বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীতে দুধের বাজারে 'শনির দশা'

যাযাদি রিপোর্ট
  ০৪ এপ্রিল ২০২০, ০০:০০

নভেল করোনাভাইরাসের প্রকোপে 'লকডাউন' পরিস্থিতিতে রাজধানীর দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত পণ্যের ব্যবসায়ীদেরও মাথায় হাত পড়েছে।

এমন অবস্থায় পণ্যবাহী যান চলাচলের নির্দেশনা থাকলেও টানা ১০ দিন ধরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বলতে গেলে খামারিদের দুধ রাজধানীতে আসছেই না। ছিটেফোঁটা যাও আসে, মিষ্টির দোকানগুলো বন্ধ থাকায় সেটুকু বেচতেও ক্রেতার অপেক্ষায় হা-পিত্যেশ করতে হয় ব্যবসায়ীদের।

শুক্রবার বিকালে পুরান ঢাকার রথখোলায় দুধের আড়ৎগুলোতে দেখা গেছে বড় বড় বালতি-গামলা, পস্নাস্টিকের খালি ড্রাম পড়ে আছে। রাজধানীর আশপাশ থেকে ছোট খামার থেকে আসা দুই-তিনটি ড্রাম ভর্তি দুধ নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে আছেন বিক্রেতারা। সেখানে দেড় ঘণ্টায় মাত্র চারজন খুচরা ক্রেতাকে দেখা গেছে।

অথচ ১৩/১৪ দিন আগেও সকাল-বিকাল ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাকে সরব থাকত রথখোলা। আড়তের সামনেই ছোট পিকআপ ও রিকশাভ্যান থেকে নামত দুধভর্তি ড্রাম।

রথখোলা দুগ্ধ আড়তের ব্যবসায়ী সেলিম পারভেজ বলেন, 'দুধের বাজারে আকাল পড়েছে, শনি লেগেছে। করোনার কারণে খামারিদের দুধ আসছে না, যেটুকু আসছে তা আবার বিক্রিও করতে পারছি না। বসে আছি সকাল থেকে।'

তিনি জানান, করোনাভাইরাসের প্রকোপের আগে প্রতিদিন এই আড়তে একশ মণের বেশি দুধ বিক্রি হতো। এখন বিক্রি হচ্ছে গড়পড়তায় দুই-তিন মণ।

লালজি ঘোষের আড়তের মোহাম্মদ আলী বলেন, 'শহরের সব মিষ্টির দোকান বন্ধ, বিয়ে-শাদি বন্ধ, অনুষ্ঠান নেই। সরবারহও নেই, চাহিদাও নেই। সব মিলিয়ে দুধের বাজারে মন্দা পড়ছে। করোনাই আমাদের অন্ধকারে ফেলেছে। জানি না কী হবে সামনে। পেরেশানিতে আছি।'

যতটুকু দুধ এখন আড়তে আসে তা কীভাবে বিক্রি হয় জানতে চাইলে বিক্রেতা গোপাল ঘোষ বলেন, 'পুরান ঢাকার বাসিন্দরাই কিনে নিয়ে যান। তারা খুচরা ক্রেতা। আগে খুচরা সেখানে ৭৫/৭৫ টাকা কেজি ছিল এখন ৬০/৬৫ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।'

'মিষ্টির দোকান সব বন্ধ হওয়ার কারণে বড় ক্রেতা এখন আসছে না,' বলেন তিনি।

বিকালের দিকে চার লিটার দুধ কিনতে আসেন নবাবপুরের বাসিন্দা আবদুল হামিদ।

তিনি বলেন, 'রথখোলার দুধে ভেজাল নেই। সেজন্য প্রতিদিন আমার বাসার জন্য চার লিটার দুধ নিয়ে যাই। দুধ বিক্রি কম বলে এখন কিছুটা কম দামে কিনতে পারছি।'

