মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
বইমেলা প্রতিদিন

পর্দা নামল প্রাণের মেলার

ফয়সাল খান
  ০১ মার্চ ২০২০, ০০:০০
শনিবার অমর একুশে গ্রন্থমেলার শেষ দিনে ক্রেতাদের ছিল উপচেপড়া ভিড়। ছবিটি সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে তোলা -স্টার মেইল

আজ থেকে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ মুখরিত হবে না লেখক-পাঠক-প্রকাশকদের পদচারণায়। বাংলা একাডেমি ফিরে যাবে তার সাধারণ কর্মদিবসের পুরানো রূপে। মেলার জিনিসপত্র সরানোর পর সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যানও উন্মুক্ত হয়ে যাবে সাধারণ মানুষের বিনোদনের জন্য।

বইমেলার শেষ সপ্তাহে প্রথম তিন সপ্তাহের চেয়ে বেশ ভালো বিক্রি হয়েছে। তবে অন্য বছরের তুলনায় বিক্রি কম হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকাশকরা। শনিবার রাতে অমর একুশে গ্রন্থমেলার পর্দা নামে।

শনিবার সকাল থেকেই বইপ্রেমীদের পদচারণায় মুখরিত হয় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ। ১১টায় শিশুপ্রহরে বাচ্চাদের কিচিরমিচির মেলায় নতুন মাত্রা যোগ করে। শিশুদের উচ্ছ্বাস ছাড়িয়ে বিকোলের দিকটায় বড়দের ভিড় বাড়তে থাকে। বিকেলের শেষদিকটায় মানুষের ঢল নামে প্রাণের মেলায়। প্রকাশক-লেখকরা উপস্থিত থেকে পাঠক ও শুভাকাঙ্ক্ষিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। তাদের চা-কফির আড্ডায়ও ছিল বেচাকেনা সম্পর্কিত বিষয়। এ সময় মেলার নানা দিক নিয়ে কথা বলেন তারা।

অন্যদিকে বিক্রেতা ও দর্শনার্থীরা এবারের মেলার ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। অনেক দর্শনার্থীর মতে, এবারের মেলায় বিভিন্ন রকমের সুবিধা তাদের মুগ্ধ করেছে। যা আগের বছরের মেলাগুলোতে দেখা যায়নি। পানির ব্যবস্থা, বসার ব্যবস্থা ও  মোবাইল পেমেন্ট ব্যবস্থাসহ আয়োজকদের নানা রকম সুবিধার কারণে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন দর্শনার্থীরা। এ ছাড়াও এবারের গ্রন্থমেলার সার্বিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রকাশকরাও।

মেয়েকে নিয়ে মেলায় এসেছেন রাজিবুল হাসান। তিনি বলেন, আগের বছরগুলোর তুলনায় এবারের মেলায় বসার ব্যবস্থা অনেক ভালো ছিল। এছাড়া নামাজ পড়ার জায়গা, খাবার এবং পানির ব্যবস্থাও খুব ভালো ছিল। তবে খাবারের দামটা একটু বেশিই ছিল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আদনাম জাহিদ বলেন, এবার বইমেলায় স্টলগুলো খুব ভালোভাবে সাজানো ছিল। বইয়ের স্টল খুঁজে পেতে তেমন কোনো ঝামেলায় পড়তে হয়নি। খোলামেলা পরিবেশ ছিল মেলাজুড়ে। সময় নিয়ে বই পড়তে ও কিনতে পেরেছি।

এ ছাড়াও ঢাকার বাইরে থেকেও অনেকেই প্রিয় লেখকের বই কিনতে মেলায় এসেছেন। তারা শেষ মুহূর্তে তালিকা ধরে ধরে কিনেছেন পছন্দের বই। বিভিন্ন স্টলের কর্মীরা জানিয়েছেন, এটা শুধু এক মাসের চাকরি নয়। এর সঙ্গে ভালোলাগা, ভালোবাসা ও চেতনাগত আবেগ জড়িত রয়েছে।

এবারের মেলায় বই বিক্রি ও

নতুন বই প্রকাশের ক্ষেত্রে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেলার সদস্যসচিব। তার দেওয়া তথ্যমতে, ৮২ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে।

মেলায় ৪ হাজার ৯১৯টি নতুন বই : এবার মেলার তথ্যকেন্দ্রে নতুন বই জমা পড়েছে ৪ হাজার ৯১৯টি। এর মধ্যে ১ হাজার ১৫১টিকে মানসম্পন্ন বই হিসেবে ধরা হয়েছে। বিষয়ভিত্তিক বইগুলোর মধ্যে রয়েছে গল্প ৬৪৪টি, উপন্যাস ৭৩১টি, প্রবন্ধ ২৭১টি, কবিতা ১৫৮৫টি, গবেষণা ১১২টি, ছড়া ১১১টি, শিশুতোষ ২০৩টি, জীবনী ১৪৯টি, রচনাবলি ৮টি, মুক্তিযুদ্ধ ১৫২টি, নাটক ৩৪টি, বিজ্ঞান ৮৩টি, ভ্রমণ ৮২টি, ইতিহাস ৯৬টি, রাজনীতি ১৩টি, রম্য/ধাঁধা ৪০টি, ধর্মীয় ২০টি, অনুবাদ ৫৬টি, অভিধান ১৪টি, সায়েন্স ফিকশন ৬৭টি, বঙ্গবন্ধুবিষয়ক ১৪৪টি এবং অন্যান্য ২৬৮টি। মেলায় ৪ হাজার ৮৩৪টি নতুন বই এসেছে। গতবারের তুলনায় এবার ৮৫টি বই বেশি প্রকাশিত হয়েছে। এবারও প্রকাশনার দিকে এগিয়ে ছিল কবিতার বই। মেলার ২৮তম দিনে নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে ১৮৪টি। এরমধ্যে ৭৫১টি বইকে মানসম্মত বই হিসেবে নির্বাচিত করেছে বাংলা একাডেমি।

