বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সুবাস ছড়াচ্ছে স্বর্ণালি মুকুল

নতুনধারা
  ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০
বসন্তের ফাগুন আর আমের মুকুল যেন একই সুতায় গাঁথা। তাই ফাগুনের শুরুতেই ইট-পাথরের এই রাজধানীতে সবুজ আম গাছে সোনালি মুকুলের আগমনে দৃষ্টি জুড়িয়েছে নগরবাসীর। ছবিটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এলাকা থেকে তোলা -ফোকাস বাংলা

যাযাদি ডেস্ক

শীত বুড়ির বিদায়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ। বাংলা পঞ্জিকায় সদ্যই অভিষিক্ত ঋতুরাজ বসন্ত। আগুনঝরা ফাগুনের আবাহনে ফুটেছে শিমুল-পলাশ। গ্রামের মেঠোপথে কখনও কখনও দূর সীমানা থেকে কানে ভেসে আসছে কোকিলের কুহু কুহু কলতান।

এরই মধ্যে বসন্তের আগুনরাঙা গাঁদা ফুলের সঙ্গে সৌরভ ছড়াচ্ছে আমের মুকুলও। আমের মুকুলের মিষ্টি ঘ্রাণে এখনই মৌ মৌ করতে শুরু করেছে চারিদিক। মুকুলের সেই সুমিষ্ট সুবাস আন্দোলিত করে তুলছে মানুষের মন।

ঋতুবৈচিত্র্যে আমের শহর রাজশাহীর সবুজ প্রকৃতির আমেজ এখন অনেকটা এমনই আবেগের হয়ে উঠেছে। বসন্তের ফাগুন আর আমের মুকুল যেন একই সুতোয় গাঁথা। বছরের নির্দিষ্ট এই সময়জুড়ে তাই চাষি তো বটেই, কম-বেশি সব শ্রেণির মানুষেরও দৃষ্টি থাকে সবুজ পাতায় ঢাকা আম গাছের শাখা-প্রশাখায়।

সদ্য মুকুল ফোটার এমন দৃশ্য এখন ইট-পাথরের শহর থেকে শুরু করে বিস্তৃত রাজশাহীর গ্রামীণ জনপদেও। রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, নাটোর, পাবনা, বগুড়া ও জয়পুরহাট জেলার প্রায় সব এলাকাতেই এখন প্রচুর আমবাগান রয়েছে।

জাতীয় অর্থনীতিতে আম লাভজনক মৌসুমি ফল ব্যবসা হওয়ায় প্রতি বছরই বাগানের সংখ্যা বাড়ছে। তবে গড়ে ওঠা নতুন আমবাগানগুলোর প্রায়ই বনেদি জাতের। বিশেষ করে নিয়মিত জাত ল্যাংড়া, গোপালভোগ, ক্ষিরসাপাত ও আশ্বিনা জাতের হাইব্রিড গাছই বেশি হচ্ছে।

বিশেষত মাঘের শেষে রাজশাহীর আম গাছে মুকুল আসে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। আগে রাজশাহীতে আমের মৌসুমে 'অফ ইয়ার' এবং 'অন ইয়ার' থাকত। অফ ইয়ারে ফলন কম হতো আর অন ইয়ারে বেশি হতো। কিন্তু প্রায় এক যুগের বেশি সময় থেকে রাজশাহীর আম চাষিদের অক্লান্ত পরিশ্রমে এই রেওয়াজ ভেঙেছে।

বছরজুড়ে চাষিদের নিয়মিত পরিচর্যার কারণে এখন রাজশাহীর সব বাগানেই প্রতি বছরই আমের আশানুরূপ ফলন বাড়ছে। এছাড়া এবার পৌষের শেষেই আগাম মুকুল এসেছে রাজশাহীর অনেক আম বাগানে। তাই এরই মধ্যে স্বর্ণালি মুকুলে ছেয়ে গেছে রাজশাহীর প্রতিটি আম বাগান। মুকুলের আধিপত্যে থাকা বাগানগুলো দেখে তাই আম চাষিদের মনে আশার প্রদীপ জ্বলে উঠেছে। প্রতিদিনই চলছে পরিচর্যা। আম গাছের গোড়ায় মাটি দিয়ে উঁচু করে দেওয়া হচ্ছে সেচ।

ফাল্গুনী হাওয়ায় সবুজ পাতার ফাঁকে দোল খাওয়া সোনাঝরা মুকুলে তাই স্বপ্ন বাঁধছেন চাষিরা। আমের মুকুলের মিষ্টি ঘ্রাণে এরই মধ্যে মৌ মৌ করতে শুরু করছে রাজশাহীর চারিদিক।

