বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কুমিল্লায় এক মামলায় খালেদার জামিনে স্থগিতাদেশ উঠল

যাযাদি রিপোটর্
  ২৭ জুন ২০১৮, ০০:০০

কুমিল্লায় নাশকতার ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় খালেদা জিয়াকে হাইকোটের্র দেয়া জামিনের ওপর চেম্বার আদালত যে স্থগিতাদেশ দিয়েছিল, তা তুলে নিয়েছে আপিল বিভাগ।

চেম্বার আদালতের দেয়া স্থগিতাদেশ বাতিল করে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে তিন বিচারকের আপিল বেঞ্চ মঙ্গলবার রাষ্ট্রপক্ষের লিভ টু আপিলের নিষ্পত্তি করে দেয়।

পাশাপাশি আপিল বিভাগ বলেছে, আদেশ পাওয়ার সাত দিনের মধ্যে হাইকোটের্ খালেদা জিয়ার আবেদনের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে হবে।

এই আদেশের ফলে খালেদা জিয়াকে দেয়া জামিন বহাল থাকছে কি নাÑ সেই প্রশ্নে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য এসেছে খালেদার আইনজীবী ও রাষ্ট্রপক্ষের দিক থেকে।

খালেদার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, যেহেতু স্থগিতাদেশ উঠে গেছে, সেহেতু খালেদা জিয়াকে দেয়া হা

কোটের্র জামিনই বহাল আছে।

অন্যদিকে অ্যাটনির্ জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, স্থগিতাদেশ উঠলেও জামিন বহাল হয়নি, কেননা আপিল বিভাগ খালেদা জিয়ার আবেদনের গ্রহণযোগ্যতা হাইকোটের্ক পরীক্ষা করতে বলেছে।

আরও কয়েকটি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদার জামিন আবেদনের নিষ্পত্তি আদালতে আটকে আছে। ফলে জামিন বহাল থাক বা না থাক, আপাতত তার

মুক্তি হচ্ছে না।

২০১৫ সালে বিএনপি জোটের টানা অবরোধ হরতালের মধ্যে ২৫ জানুয়ারি চৌদ্দগ্রামে একটি কভাডর্ ভ্যানে অগ্নিসংযোগ ও গাড়ি ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। পরে চৌদ্দগ্রাম থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে এ মামলা দায়ের করা হয়।

২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রæয়ারি ওই মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। তাতে খালেদা জিয়াসহ ৩২ জনকে আসামি করা হয়।

জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুনীির্ত মামলায় কারাদÐের রায়ের পর সাড়ে চার মাস ধরে বন্দি খালেদা জিয়া ইতোমধ্যে ওই মামলায় সবোর্চ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন। কিন্তু কুমিল্লার নাশকতার দুটিসহ কয়েকটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোয় তার মুক্তি আটকে যায়।

সেই পথ খুলতে মামলাগুলোতে হাইকোটের্ জামিনের আবেদন করেন তার আইনজীবীরা। গত ২৮ মে হাইকোটর্ কুমিল্লার মামলা দুটিতে জামিন মঞ্জুর করলে ঈদের আগে বিএনপি চেয়ারপারসনের মুক্তির বিষয়ে আশাবাদী হয়ে ওঠেন দলটির নেতারা।

কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে চেম্বার আদালত ওই জামিন স্থগিত করে দেয়। পরে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চ ওই স্থগিতাদেশ বহাল রেখে ২৪ জুন লিভ টু আপিল শুনানির তারিখ দিলে ঈদের আগে খালেদার মুক্তি আটকে যায়।

এর ধারাবাহিকতায় অবকাশ ও ঈদের ছুটি শেষে রোববার সুপ্রিম কোটর্ খোলার পর সবোর্চ্চ আদালতে দুই মামলায় লিভ টু আপিলের শুনানি শুরু হয়।

এর মধ্যে বাস পুড়িয়ে মানুষ হত্যার মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের লিভ টু আপিলের শুনানি শেষে আদেশের জন্য ২ জুলাই দিন রাখে আপিল বিভাগ।

আর সোমবার বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলার লিভ টু আপিলের শুনানি করে মঙ্গলবার আদেশ দেয় সবোর্চ্চ আদালত।

