নাটোরের লালপুরের বাস-লেগুনা সংঘষের্ ১৫ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় রোববার সকালে লালপুর থানায় সাতজনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। বনপাড়া হাইওয়ে থানার সহকারী উপপরিদশর্ক (এএসআই) ইউছুব আলী বাদী হয়ে মামলাটি করেন। আসামিদের মধ্য লেগুনার চালক ও তার সহকারী দুজনই দুঘর্টনায় নিহত হয়েছেন। তবে এখন পযর্ন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
এদিকে সড়ক দুঘর্টনা সম্পকের্ সচেতনতা বাড়াতে সকালে বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া পৌরসভা ও থানা-পুলিশের উদ্যোগে পৌর চত্বরে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার বিকেল চারটার দিকে নাটোরের লালপুরের কদিমচিলান ক্লিক মোড়ের সাদিয়া ফিলিং স্টেশনের সামনে চ্যালেঞ্জার নামের একটি বাসের সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা যাত্রীবাহী লেগুনার সংঘষর্ হয়। এতে লেগুনাটি দুমড়েমুচড়ে যায়। বাসটি পড়ে যায় সড়কের পাশে খাদে। ঘটনাস্থলেই নিহত হয় লেগুনার ১০ যাত্রী। বাসটি পাবনা থেকে নাটোর হয়ে রাজশাহী যাচ্ছিল। দুঘর্টনার পরপর আশপাশের লোকজন ছুটে এসে লেগুনার অপর ৪ যাত্রী ও বাসের ৮ যাত্রীকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করেন। পরে হতাহত ব্যক্তিদের উদ্ধারে যোগ দেন বনপাড়া হাইওয়ে থানা, লালপুর থানা, নাটোর ও লালপুর ফায়ার সাভিের্সর কমীর্রা। আহত ব্যক্তিদের বড়াইগ্রামের বনপাড়া শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় লেগুনার আরও ৪ যাত্রী মারা যান। পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার মীরকামারি গ্রামের সালামত আলীর মেয়ে সুমাইয়া (১১ মাস) রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতে মারা যায়।
লেগুনার বেঁচে যাওয়া একমাত্র যাত্রী নুরসেদ সদার্র (৭২) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জানান, লেগুনাটি বড়াইগ্রামের বনপাড়া বাইপাসের লেগুনা স্ট্যান্ড থেকে ছেড়ে ঈশ্বরদীর দাশুড়িয়া যাচ্ছিল। লেগুনাটি ছাড়ার পর থেকেই চালক এলোমেলো চালাচ্ছিলেন। চালক মুঠোফোনে কথা বলছিলেন। হঠাৎ বিপরীত দিক থেকে আসা একটি বাসের সঙ্গে সংঘষের্ মুহূতের্ সবকিছু তছনছ হয়ে যায়। দুঘর্টনায় তিনি স্ত্রী লজেলাকে হারিয়েছেন।
লালপুর থানা সূত্রে জানা যায়, এ ঘটনায় বনপাড়া হাইওয়ে থানার এএআই ইউছুব আলী লালপুর থানায় এফআইআর করেন। মামলায় বনপাড়া লেগুনা স্ট্যান্ডের সভাপতি জাবেদ মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, লেগুনার চালক, চালকের সহকারী, চ্যালেঞ্জার বাসের মালিক, বাসের চালক ও চালকের সহকারীকে আসামি করা হয়েছে।
আসামিদের মধ্যে লেগুনার চালক ও তার সহকারী দুজনই দুঘর্টনায় নিহত হয়েছেন। আর চ্যালেঞ্জার বাসের মালিক, চালক ও চালকের সহকারীকে অজ্ঞাত দেখানো হয়েছে।
লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কমর্কতার্ (ওসি) নজরুল ইসলাম জানান, আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তারা পলাতক থাকায় গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।
জনসচেতনতামূলক গণসমাবেশ
রোববার সকালে বনপাড়া পৌর চত্বরে সড়ক দুঘর্টনারোধে জনসচেতনতামূলক গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপজেলা নিবার্হী কমর্কতার্ (ইউএনও) আনোয়ার পারভেজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য দেন নাটোর-৪ (বড়াইগ্রাম-গুরুদাসপুর) আসনের সাংসদ আব্দুল কুদ্দুস, নাটোর-১ (লালপুর-বাগাতিপাড়া) আসনের সাংসদ মো. আবুল কালাম, জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন, পুলিশ সুপার বিপ্লব বিজয় তালুকদার, হাইওয়ে পুলিশ সুপার (বগুড়া) মোস্তাফিজুর রহমান। বক্তারা মহাসড়কে সড়ক দুঘর্টনা রোধে পরিবহনসংশ্লিষ্টদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে আরও সচেতন হওয়ার পরামশর্ দেন।
নাটোরের পুলিশ সুপার বলেন, তিনি মহাসড়কে লেগুনা ও তিন চাকার পরিবহন চলতে দিতে চান না। এখন থেকে এসব পরিবহন আর মহাসড়কে উঠতে পারবে না। এজন্য তিনি সবার সহযোগিতা চান।