শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে পাটপাতার পানীয়, নেওয়া হচ্ছে প্রকল্প

যাযাদি ডেস্ক
  ০১ মার্চ ২০২০, ০০:০০

কারখানা স্থাপন করে বড় পরিসরে পাটপাতার জৈব পানীয় তৈরির উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এ জন্য আরেকটি প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) কর্মকর্তারা।

জানা গেছে, এর আগে 'পাট পাতা থেকে জৈব পানীয় তৈরির কারখানা স্থাপন' নামে বিজেএমসি একটি প্রকল্প নেয়। এ প্রকল্পের অধীনে জার্মানির একটি প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় সীমিত পরিসরে পাট পাতার 'চা' উৎপাদনও করা হয়। সেই চা জার্মানিতে রফতানি হয়। এ প্রকল্পে এখন পর্যন্ত পাঁচ কোটি টাকার মতো ব্যয় হয়েছে। কিন্তু বড় পরিসরে উৎপাদনে গিয়ে এ পানীয় বাজারে আনতে পারেনি বিজেএমসি।

২০১৮ সালের ১৯ জানুয়ারি জামালপুরের সরিষাবাড়িতে পাটপাতা থেকে

পানীয় উৎপাদনের জন্য একটি কারখানার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম। কিন্তু পরে এ বিষয়ে তেমন অগ্রগতি হয়নি। এ অবস্থায় প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন আরেকটি প্রকল্প নেওয়া হয়।

এ বিষয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (পাট) মো. খুরশীদ ইকবাল রেজভী বলেন, 'আগের পাইলট প্রকল্পটি চলবে। পাট পাতা থেকে তৈরি পানীয়ের সুফল পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে আরও একটি বড় প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। বড় প্রকল্পটি বাস্তবায়নে গেলে তখন বাজারে পাট পাতার পানীয় পাওয়া যাবে।'

বিজেএমসির চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রউফ বলেন, 'ইতোমধ্যে বিজেএমসি নিজস্ব তহবিলের ৯ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। কিছু কাজ হয়েছে। জার্মানির একটি কোম্পানি আগ্রহী ছিল, কাজ চলমান ছিল। প্রকল্পটি ডিসেম্বরেই শেষ হয়েছে। এতে আমরা সমস্যার মধ্যে পড়ে গেলাম। তবে গত রোববার (২৩ ফেব্রম্নয়ারি) মিটিংয়ে মন্ত্রণালয় প্রকল্পটি চালিয়ে নেওয়ার অনুমোদন দিয়েছে।'

তিনি বলেন, 'মন্ত্রণালয় চায় এ বিষয়ে নতুন একটি প্রকল্প ডেভেলপ করার জন্য। আমরা এ জন্য একটি ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) ডেভেলপ করেছি। আগামীতে এ বিষয়টি আমরা আরও বৃহত্তর আকারে দেখতে পাব বলে আশা করি।'

'এখনো বিষয়টি পাইলটিং হচ্ছে। নতুন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৫০ কোটি টাকা। আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি। আগে ছোট বিনিয়োগ ছিল, সেখানে অনেক অসঙ্গতিও আছে। নতুন কাজে অসঙ্গতি থাকবে এটাই স্বাভাবিক। ওটার অভিজ্ঞতা নিয়ে নতুন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে তখন হয়তো ভালো কিছু দেখতে পাব। ডিপিপিতে বিস্তারিত সব কিছু থাকবে, আমরা কী করতে চাই।'

বিজেএমসি চেয়ারম্যান বলেন, 'পাট পাতায় ঔষধি গুণ রয়েছে, গ্রামে যারা থাকেন তারা রোগের ক্ষেত্রে পাট পাতা ব্যবহার করেন। পাতার রস খান, শুকনা পাতা ভিজিয়েও খান। পাট পাতায় শরীরের জন্য ক্ষতিকর কিছু এখনো পাওয়া যায়নি। এতদিন যত পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে তাতে পজিটিভ রেজাল্ট পাওয়া গেছে।'