সমাপনী দিনে মেলা চলে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে সমাপনী অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ প্রদান করেন একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুলস্নাহ সিরাজী। গ্রন্থমেলার প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন 'অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০'-এর সদস্যসচিব ড. জালাল আহমেদ। প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল এনডিসি। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।  

রাত ৮টায় গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে সমাপনী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন রূপা চক্রবর্তী এবং হাসান আরিফ। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা এবং খায়রুল আনাম শাকিল।

চারটি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার :

শনিবার সন্ধ্যায় অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০ উপলক্ষে বাংলা একাডেমি পরিচালিত চারটি গুণীজন স্মৃতি পুরস্কার বিজয়ীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

এতে বাংলা একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুলস্নাহ সিরাজী। গ্রন্থমেলার প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন 'অমর একুশে গ্রন্থমেলার সদস্যসচিব ড. জালাল আহমেদ।

২০১৯ সালে প্রকাশিত বিষয় ও গুণমানসম্মত সর্বাধিকসংখ্যক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য 'কথাপ্রকাশ'-কে চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার, ২০১৯ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে শৈল্পিক ও গুণমান বিচারে সেরা গ্রন্থ বিভাগে আবুল হাসনাত রচিত 'প্রত্যয়ী স্মৃতি ও অন্যান্য' গ্রন্থের জন্য 'জার্নিম্যান বুকস', মঈনুস সুলতান রচিত 'জোহানেসবার্গের জার্নাল' গ্রন্থের জন্য প্রথমা প্রকাশনাকে এবং রফিকুন নবী রচিত 'স্মৃতির পথরেখা' গ্রন্থের জন্য বেঙ্গল পাবলিকেশন্সকে মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০২০ প্রদান করা হয়।

২০১৯ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণমান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেডকে রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার, এবং ২০২০ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্য থেকে নান্দনিক অঙ্গসজ্জায় সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে অভিযান (এক ইউনিট), কুঁড়েঘর প্রকাশনী লিমিটেড (২-৪ ইউনিট) এবং বাংলা প্রকাশকে (প্যাভেলিয়ন) শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০২০ প্রদান করা হয়।

এবারের গ্রন্থমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় ৮ লাখ বর্গফুট জায়গায়জুড়ে। একাডেমি প্রাঙ্গণে ১২৬টি প্রতিষ্ঠানকে ১৭৯টি এবং সো্‌রাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৩৪টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৯৪টি ইউনিট, মোট ৫৬০টি প্রতিষ্ঠানকে ৮৭৩টি ইউনিট এবং বাংলা একাডেমিসহ ৩৩টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে ৩৪টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এবার লিটল ম্যাগাজিন চত্বর স্থানান্তরিত হয়েছিল সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যানের মূল মেলা প্রাঙ্গণ। সেখানে ১৫২টি লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দের পাশাপাশি ৬টি উন্মুক্ত স্টলসহ ১৫৮টি লিটলম্যাগকে স্টল দেওয়া হয়েছে। একক ক্ষুদ্র প্রকাশনা সংস্থা এবং ব্যক্তি উদ্যোগে যারা বই প্রকাশ করেছেন তাদের বই বিক্রি/প্রদর্শনের ব্যবস্থা ছিল জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের স্টলে। গ্রন্থমেলায় বাংলা একাডেমি এবং মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ২৫% কমিশনে বই বিক্রি করেছে। এ ছাড়াও একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলা একাডেমির ২টি প্যাভিলিয়ন, ৪ ইউনিটের ২টি, একাডেমির শিশু-কিশোর উপযোগী বইয়ের জন্য ১টি এবং একাডেমির সাহিত্য মাসিক উল্টরাধিকারের ১টি স্টল ছিল। এবারের মেলায় সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ছিল শিশু চত্বর। এই কর্নারকে শিশু-কিশোর বিনোদন ও শিক্ষামূলক অঙ্গসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছিল। এবং মাসব্যাপী গ্রন্থমেলায় ঘোষণা করা হয়েছিল 'শিশুপ্রহর'। এ ছাড়াও সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যানে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। মেলার তথ্যকেন্দ্র ছিল বর্ধমান ভবনের পশ্চিম বেদিতে এবং সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যানে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<90673 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1