম বাড়তি।

এই ব্যবসায়ী আরও বলেন, এখন মোটা চালের দাম বাড়লেও আমাদের ধারণা নতুন ধান ওঠার পর দাম কিছুটা কমতে পারে। তখন শুধু মোটা চলের দাম না, চিকন চালের দামও কমবে। কিন্তু নতুন চাল আসতে এখনো এক-দেড় মাস লাগবে। এই এক-দেড় মাসে চালের দাম আরও বেড়ে যায় কি না সন্দেহ আছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<95796 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1