বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যবসায়ীদের জন্য ঋণ প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী

যাযাদি রিপোর্ট
  ০৬ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজকে 'ঋণের প্যাকেজ' হিসেবে অভিহিত করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনের পর বিকালে উত্তরার বাসায় এক সংবাদ ব্রিফিঙে বিএনপি মহাসচিব এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্যাকেজটি তখনই পজিটিভ বলা যেত যদি দেখা যেত আসল সমস্যার সমাধান করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই প্যাকেজে সাধারণ মানুষ, খেটে খাওয়া মানুষ ও ইনফরমাল সেক্টরের কৃষকদের কোনো কথা নেই। এই ৭২ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজই তো ঋণ, পুরোটাই ঋণ। এখানে অনুদান বলতে কিছু নেই। সব ঋণের প্যাকেজ।

খেটে খাওয়া মানুষের কথা উলেস্নখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, যারা 'দিন আনে দিন খায়' গরিব মানুষের জন্য সরকারকে ১৫ হাজার কোটি টাকা দেওয়ার কথা বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল। সুনির্দিষ্টভাবে ভাতা বাড়াতে, চিকিৎসক-নার্স, চিকিৎসাকর্মীদের প্রণোদনা দিতে, স্বাস্থ্য খাতে প্রণোদনা বাড়াতে বলা হয়েছিল। কিন্তু অত্যন্ত জরুরি, সেই বিষয়গুলো সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী সেইভাবে কথা বলেননি। 'দিন আনে দিন খায়'-এই শ্রেণির মানুষের সংখ্যা বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি। আনফরচুনেটলি সেই সেক্টরের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের মধ্যে কোথাও, তার প্যাকেজের মধ্যে কোথাও সেই ধরনের কিছু দেখা যায়নি। এছাড়া রেমিট্যান্স যারা পাঠান তাদের কোনো কথা এই প্রণোদনা প্যাকেজে নেই। গার্মেন্ট খাতের প্রণোদনা শ্রমিকদের কাছে যাবে কিনা তাও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে স্পষ্ট নয়।

স্বাস্থ্য খাতের বিষয়ে প্যাকেজে কোনো কথা নেই উলেস্নখ করে তিনি বলেন, হেলথ সেক্টরটা একেবারেই নেগলেটেড, কোনো কথাই বলা হয়নি এখানে। ডাবিস্নউএইচও প্রধান বারবার বলছেন, সবচেয়ে দরকার পরীক্ষা। অথচ বাংলাদেশে এখন পরীক্ষা নেই। সব জায়গাতেই বলা হচ্ছে এখানে হবে না। ভেন্টিলেটর কত আছে আপনারা জানেন। আরও বেশি সেটা তৈরি করার কোনো কথা প্রণোদনা প্যাকেজে নেই। সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হচ্ছে, হেলথ ডিপার্টমেন্টের মধ্যে পারস্পরিক যে সমন্বয় থাকা দরকার সেটা ঠিক নেই। ডিজি হেলথ এক কথা বলছেন, আইইডিসিআরের ডিজি আরেক কথা বলছেন আর স্বাস্থ্যমন্ত্রী তো আরও ভীষণ কথা বলছেন। যেসব কথা শুনলে মনে হবে না দেশে কোনো ভাইরাস নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। প্রশ্নগুলো এখানে হাউ উই লুকিং টু দি থিংকস। আপনারা কী বুঝতে পারছেন না, সারা পৃথিবী গ্রেট ডিপ্রেশনের দিকে যাচ্ছে। সেই বিষয়গুলো সরকারের যদি দায়িত্ববোধ না থাকে তাহলে এই রাষ্ট্র কিভাবে টিকে থাকবে এটা বোধগম্য নয়।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, করোনাভাইরাস মানবসভ্যতার জন্য একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই চ্যালেঞ্জটা মোকাবিলা করার জন্য বিএনপিসহ সবাই হাত বাড়িয়ে আছে, সবাই উদ্যোগী আছে। তারপরেও তারা বলছেন, বিএনপি নাকি দায়িত্বজ্ঞানহীন-কান্ডজ্ঞানহীনের মতো কথা বলছে। কোথায় দেখালেন তারা এসব? বিএনপি তো ২৭ দফা দিয়েছে। তার বর্ণনা দিয়েছি। প্রত্যেকটা বিষয় যুক্তিসঙ্গতভাবে বলেছে।

