শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কারখানা বন্ধ হবে কি না, সরকারের মুখ চেয়ে মালিকরা

যাযাদি রিপোর্ট
  ২৫ মার্চ ২০২০, ০০:০০
কর্মরত কয়েকজন গার্মেন্টশ্রমিক

নভেল করোনাভাইরাসের মহামারি ছড়ানো ঠেকাতে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে নিজেরা কারখানা বন্ধ করে দিতে চান না শিল্প মালিকরা; সরকারের সর্বোচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন তারা।

কারখানা বন্ধ হলে দেশের প্রধান শিল্পখাত তৈরি পোশাকের প্রায় অর্ধ কোটিসহ অন্যান্য খাতের লাখ লাখ শ্রমিকের খাওয়া-পরার চিন্তার সঙ্গে তাদের গ্রামে ফেরার ঢল নামলে তা ভাইরাসের সংক্রমণ উসকে দেবে কিনা সেই চিন্তাও তারা করছেন।

কয়েকটি শ্রমিক সংগঠন শ্রমিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনা করে তাদের সবেতনে ছুটি দেওয়ার দাবি জানালেও বিদেশি ক্রেতাদের কোটি কোটি ডলারের ক্রয়াদেশ বাতিলের কারণে ক্ষতির মুখে পড়া শিল্প মালিকরা সরকারের সহায়তা ছাড়া এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে চান না।

সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সংক্রমণের ঝুঁকিগুলো মাথায় রেখে শ্রমিকদের হাত ধোয়াসহ বিভিন্ন সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিয়ে প্রতিদিনই তার নজরদারি করা হচ্ছে বলে বেশ কয়েকজন কারখানা মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

দেশের শিল্প মালিক ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম জানান, কারখানা বন্ধের ক্ষেত্রে সরকারের একটি 'বড় পরিকল্পনা' হাতে পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন তারা।

তিনি বলেন, 'কারখানা ছাড়াও বিভিন্ন খাতে অনেক অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিক কাজ করছেন, তাদের নিয়েও ভাবা হচ্ছে। লাখ লাখ শ্রমিককে ছুটি দেওয়ার পর তারা যদি গ্রামের বাড়ির দিকে যাত্রা করে এতে করে কী ধরনের ফলাফল হতে পারে তার ভালো মন্দ নিয়ে ভাবা হচ্ছে।'

'পাশাপাশি এতগুলো কর্মহীন মানুষের ভবিষ্যৎ...আবার কবে উৎপাদন শুরু করা যাবে তা নিয়েও চিন্তা করা হচ্ছে। এই পরিকল্পনাটা অ্যাসোসিয়েশন কিংবা মালিক সমিতি নিজেরা না নিয়ে সরকারের দ্বারস্থ হয়েছে। কারণ একটি কেন্দ্রীয় নির্দেশনাই বর্তমান পরিস্থিতিতে কেবল শৃঙ্খলা ধরে রাখতে পারে।'

বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় শিল্প খাত তৈরি পোশাক। এই খাত থেকে বছরে রপ্তানি আয় চার হাজার কোটি ডলারের বেশি, যা মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৫ শতাংশ। বাংলাদেশের প্রায় সাড়ে চার হাজার কারখানার তৈরি পোশাক বিক্রিতে বিদেশি ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলোর ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল।

গত বছরের ডিসেম্বরে চীন থেকে নভেল করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে ইউরোপ ও আমেরিকাজুড়ে একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলোর আউটলেট। রোববার পর্যন্ত বিদেশি ক্রেতারা অন্তত ১৪৮ কোটি ডলারের তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশ বাতিল করেছে।

এতে প্রায় ১২ লাখ শ্রমিক নিয়ে চলমান এক হাজার ৮৯টি তৈরি পোশাক কারখানা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ জানিয়েছে।

সংগঠনটির সভাপতি রুবানা হক কারখানা বন্ধের প্রশ্নে সোমবার বলেন, 'কারখানা বন্ধের বিষয়ে প্রতিটি কারখানার মালিক নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেবেন অথবা সরকার এ বিষয়ে একটি রূপরেখা দেবে।'