তিনি বলেন, 'পাট পাতা থেকে তৈরি পানীয় যদি আমরা মানুষকে খাওয়াতে পারি তবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণসহ নানা রোগ নিরাময়ে সহায়ক হবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।'

'পাট পাতার চা বলাটা ঠিক হবে না। আমরা পাট পাতার পানীয় বলতে চাই। পাট পাতা থেকে চা বলা হয়েছিল। কিন্তু উত্তরসূরি যারা ছিলেন তারা এটার সঙ্গে একমত হননি। আমরা পাট পাতার পানীয় বলতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।'

আব্দুর রউফ বলেন, 'অনেক কাজ রয়েছে, একটি মেশিনও কেনা হয়নি। আগে বিভিন্ন স্থান থেকে প্যাকেটিং-ট্যাকেটিং কী কী করা হয়েছে, সেগুলো সেভাবে কাজে আসেনি। এখন মেশিন কিনে নিজেরা কিছু করতে পারি কিনা সে বিষয়ে নজর দিচ্ছি, এজন্যই নতুন প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে।'

বিজেএমসির চেয়ারম্যান বলেন, 'পরবর্তী কাজটা সরকার করবে না। আমরা কাজটা শুরু করবো। তখন প্রাইভেট ইনভেস্টর লাগবে, তারাই পাট থেকে পানীয় উপাদন করবে। সরকার তো আর ব্যবসা করবে না।'

বিজেএমসি ইতিমধ্যে পাইলট প্রকল্পে ৮-৯ কোটি টাকা খরচ করেছে জানিয়ে চেয়ারম্যান বলেন, 'এ ইনভেস্টমেনস্ট তো কোনো ব্যক্তি করত না। কারণ এ টাকা খরচ করে আমি কিন্তু এক কোটি টাকাও পাইনি। বিজেএমসির জন্য এটা অনেক বড় বার্ডেন। এটা বিজেএমসির নিজস্ব টাকা।'

পাট পাতা থেকে পানীয় তৈরি প্রকল্পের সঙ্গে থাকা বিজেএমসির কারিগরি উপদেষ্টা মাহবুবুর রহমান বলেন, 'আগের প্রকল্পটি আরও এক-দেড় বছর কন্টিনিউ করবে, পরে বড় আকারে নতুন প্রকল্প নেওয়া হবে। আমরা পরীক্ষামূলকভাবে পাট পাতার পানীয় জার্মানিতে রপ্তানি করেছি। স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন মেলায় প্রদর্শনী হয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে বাজারে সেভাবে বিক্রি হয়নি। ৪০-৪২ লাখ টাকার মতো পানীয় আমরা জার্মানিতে রপ্তানি করেছি।'

পরীক্ষামূলকভাবে পাট পাতার পানীয় তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

কারিগরি উপদেষ্টা বলেন, 'আমরা এখন সার্টিফিকেশন করছি। খাওয়ার আইটেম হওয়ায় বিএসটিআই, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তরের কাজ থেকে সার্টিফিকেট নিতে হবে। সার্টিফিকেটগুলো পেলে আমরা বড় পরিসরে কাজ করতে পারব। বেশি উৎপাদনে যেতে পারব। বেশি উৎপাদন করলে বাজারে দিতে পারব।'

'পরবর্তী প্রকল্পের অধীনে আমরা ডায়াবেটিস রোগী ও আর্সেনিক আক্রান্তদের ওপর পাট পাতা থেকে তৈরি পানীয়ের প্রভাব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করব। আইসিডিডিআরবি এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় যৌথভাবে এটা করবে।'

মাহবুবুর রহমান বলেন, 'পাইলট প্রকল্পের অধীনে সেভাবে আমরা যন্ত্রপাতি এখনো কিনতে পারিনি, পাতা শুকানোর জন্য একটা ড্রায়ার কিনেছি। ছোটোখাটো জিনিস কিনেছি।' জাগো নিউজ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<90680 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1