মির্জা আলমগীর বলেন, সরকার দুর্ভাগ্যজনকভাবে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে এই করোনাভাইরাসকে মোকাবিলার জন্য। যেই মানসিকতার দরকার ছিল তা করার জন্য ব্যর্থ হয়েছে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এখন পরিপূর্ণ লকডাউন করা উচিত। দ্যাট ইজ দ্যা অনলি এনসার। যে ভয়াবহতা আসছে, এখনো রিয়েলাইজ করতে পারছে না তারা। ২৭ দিন হয়ে গেছে। অলরেডি কিন্তু গতকালের (শনিবার) চেয়ে আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। এটা জ্যামিতিক হারে বাড়বেই। ওই জিনিসটা যদি উপলব্ধি করা যায় তাহলে ঐক্যবদ্ধভাবে ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করে যেভাবে দেশ স্বাধীন করা সম্ভব হয়েছিল ওইভাবে সবকিছু মোকাবিলা করা যাবে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, একটা পত্রিকায় রিপোর্ট বেরিয়েছে যে, ৮৭ শতাংশ হাসপাতালে সাধারণ চিকিৎসা নেই। যেমন আপনার অ্যাপেনডিসাইটিজ হলো, আপনি চাইবেন যে, ডাক্তারের কাছে গিয়ে আলট্রাসোনোগ্রাম করা হোক, সেটা আপনি পাবেন না। আপনার হার্ট অ্যাটাক হলো হাসপাতালে গেলে চিকিৎসা পাবেন না। জাস্ট ফ্যাক্ট। এই বিষয়গুলো সরকার নজর দিচ্ছে বলে দৃশ্যমান কিছু দেখা যাচ্ছে না। অন্যদিকে সমন্বয় কোনোখানেই নেই। এই বিষয়গুলো জনগণের মধ্যে অনাস্থা তৈরি করেছে এবং প্রথম দিক থেকে প্রত্যেকটা ইসু্যতে কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের আস্থা এই সরকারের ওপর থেকে প্রায় চলে গেছে।

করোনা মোকাবিলায় বিএনপি নেতারা ঘরে বসে শুধু অভিযোগ করছে, করোনা মোকাবিলায় তাদের ভূমিকা নেই বলে আওয়ামী লীগ নেতারা যেসব মন্তব্য করেছেন তার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, এই ধরনের বক্তব্যের একটাই প্রতিক্রিয়া হলো- দায়িত্ব সম্পূর্ণ সরকারের। ইতিমধ্যে বিএনপি নেতাকর্মীদের যতটুকু নিরাপত্তার মধ্যে রেখে নেতাকর্মীরা কর্মজীবী দুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তারা খাবার দিচ্ছেন, তারা মাস্ক দিচ্ছেন। সিলেটে মেয়র জানেন, তিনি বৃহত আকারে খাবার নিয়ে মানুষের পাশে যাচ্ছেন, প্রত্যেকটা জেলা, প্রত্যেকটা উপজেলা, প্রত্যেকটা ইউনিয়নে বিএনপি নেতা-কর্মীরা কাজ করছেন। ফলে আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্য সঠিক নয়, এসব অলীক অভিযোগ। এখন কী অভিযোগ করা সঠিক?'

তিনি বলেন, বিএনপি করোনার মহাদুর্যোগ মোকাবিলায় অর্থনৈতিক কিছু আবেদন রেখেছে। তার প্রতিউত্তরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেব যে বক্তব্য দিয়েছেন, যে মন্তব্যগুলো করেছেন, এটা আশা করিনি, তার মতো একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এই ধরনের মন্তব্য করবেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<95442 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1