রথখোলার দুগ্ধ আড়তে মূলত কেরানীগঞ্জ, সাভার, দোহার, মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ থেকে দুধ আসে। এখানকার ব্যবসায়ীরা জানালেন, করোনাভাইরাসের কারণে সরকার ছুটি ঘোষণা করায় মফস্বলে এখন পানির দরে দুধ বিক্রি হচ্ছে। কারণ পরিবহণ বন্ধ থাকায় ছোট খামারিরা ঢাকায় দুধ পাঠাতে পারছেন না।

দুধ বিক্রেতা কল্যাণ ঘোষ বলেন, 'আমি যতটুকু জানি, ছোট খামারিরা দুর্দশার মধ্যে আছে। আজকে সকালেও কেরানীগঞ্জে মোবাইলে কথা হয়েছে। গ্রামে ৪০/৪২ টাকার দুধ বিক্রি হচ্ছে ২০/২৫ টাকায়। বোঝেন দুধ ব্যবসার কি অবস্থা!'

'গোয়ালারা যদি ঢাকায় দুধ নিয়ে আসতে পারত, কিছুটা দাম পেত। কিন্তু সেটাতো হচ্ছে না। ট্রাক চলে না,' বলেন এই ব্যবসায়ী।

দুধের সঙ্কটের কথা জানিয়েছেন মিষ্টি ব্যবসায়ীরাও।

রথখোলা দুগ্ধ আড়তের কাছে রয়েছে আদি মরণচাঁন ঘোষসহ কয়েকটি মিষ্টির দোকান। সদরঘাট থেকে ইংলিশ রোড, নয়াবাজারসহ পুরান ঢাকার সব মিষ্টির দোকান বন্ধ রয়েছে। শান্তিনগরের মোড় জলখাবার, ফকিরেরপুলের পানি ট্যাংকির কাছে মুসলিম সুইটসসহ রামপুরা, কাকরাইল, মৌচাক, রাজারবাগ প্রভৃতি জায়গায় ঘুরেও কোনো মিষ্টির দোকান খোলা পাওয়া যায়নি।

ফকিরেরপুলের কাছে ফুলকলি মিষ্টির দোকান খোলা পাওয়া গেলেও মিষ্টির পাত্রগুলো খালি দেখা গেছে। সেখানে শুধু বেকারি পণ্য বিক্রি হচ্ছে।

ফুলকলির কর্মী আনিস জানালেন, মিষ্টি বিক্রি হয় না, তাই তৈরিও হয় না।

মিষ্টি কেন তৈরি হচ্ছে না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'দুধের সংকট। ঢাকায় তো খামারিরা দুধ পাঠাতে পারছে না। দুধ না পেলে মিষ্টি বানাবে কীভাবে? দুধের আড়তে যান স্যার। দেখবেন কি করুণ অবস্থা।'

এই সঙ্কটের মধ্যেও মিষ্টির রসনা নিতে না পেরে আক্ষেপ ঝরেছে অনেকের।

বেইলি রোডের নওরতন কলোনির বাসিন্দা আবিদা সুলতানা জানালেন, তিনি কিংবা তার স্বামী প্রায়ই অফিস থেকে ফেরার পথে মিষ্টি কিনতেন।

'এখন আর সেটা হচ্ছে না। মিষ্টির দোকান সবই বন্ধ। বাচ্চারা ফ্রিজ খুলে মিষ্টি নেই দেখে মন খারাপ করে। কিছু করারও নেই।'

শান্তিনগরের বাজারের পাশে 'জলখাবার' ছাড়াও কয়েকটি মিষ্টির দোকান আছে; সবগুলোই বন্ধ।

শান্তিনগরে বাজার করতে আসা আমিনুল ইসলাম বলেন, 'বাজার খোলা আছে, ওষুধের দোকান খোলা আছে এমনকি বেকারি কোথাও কোথাও খোলা আছে।' তাহলে মিষ্টির দোকান খোলা রাখলে ক্ষতি কী- প্রশ্ন তার।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<95222 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1