বনফুল থেকে মৌমাছির দল গুনগুন করে ভিড়তে শুরু করেছে আম্রমুকুলে। মুকুলের সেই সুমিষ্ট সুবাসে আন্দোলিত হয়ে উঠছে চাষির মনও। গাছের কচি শাখা-প্রশাখায় ফোটা সোনালি ফুলগুলোর ওপরে সূর্যচ্ছটা পড়তেই চিকচিক করে উঠছে। পরিবেশ ও প্রতিবেশ যেন আসছে আম উৎসবেরই জানান দিচ্ছে। আমের মুকুল ও কৃষকের স্বপ্ন তাই একই সুতোয় গাঁথা।

শহরের পুলিশ লাইন, ভেড়িপাড়া, ছোটবনগ্রাম, গৌরহাঙ্গা, শিরোইল, মালোপাড়া, মেহেরচন্ডী ও ভদ্রা আবাসিক এলাকা ঘুরে গাছে বেশকিছু আমগাছে প্রচুর মুকুল। সোনারাঙা সেই মুকুলের সৌরভ ছড়িয়ে পড়েছে আকাশে-বাতাসে।

এদিকে, আমের মুকুলে চাষিরা খুশি হলেও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা বলছেন, পুরোপুরিভাবে শীত বিদায়ের আগেই আমের মুকুল আসা ভালো নয়। হঠাৎ ঘন কুয়াশা পড়লেই আগেভাগে আসা মুকুল ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যা ফলনেও প্রভাব ফেলবে।

যদিও প্রাকৃতিক নিয়মে ফাগুন মাসে ঘন কুয়াশার আশঙ্কা খুবই কম। এর পরও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রকৃতি বিরূপ আচরণ করলে আমের মুকুল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। মাঝে-মধ্যে ঘনকুয়াশা পড়লেও মুকুলের ক্ষতি হবে। পাউডারি মিলডিউ রোগে আক্রান্ত হয়ে এসব মুকুলের অধিকাংশই ঝরে যাবে। ফলে আক্রান্ত বাগান মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাই শেষ পর্যন্ত না দেখে বলা খুবই কঠিন যে, কী হবে।

রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আলীম উদ্দিন বলেন, মাঘের শুরুতে শীতের তীব্রতা ছিল। এরই মধ্যে মুকুল চলে এসেছে অনেক গাছে। এখন কোনো কারণে যদি কুয়াশা পড়ে তাতে আমের মুকুল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কিন্তু আবহাওয়া যদি রৌদ্রোজ্জ্বল হয় এবং তাপমাত্রা একটু একটু করে বাড়ে তবে সমস্যা হবে না।

রাজশাহীর বড়বনগ্রাম এলাকার আম ব্যবসায়ী ফরিদ উদ্দিন বলেন, বছরের এই সময় আম বিক্রি করেই অনেক চাষি মেয়ের বিয়ে দেন, নিজের চিকিৎসা খরচ জোগাড় করেন, বড় ঋণ পরিশোধ করেন, মহাজনের কাছ থেকে টাকা দিয়ে জমি ছাড়িয়ে নিয়ে আসেন। তাই গাছ, মুকুল আর আম অনেকেরই বেঁচে থাকার মূল অবলম্বন।

একবার ফলন হলেও বছরের প্রায় পুরোটা সময় জুড়েই আম বাগানের পরিচর্যাতেই চলে যায়। সাধারণত মাঘের শেষে ফেব্রম্নয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে আমের মুকুল আসে। তবে এবার প্রায় একমাস আগে মধ্য জানুয়ারিতেই কিছু কিছু গাছে আমের আগাম মুকুল চলে এসেছে।

এখন ঘন কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়া না হলেই ভালো হয় বলে জানান আম ব্যবসায়ী ফরিদ উদ্দিন।

সঠিক পরিচর্যার কারণে রাজশাহীর সব গাছে প্রতি বছরই আগাম মুকুল আসে জানিয়ে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামসুল হক বলেন, এটি খুবই স্বাভাবিক।

তিনি বলেন, শীত যেহেতু আছে। তাই এখন কোনো কারণে কুয়াশা না পড়লেই ভালো। তাহলে এসব গাছে আগাম ফলন পাওয়া যাবে। আর মুকুলগুলো প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে পড়লে ফলন খারাপ হবে। তবে নিয়ম মেনে মাঘের শেষদিকে যেসব গাছে মুকুল এসেছে সেসব গাছে মুকুল স্থায়ী হবে; ফলনও ভালো হবে তা অনেকটা নিশ্চিত করেই বলা যায়।

রাজশাহীর আম গবেষক মাহবুবুর রহমান জানান, এ অঞ্চলে আমের বাগান বাড়ছেই। এখানে প্রায় আড়ইশ জাতের সুস্বাদু ও রসালো মিষ্টি আমের উৎপাদন হয়। তবে এবারও জাত আম খ্যাত গোপালভোগ ও ল্যাংড়া, ক্ষিরসাপাত, বোম্বাই, হিমসাগর, ফজলি, আম্রপলি, আশ্বিনা, ক্ষুদি, বৃন্দাবনী, লক্ষণভোগ, কালীভোগ, তোতাপরী, দুধসর, লকনা এবং মোহনভোগ আমই বেশি চাষ হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<89073 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1