রাষ্ট্রপক্ষে লিভ টু আপিলের ওপর শুনানি করেন অ্যাটনির্ জেনারেল মাহবুবে আলম। খালেদা জিয়ার পক্ষে ছিলেন খন্দকার মাহবুব হোসেন, এ জে মোহাম্মদ আলী, জয়নুল আবেদীন ও মাহবুব উদ্দীন খোকন।

আদেশের পর খালেদার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় আমরা জামিন চেয়েছিলাম। হাকিম আদালতে জামিন আবেদনটি নাকচ হওয়ার পর জজ আদালতে গিয়েছিলাম। বিচারিক আদালত ইচ্ছাকৃতভাবে মামলাটি দীঘাির্য়ত করার জন্য, খালেদা জিয়ার কারাবন্দি জীবন দীঘাির্য়ত করার জন্য দীঘর্ সময় দেয়। ২৪ এপ্রিল আবেদন করেছিলাম, সেটি ?শুনানির জন্য ৭ জুলাই নিধার্রণ করে।’

‘পরে শুনানির সময় এগিয়ে আনার জন্য আবেদন করেছিলাম। কিন্তু সে আবেদনে সাড়া দেয়িনি আদালত। মামলা দীঘাির্য়ত করা মানে আবেদন খারিজ হওয়ার শামিল। সে ক্ষেত্রে কনকারেন্ট জুরিসডিকশন (এখতিয়ার) আছে হাইকোটের্ জামিন আবেদন করার। সে অনুযায়ী আমরা হাইকোটর্ আপিল করেছিলাম। হাইকোটর্ আপিল নিষ্পত্তি করে আমাদের জামিন দিয়েছিল। এর বিরুদ্ধে সরকার পক্ষ আপিল বিভাগে গিয়েছিলেন।’

‘দীঘর্ শুনানির পর আপিল বিভাগ হাইকোটের্র দেয়া জামিন বহাল রেখেছে এবং বলেছে, আবেদনটি গ্রহণযোগ্য কি না তা সাত দিনের মধ্যে পরীক্ষা করার জন্য।’

অবশ্য এ বিষয়ে অ্যাটিনির্ জেনারেল মাহবুববে আলমের বক্তব্য ভিন্ন। তিনি বলছেন, জামিন বহাল আছে বলে খালেদা জিয়ার আইনজীবীর বক্তব্য ‘মনগড়া’।

রাষ্ট্রেরপ্রধান আইন কমর্কতার্ বলেন, ‘আপিল বিভাগ যদি হাইকোটের্র আদেশটি বহাল রাখত তাহলে তো আমাদের আবেদনটি খারিজ হতো। হাইকোটের্ ফেরত পাঠানো হয়েছে বলে স্থগিতাদেশটি বাতিল করা হয়েছে।’

এর ব্যাখ্যায় অ্যাটনির্ জেনারেল বলেন, ‘খালেদা জিয়া নিম্নআদালত জামিন আবেদন করেছিলেন। সেখানে আবেদনটি বিচারাধীন রেখেই তিনি (খালেদা জিয়া) হাইকোটের্ এসেছিলেন। হাইকোটর্ তাকে বেইল দিয়েছিল। এর বিরুদ্ধে আমরা আপিল বিভাগে গিয়েছিলাম।’

‘আপিল বিভাগ মামলাটি পুনরায় হাইকোটের্ ফেরত পাঠিয়েছেন এই নিদের্শনা দিয়ে যে, এই মামলাটিতে জামিন আবেদন রক্ষণীয় (গ্রহণযোগ্য) কি না সেটা বিবেচনা করার জন্য। এ মামলায় নিম্নআদালতে আবেদন বিচারাধীন রেখে উনি হাইকোটের্ আসতে পারেন কি নাÑ সেটা বিবেচনা করা হবে। তারপর জামিনের বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হবে।’

বিএনপি নেতারা অভিযোগ করে আসছেন, সরকারই ‘ষড়যন্ত্র’ করে খালেদা জিয়ার মুক্তি আটকে রেখেছেন। তবে তা প্রত্যাখ্যান করে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বিষয়টি পুরোপুরি আদালতের বিষয় এবং তার উপর সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ নেই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে