দীর্ঘদিন ধরে নির্বাসিত জীবন কাটানো বাংলাদেশি কবি দাউদ হায়দার ভারতে গিয়ে ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির শিকার হয়েছেন।
বন্ধুদের সঙ্গে কলকাতায় অবস্থান করা দাউদ হায়দার সম্প্রতি বইয়ের একটি বড়সর পার্সেল জার্মানির বার্লিনে কুরিয়ার করতে গিয়ে জালিয়াতদের খপ্পরে পড়েন বলে জানিয়েছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
১৯৭৪ সালে দেশ ছাড়ার পর কয়েক বছর কলকাতায় কাটিয়ে ১৯৮৭ সালে সেখান থেকে জার্মানিতে চলে যান দাউদ হায়দার। এর পর থেকে সেখানেই আছেন তিনি।
ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির বিষয়ে কবি দাউদ হায়দার বলেন, 'আমি প্রথমে ভারতের ডাক বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করি, কিন্তু আমাকে জানানো হয়, তারা নিজেরা আর বই পার্সেল না করে বেসরকারি কুরিয়ার সার্ভিসের সহায়তা নিচ্ছে, যেখানে খরচ কিছুটা বেশি। এরপর আমি নিজেই একটি কুরিয়ার সার্ভিসের সেবা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।'
এরপর গুগলে ডিটিডিসি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের খোঁজ পান দাউদ হায়দার। কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠান ভেবে তিনি তাদের ফোন নম্বরে যোগাযোগ করেন।
'তারা প্রথমে পাঁচ রুপি দিয়ে আমার নাম নিবন্ধন করতে বলে। এরপর আমার ডেবিট কার্ডের তথ্য জানতে চায়, আমি তাদেরকে বলি আমার ডেবিট কার্ড নেই। তাছাড়া তারা যে অর্থ চেয়েছিল সেটিও ইউরোপের কোনো ব্যাংকে লেনদেনের জন্য খুবই কম ছিল।'
বিষয়টি জানাজানি হলে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদক গুগলে খোঁজ করে আর ডিটিডিসি নামের প্রতিষ্ঠানের কোনো লিংক পাননি।
এরপরই কলকাতায় কবি দাউদ হায়দারের বন্ধুরা সহায়তা করতে এগিয়ে আসেন। তারা তাদের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে অর্থ পরিশোধ করতে বলেন এবং প্রতিষ্ঠানটির চাওয়া মতো ক্রেডিট কার্ডের তথ্যও দেন। এরপর একটি কার্ড ব্যবহার করে কয়েক মিনিটের মধ্যে দুই লাখ রুপির বেশি তুলে নেওয়া হয়। আর পুরো অর্থই 'ক্লাবফ্যাক্টরি ইন্ডিয়া প্রাইভেট' নামের একটি প্রতিষ্ঠানের নামে হাতিয়ে নেওয়া হয়।
কবি দাউদ হায়দার বলেন, 'এরপর আমরা আবার ওই নম্বরে (+৯১৬২৮৯৮২৭০৫৫) কল করি, কিন্তু কেউ ধরেনি। পরে আরেকটি নম্বর থেকে কল করা হলে একজন জানান, কলকাতায় তাদের কোনো অফিস নেই, শুধু চন্ডিগড়ে আছে। কলকাতায় তাদের অফিসের যে ঠিকানা দেওয়া হয়েছে, সেটা ভুয়া হতে পারে বলেও তিনি জানান।'
এরপরই প্রতারিত হয়েছেন বুঝতে পেরে দাউদ হায়দার তার বন্ধুদের নিয়ে কলকাতার রবীন্দ্র সরোবর থানা এবং পুলিশের সাইবার ক্রাইম সেলে অভিযোগ দায়ের করেন।
সাইবার ক্রাইম সেলে একসময় কাজ করা কলকাতা পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, 'আমরা সবসময়ই এ ব্যাপারে সতর্ক করি। সবার মনে রাখা উচিত যে, আসল কোনো প্রতিষ্ঠান কখনই ফোনে আপনার ক্রেডিট কার্ডের তথ্য জানতে চাইবে না। যখন কেউ আপনার কার্ডের নম্বর জানতে চাইবে তখনই আপনার নিরাপত্তার প্রয়োজন পড়বে।'