বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে অন্তত আশিজন প্রবাসী বা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্যক্তির মৃতু্য হয়েছে বলে জানাচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই মৃত বাংলাদেশির সংখ্যা ৬৩ জন ছাড়িয়েছে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
যুক্তরাষ্ট্রসহ করোনাভাইরাসে যেসব দেশে বাংলাদেশি মারা গেছেন সেটার একটা তালিকা করা হচ্ছে বলে বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন।
তিনি বলেন, 'সংখ্যাটা প্রতিদিন বাড়ছে।'
প্রতিদিনই বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের যে কূটনৈতিক দপ্তর আছে সেসব জায়গা থেকে খবর আসছে নতুন করে কেউ না কেউ আক্রান্ত হচ্ছেন অথবা মারা যাচ্ছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে।
'আমরা তালিকাটা করছি। প্রতিদিনই বিভিন্ন দেশের মিশনগুলো এটা করেছে এবং তারা আমাদের তালিকা জানাচ্ছে,' বলছেন মি. আব্দুল মোমেন।
যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সংখ্যাটা সবচেয়ে উদ্বেগজনক।
কোন দেশে কতজন বাংলাদেশি মারা গেছেন: যুক্তরাষ্ট্রে মারা গেছেন কমপক্ষে ৬৩ জন, যুক্তরাজ্যে মারা গেছেন ১১ জন, সৌদি আরবে ৫ জন, কাতারে ২ জন, ইতালিতে ২ জন, স্পেনে ১ জন, গাম্বিয়ায় ১ জন।
ইতালি ও যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসীরা আতঙ্কে
যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানে আছেন জাহিদ শিবলি, তিনি বলছেন, শুরু থেকে কেউই বিষয়টিকে পাত্তা দেয়নি। বাংলাদেশিরাও না। এখন সবাই গুরুতরভাবে দেখছে করোনাভাইরাসকে।
বাইরে বের হলে এক হাজার ডলারের জরিমানাও করা হচ্ছে যদি আপনি কোনো শক্ত কারণ দেখাতে না পারেন।
ওদিকে নর্থ ডাকোটার অবস্থা বেশ ভালো বলছেন সাফিন জাহিদ।
তিনি বলেন, 'এখানে বাঙালির সংখ্যা ১০০'রও নিচে। প্রথম করোনা রোগী পাওয়া যায় এখানে গেল ৩০ মার্চ। আর এখন এর সংখ্যা ১১ জন। শেষ ২৪ ঘণ্টায় ১ জন বেড়েছে। আর পুরো আমাদের এখানে গেল ২ সপ্তাহ ধরে মানুষ সচেতনভাবে চলাচল করছে।'
যুক্তরাজ্যের লন্ডনে বাস করে বাংলাদেশি দম্পতি জিয়াউর রহমান ও সানিয়া শাম্মি।
এখন পর্যন্ত তারা সম্পূর্ণ গৃহবন্দি অবস্থায় আছেন বলে জানিয়েছেন বিবিসি বাংলাকে।
নির্দিষ্ট পরিমাণে খাবার বাসায় কিনে এখন ঘরে সময় কাটাচ্ছেন।
যদিও যুক্তরাজ্য পুরোপুরি লকডাউন ঘোষণা করেনি তবু তারা সতর্কতা হিসেবে কোনো ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না।
জার্মানির বাদেন উর্টেমবুর্গ স্টেটের হাইডেলবার্গে আছেন তাইশা তাশরিন। তিনি বলেন, তিনি আশা করছেন জার্মানিতে ইস্টারের পর কড়াকড়ি কিছুটা শিথিল করা হবে।
হাইডেলবর্গের অবস্থা তিনি বর্ণনা করেন এভাবে, 'নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দোকান বাদে সব বন্ধ। সুপারমার্কেটে পর্যাপ্ত খাবার আসছে। সময়মতো গেলে টয়লেট পেপারও পাওয়া যায়। মনে হচ্ছে মানুষ প্রাথমিক ধাক্কাটা কাটিয়ে ঘরে থাকায় অভ্যস্ত হচ্ছে।'
করোনাভাইরাসের অন্যতম কেন্দ্র ইতালির রোমে বাস করেন শানু হাসান, তিনি বলেন, শুধু রোম নয়, পুরো ইতালিতে বাংলাদেশিরা অন্য জায়গার তুলনায় ভালো আছেন।
তবে ইতালির আরেক শহর উদিনে আছেন সুলতান মাহমুদ লিখন, তিনি বলেন বাংলাদেশিরা এখনো তেমনভাবে আক্রান্ত না হলেও মানসিকভাবে খারাপ সময় পার করছেন তিনি ও তার পরিবার।
ইতালিতে কাজ করা বাংলাদেশি ওষুধ গবেষক এ, এইচ, এম, সাইফুদ্দিন বলেন, 'চোখের সামনে প্রতিদিন লাশ দেখে সুস্থ ও স্বাভাবিক থাকা যায় না। এরপরও নিজেকে সান্ত্বনা দেই নিজের দেশ, পরিবারের কথা ভেবে। কিন্তু বাংলাদেশের ক্রমান্বয়ে বাজে অবস্থা খুবই পীড়া দিচ্ছে।'