শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রার্থীরা শোডাউন করাতেই কম ভোট: সিইসি

যাযাদি রিপোর্ট
  ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০০:০০

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীরা ভোটারের কাছে না গিয়ে রাস্তায় শোডাউন করেছে বলেই ভোটার উপস্থিতি কম হয়েছে। এ জন্য রাস্তায় শোডাউনের সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে।

রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন প্রশিক্ষণ ভবনে নির্বাচন কর্মকর্তাদের ১২ দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিইসি এসব কথা বলেন। এ সময় চার নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদত হোসেন চৌধুরী, কবিতা খানম এবং ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর উপস্থিত ছিলেন।

সিইসি বলেন, 'একমাত্র ইভিএমই পারে ভোট জালিয়াতি বন্ধ করে প্রার্থীদের ভোটারের কাছে নিয়ে যেতে। নির্বাচনে কেবলমাত্র ভোটারাই হবেন ভোটদানের মালিক; শুধুমাত্র ইভিএমের মাধ্যমেই এ বিষয়টি নিশ্চিত করা সম্ভব।'

সিইসি আরও বলেন, 'এবার বিরাট বিরাট মিছিল। মনে করেছিলাম, নির্বাচনে ৬০ শতাংশ ভোট হবে। অলিগলি সব সয়লাব হয়ে গেছে পোস্টারে। সুতরাং নির্বাচনে ভোট বেশি হবে। কিন্তু দেখা গেল উলটো। আমার ধারণা, যারা ভোট দিবেন তাদের কাছে না গিয়ে প্রার্থীরা রাস্তায় গিয়েছেন। তাই ভোট হয়তো কম পড়েছে।'

সিইসি নূরুল ?হুদা বলেন, 'আমেরিকায় এই রকম হয়, সুইজারল্যান্ড এ রকম করে, জার্মানির এ রকম হয়, আমাদের এ রকম হয় না কেন? কয়েকদিন আগে একদল পলিটিশিয়ান এসে এটা বললেন। আমি তাদের নিচু গলায় বললাম, আগে সুইজারল্যান্ড হতে হবে। আমাদের দেশে তো মলম পার্টি নিয়ে কাজ করতে হয়। ব্যাগ টানা পার্টি নিয়ে কাজ করতে হয়। ক্যাসিনো মেম্বার নিয়ে কাজ করতে হয়, পকেটমার নিয়ে কাজ করতে হয়। তারা কেউ হয়তো ভোটার, কেউ হয়তো কমিশনার হয়ে যায়। গুলিস্তান মহলস্নায় হকারদের কাছ থেকে টাকা নেয়, কিছুদিন পরে দেখা যায় যে সে একজন নেতা। প্রথমে পাতি নেতা, তারপরে উপনেতা, পূর্ণ নেতা, তারপরে কমিশনার। এগুলোও তো আমাদেরকে দেখতে হয়। এই ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে আমাদেরকে কাজ করতে হয়।'

জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে সিইসির তদবিরও মাঝে মাঝে শোনা হয় না উলেস্নখ করে তিনি বলেন, 'স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র প্রস্তুত করার পেছনে চারটি কমিটি কাজ করছে। কমিটিগুলো অত্যন্ত শক্তিশালী। আর তারা এমন শক্তিশালী যে, আমার কথাও শোনে না। আমি দুয়েকটা তদবির করলে মাথা এদিক-ওদিক নাড়ায়। কমিটি এমন শক্তিশালী।'

তিনি আরও বলেন, 'বাংলাদেশে নির্বাচনের সময় পোস্টারে আকাশ দেখা যায় না, শহরের বাতাস বন্ধ হয়ে যায়।' তিনি এই সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান।

নতুন কর্মকর্তাদের নির্বাচনকালীন চ্যালেঞ্জকে অতিক্রম করতে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে সিইসি বলেন, 'প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষিত হতে হবে। নির্বাচনের সময় রাজনীতিবিদসহ অন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে দক্ষ সমন্বয়কের মতো কাজ করতে।'

এ সময় নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে কর্মকর্তাদের আইন ও বিধিমালা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান অর্জনেরও আহ্বান জানান তিনি।

পঞ্চ 'নি' তত্ত্ব

এদিকে, বিভিন্ন সময় নানা বক্তব্য দিয়ে ও কর্ম সম্পাদন করে আলোচনায় থাকা জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার এবার অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য পঞ্চ 'নি' তত্ত্ব দিলেন।

আগারগাঁওয়ের নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে কর্মশালায় উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনী ব্যবস্থাপনাকে আমি ৫টি 'নি' দিয়ে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করেছি।

প্রথম 'নি' হচ্ছে 'নিশ্চয়তা'-এটা নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার নিশ্চয়তা। এ নিশ্চয়তার অর্থ ভোটার ও রাজনৈতিক দলের আস্থা সৃষ্টি।

দ্বিতীয় 'নি' হচ্ছে 'নিরপেক্ষতা'-নির্বিঘ্নে ভোট প্রদান ও ভোট কার্যক্রম চালানোর প্রতিশ্রম্নতি। কমিশনের পক্ষে এই নিরপেক্ষতা অপরিহার্য।

তৃতীয় 'নি' হচ্ছে 'নিরাপত্তা'-এই নিরাপত্তা ভোটার, রাজনৈতিক দল ও অন্য অংশীজনের নিরাপত্তার প্রতিশ্রম্নতি। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কার্যকরভাবে নির্বাচনকালে কমিশনের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে নিয়ে আসা দরকার।

চতুর্থ 'নি' হচ্ছে 'নিয়ম-নীতি'-নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সবাইকে কঠোরভাবে বিধি-বিধান পরিচালনের আওতায় আনা প্রয়োজন।

পঞ্চম 'নি' হচ্ছে 'নিয়ন্ত্রণ'-নির্বাচন অবশ্যই নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে থাকতে হবে। স্বনিয়ন্ত্রণই নির্বাচন কমিশনের মূল কথা।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচনী ব্যবস্থাপনায় নিশ্চয়তা, নিরপেক্ষতা, নিরাপত্তা, নিয়ম-নীতি ও নিয়ন্ত্রণ কমিশনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি।

ইসি সচিব মো. আলমগীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা, নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম, বেগম কবিতা খানম ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহাদাত হোসেন চৌধুরীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

নতুন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তারা আইনের প্রতি অনুগত থেকে কাজ করার আহ্বান জানান।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<88912 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1