শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

না.গঞ্জ ও নড়িয়ায় দুজনের মৃতু্য, বাড়ি লকডাউন

যাযাদি ডেস্ক
  ০৬ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা ও শরীয়তপুরের নড়িয়ায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দুজন মারা গেছেন। তাদের মৃতু্যর খবরে স্থানীয় প্রশাসন নারায়ণগঞ্জে ৩০০ ও নড়িয়ায় ৩৫টি বাড়ি লকডাউন করে দিয়েছে।

আমাদের প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো খবর :

নারায়ণগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জে করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃতু্য খবর এসেছে। সদর উপজেলার ৫৫ বছর বয়সি এ ব্যক্তির মৃতু্যর খবর পেয়ে শনিবার রাত ১টার দিকে কাশিপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের বাংলাবাজার বড় আমবাগান (সুচিন্তাপুর) লকডাউন করে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

শনিবার সকালে রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃতু্য হয়। এ নিয়ে নারায়ণগঞ্জে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এ জেলায় দুজনের মৃতু্য হলো।

জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইমতিয়াজ বলেন, 'করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও এক ব্যক্তির মৃতু্য হয়েছে। এ নিয়ে নারায়ণগঞ্জে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দুজনের মৃতু্য হলো।'

ওই ব্যক্তি নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কাশীপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা।

এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদা বারিক বলেন, 'ওই এলাকা লকডাউন করে দেওয়া হয়েছে। লকডাউন এলাকায় ৩শ বাড়ি রয়েছে। এ এলাকা থেকে কেউ বের হতে পারবে না, কেউ আসতেও পারবে না। তারা পুলিশ পাহারায় থাকবে।'

তাদের প্রয়োজনীয় সব কিছু সরবরাহ করবে প্রশাসন বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে জেলা করোনাভাইরাস বিষয়ক ফোকাল পারসন নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম জানান, গত বৃহস্পতিবার জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে কাশিপুর এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী ওই ব্যক্তিকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন স্বজনরা। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার সকালে তার মৃতু্য হয়।

তিনি আরও বলেন, 'আইইডিসিআরে পরীক্ষায় মৃত ওই রোগীর করোনাভাইরাস পজেটিভ রিপোর্ট আসে। পরে দুপুরে আইইডিসিআরে তত্ত্বাবধানে রাজধানীর খিলগাঁও কবরস্থানে ওই ব্যক্তির লাশ দাফন করা হয়েছে।'

ইউএনও নাহিদা বারিকের নেতৃত্বে লকডাউনকালে উপস্থিত ছিলেন উপজলো স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) হাসান বিন মোহাম্মদ আলী।

গত ৩০ মার্চ নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার রসুলবাগে ৪৫ বছর বয়সি নারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। পরিবার তার লাশ এলাকায় এনে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করেন। ওই নারী আইইডিসিআরে পরীক্ষায় বৃহস্পতিবার করোনাভাইরাস পজেটিভ আসায় গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে বন্দর উপজেলার রসুলবাগ লকডাউন করে উপজেলা প্রশাসন।

নড়িয়া (শরীয়তপুর) : করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে শনিবার যে দুজন মারা গেছেন তাদের মধ্যে একজনের বাড়ি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায়। ৯০ বছর বয়সি ওই ব্যক্তির মৃতু্যর খবরে স্থানীয় প্রশাসন ৩৫টি বাড়ি লকডাউন করে দিয়েছে। হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে ওই সব বাড়ির ২০২ জনকে। উপজেলার সব হাটুবাজার লকডাউন করা হয়েছে।

এদিকে নড়িয়ায় করোনাভাইরাসের উপস্থিতি থাকায় ব্যাপক সংক্রমণের আশঙ্কা করছে স্থানীয় প্রশাসন। শনিবার রাত থেকে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সব গ্রামে গণবিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হচ্ছে। স্থানীয় জনসাধারণকে ঘরের বাইরে না যাওয়ার অনুরোধ করা হচ্ছে। স্থানীয় লোকজন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির বাড়ি ও আশপাশের ৩৩টি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। এছাড়া পাশের উপজেলায় ওই ব্যক্তির মেয়ে ও বোনের বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। এসব বাড়ির সদস্যদের নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করতে হবে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নড়িয়া উপজেলার কেউ যেন ঘর থেকে বের না হন- মাইকিং করে তা জানাতে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও পৌরমেয়রদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যেহেতু মৃত ব্যক্তি নড়িয়ার অনেক মানুষের সংস্পর্শে এসেছিলেন, তাই এর সংক্রমণ ব্যাপক হওয়ার আশঙ্কা আছে।

ঘড়িসার বাজারের মুদি দোকানি বাবুল বৈদ্য বলেন, 'আমাদের পাশের গ্রামের লোক মারা গেছেন। এলাকার মানুষ আতঙ্কে আছেন।'

নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, ওই ব্যক্তিকে তার স্বজনেরা গত বুধবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে নিয়ে আসেন। তার অসুস্থতার লক্ষণ শুনে ঢাকার নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে রেফার করা হয়। স্বজনেরা তাকে সেখানে ভর্তি করেন। সেখান থেকে আবার তাকে মহাখালীর বক্ষব্যাধি হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে করোনাভাইরাসে সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিলে তাকে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার তিনি মারা যান।

এই কর্মকর্তা জানান, ওই ব্যক্তির এক ছেলে কয়েক মাস আগে ইতালি থেকে দেশে আসেন। তিনি মাসখানেক আগে ঢাকার মিরপুরে ছেলের বাসায় বেড়াতে যান। গত ২৬ মার্চ তিনি নড়িয়ায় ফিরেন। তিনি ঢাকা থেকে আক্রান্ত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি যে মসজিদে নামাজ আদায় করতেন, সেখানে কারা তার সংস্পর্শ এসেছেন, সেসব তথ্য সংগ্রহ করে তাদের ওপর নজরদারি বাড়াতে হবে। এছাড়া তিনি হাট-বাজার ও আত্মীয়-স্বজনের বাড়িও যেতেন।

নড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান বলেন, 'ওই ব্যক্তির ছেলেরা বিভিন্ন হাট-বাজারে ব্যবসা করেন। এ কারণে নড়িয়ার সব হাট-বাজারের ওপর আমরা নজর রাখছি। লকডাউন বাস্তবায়ন করার জন্য বিভিন্ন স্থানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<95447 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1