শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

কামারপট্টির ঘরে ঘরে শেষ সময়ের ব্যস্ততা

যাযাদি রিপোটর্
  ২১ আগস্ট ২০১৮, ০০:০০
পশু জবাই ও মাংস কাটার প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনতে রাজধানীর কামারপট্টিগুলোতে ভিড় করেছেন ক্রেতারা Ñযাযাদি

রাত পোহালেই খুশির ঈদ। তাই ঈদের দিন পশু জবাইয়ের জন্য পছন্দসই ছুরি-চাপাতি-দা কিনতে ভিড় বেড়েছে রাজধানীর কামারপট্টিগুলোতে।

সোমবার রাজধানীর কারওয়ানবাজার, মিরপুর, মোহাম্মদপুরের কামারপট্টিগুলো ঘুরে দেখা গেছে, কামাররা ছুরি-চাপাতি তৈরি আর ঝালাইয়ের পাশাপাশি ক্রেতাদের সামলাতে পার করছেন ব্যস্ত সময়।

কামাররা জানান, কোরবানির আগে এই সময়টার জন্য তারা সারাবছর অপেক্ষায় থাকেন। আর এবার বিক্রি যা হচ্ছে, এতে তারা সন্তুষ্ট। ঈদের আগের দিন মঙ্গলবার বিকিকিনি আরও বাড়বে বলে তারা আশা করছেন।

কারওয়ানবাজারে ছুরি-চাপাতির অধর্শতাধিক দোকান রয়েছে। প্রতিটি দোকানেই ক্রেতারা আসছেন মাংস কাটার প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনতে। কেউ আবার পুরনো সামগ্রীগুলো ধার করিয়ে নিচ্ছেন।

কামারপট্টিতে স্থায়ী দোকানের পাশাপাশি ঈদ উপলক্ষে কাঠপট্টিতে খুচরা দোকান বসিয়েছেন ব্যবসায়ী আবদুল লতিফ।

তিনি বলেন, ‘ঈদে খুচরা বিক্রি বেশি হয়। সে কারণে মূল দোকানের বাইরে এই দোকান দিয়েছি। সামনে তো কাস্টমার আরও বাড়বে, বিক্রি যাতে বেশি করতে পারি, সে জন্যই আরেকটা দোকান বাড়ানো।’

লতিফ জানান, কেজি দরে এক একটি চাপাতি ৫০০ টাকা, বটি ৫০০-৬০০ টাকায় বিক্রি করছেন তিনি।

কামারপট্টির মা জননী ভোলা কমর্শালার বিক্রেতা রুহুল আমিন বলেন, লোহার মান ও ওজন ভেদে দামেও পাথর্ক্য হয়। তিনি ৫০০-৭০০ টাকা কেজি দরে চাপাতি বিক্রি করছেন। আর বটি বিক্রি করছেন ৪০০-৮০০ টাকা কেজি দরে। একেকটি চাপাতি এক কেজি-দেড় কেজিও হয়। বটির ওজনও প্রায় একই রকম। যারা বড় কোরবানি দেয়, তারা বড়গুলো নেয়, আর অনেকে সাধারণগুলো নেয় একটু কম দামে।

বিক্রেতারা জানান, ছোট ছুরি ২০০-৩৫০ টাকা, বড় ছুরি ৩০০-৫০০ টাকা, চামড়া ছাড়ানোর ছুরি ৭০-১২০ টাকা, দা ৩০০-৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ঈদের আগের রাত পযর্ন্ত বিক্রি জমজমাট থাকবে বলে আশা করছেন মায়ের দোয়া হাডর্ওয়ারের বিক্রেতা আলমগীর হোসেন।

তিনি বলেন, ‘যারা সবসময় ব্যবহারের টাগের্ট করেন, তারা দাম দিয়ে হলেও ভালো জিনিস নিয়ে যান। আর যারা শুধু এই ঈদে ব্যবহার করবেন, তারা চলনসই জিনিস নেন।’

আলমগীর জানান, আকার ও লোহার মান ভেদে ৫০০-১২০০ টাকা দামের বড় ছুরি আছে তার দোকানে। আর জবাই করার ছুরির দাম ৮০০-১৫০০ টাকা।