'বিজিএমইএ সব কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত দেওয়ার কোনো কর্তৃপক্ষ নয়। গত শনি ও রোববার দুই দফায় শ্রম মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বৈঠকেও আপাতত কারখানা চালু রাখার বিষয়ে মালিক, শ্রমিক ও সরকার পক্ষ একমত হয়েছে।'

সোমবারই নিট পোশাক কারখানার মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকায় পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে আপাতত কারখানা চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বিকেএমইএর সভাপতি সেলিম ওসমান সাংবাদিকদের জানান, ২৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। সেই ভাষণের দিকনির্দেশনার আলোকে এবং প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনাসাপেক্ষে ফ্যাক্টরি খোলা বা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

২৬ ও ২৭ মার্চ দুই দিন ছুটি থাকায় এর মধ্যে সব কারখানার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার আহ্বান জানান তিনি।

অনতিবিলম্বে পোশাকশ্রমিকদের সবেতনে ছুটি দেওয়ার দাবি জানিয়ে গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক তাসলিমা আক্তার বলেন, 'সংকট দুয়েক মাস দীর্ঘায়িত হলে সেই ধাক্কা সামাল দেওয়ার সামর্থ্য মালিকদের থাকা উচিত।'

'কারণ তারা সারা বছর ব্যবসা করে। সরকার চাইলে মালিকদের কম সুদে ঋণসহ অন্যান্য আর্থিক সহায়তা দিতে পারে।'

সরকার যে কারখানা বন্ধের বিষয়ে এখনও কোনো পরিকল্পনা করেনি তা পরিষ্কার। করোনাভাইরাসের কারণে ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হলেও কারখানাগুলোর ওপর কোনো বাধ্যবাধকতা নেই বলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব আহমেদ কায়কাউস জানিয়েছেন।

সোমবার সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তৈরি পোশাক কারখানাগুলো ছুটির বিষয়ে কারখানা মালিকরাই সিদ্ধান্ত নেবেন।

'আমাদের যারা হেলথ প্রফেশনাল আছে তাদের সাথেও আলাপ হয়েছিল (বিষয়টি নিয়ে), গার্মেন্টে যারা কাজ করেন, সেটা আমরা ক্লোজ মনিটরে রেখেছি প্রথম থেকে।'

এছাড়া অনেক কারখানায় ভাইরাস সংক্রমণ রোধে পিপিই (পারসোরন্যাল প্রোটেকশন ইকুইপমেন্ট) ও মাস্কসহ চিকিৎসকদের বিশেষ পোশাক তৈরি হচ্ছে বলে তাদের ওপর কোনো বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়নি বলে তিনি জানান।

রপ্তানি কমে গেলেও ভাইরাস প্রতিরোধে চিকিৎসক ও স্বেচ্ছাসেবকদের জন্য সুরক্ষামূলক পোশাক তৈরি বিবেচনায় সব পোশাক কারখানা বন্ধ করে না দিয়ে কিছু চালু রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক।

নারায়ণগঞ্জের ফতুলস্না অ্যাপারেল নামে একটি পোশাক কারখানার মালিক শেখ ফজলে শামীম এহসান জানান, তাদের কারখানায় কিছু ক্রয়াদেশ বাতিল হয়ে গেলেও এখনও কিছু অর্ডার রয়েছে। মন্দার এই পরিস্থিতিতে এই অর্ডার ফিরিয়ে দিতে যাচ্ছেন না।

'এছাড়া কারখানায় শ্রমিকদের সুরক্ষায় দুই ঘণ্টা পরপর হাত-মুখ সাবান দিয়ে ধোয়া, তাপমাত্রা পরীক্ষা করা, কেউ অসুস্থ বোধ করলে তার বিষয়ে খোঁজ-খবর নেওয়াসহ সতর্কতামূলক সব ধরনের পদক্ষেপই নেওয়া হচ্ছে।'

একই কথা বলেন দেশের দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় পস্নাস্টিক ও শুকনো খাবার তৈরি এবং রপ্তানিতে নিয়োজিত একটি কোম্পানির কর্তাব্যাক্তিরা। তারাও এসব বিষয়ে সরকারের দিকনির্দেশনার অপেক্ষায় থাকার কথা জানান।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<94036 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1