কামারপট্টিতে চাপাতি কিনছিলেন কারওয়ানবাজারের ফল বিক্রেতা আসলাম। তিনি ঈদ করবেন গাজীপুরে গ্রামের বাড়িতে। বাড়ি যাবেন ঈদের আগের রাতে। এর আগে ‘টুকটাক’ কেনাকাটার মধ্যে এই চাপাতি কেনা।

রাজাবাজারের ফরহাদ হোসেন কোরবানির পশু জবাই ও মাংস কাটার প্রায় সব ধরনের সামগ্রী কেনার কথা জানালেন।

তিনি বলেন, ‘প্রতিবছরই টুকটাক কিনতে হয়। এবার একা কোরবানি দিচ্ছি। তাই নতুন সব কিনে নিলাম।’

মিরপুরের ১১ নম্বরের ইরানি ক্যাম্পের লোহাপট্টি, মিল্লাত ক্যাম্পের কামারপট্টিও এখন দারুণ ব্যস্ত। কামাররা দোকানে লাইন ধরে থরে থরে সাজিয়ে রেখেছেন বটি, দা, ছুরি ও চাপাতি। সেখান থেকে বেছে বেছে দরকারি সামগ্রীটি বেছে নিচ্ছেন ক্রেতারা।

ইরানি ক্যাম্পের লোহাপট্টির কামার ইদ্রিস আলী বলেন, সারাবছর তারা এই সময়টার অপেক্ষায় থাকেন।

তিনি বলেন ‘সারাবছর তো তেমন কাজ পাই না। আমাগো টাগের্টই থাকে কোরবানির ঈদ। গরু কাটাকাটি করবে। গোশত কাটতে তো ছুরি, চাপাতি ও বটি লাগবেই। কোরবানির আগে পুরো বছরের চেয়ে বেশি লাভ হয়।’

ইদ্রিস বলেন, রোববার রাতেও তার দোকানে কাজ চলেছে ৩টা পযর্ন্ত। আর ঈদের আগের রাতে কাজ চলবে সারা রাত। শেষ সময় অনেকে পুরনো ছুরি ও বটি ধার দিতে আনবেন। সেখান থেকেও পয়সা আসে, তাই কাউকে তারা ফিরিয়ে দেন না।

মিল্লাত ক্যাম্পের কামারপট্টির দোকানি শরফুদ্দিনও দা-ছুরিতে ধার দিয়ে কুলাতে পারছেন না।

১৯ বছর ধরে কামারের কাজ করা শরফুদ্দিন বলেন, ‘ঈদ যত আগায় কাজের চাপ ততো বাড়ে। নতুন বানানোর চেয়ে ধার দিতে আসে বেশি মানুষ।’

শরফুদ্দিন ৫০০-৭০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন লোহার ছুরি, চাপাতি ও বটি।

তিনি বলেন, ‘কোনোটা কেজি দরে বিক্রি করি, আবার কোনোটা পিস হিসেবে। একেকটার একেক রকম রেট।’

চাপাতি ৬৫০-৮৫০ টাকা, ছুরি ১০০-২০০ টাকা, ছোট বটি ৩৫০-৫০০ টাকা, বড় বটি ৬০০-১০০০ টাকায় বিক্রি করছেন বলে জানান শরফুদ্দিন।

মিল্লাত ক্যাম্পে ছুরি ও চাপাতি কিনতে আসা রাকেশ হোসেন বলেন, ‘এখন তো ওদের অনেক ডিমান্ড। দামও ১০০-১৫০ টাকা বেশি নিচ্ছে। কিছু তো করার নাই, নিতেই হবে। ছুরি, চাপাতি ছাড়া তো গরু কাটার উপায় নাই।’

মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে দা-ছুরি-বটির দোকান রয়েছে শেখ মোহাম্মদ তোতা মিয়ার। কোরবানির ঈদের কথা মাথায় রেখে আগভাগেই ছুরি, বটি ও চাপাতি বানিয়ে রেখেছেন তিনি। ক্রেতারা চাইলে নতুন করেও তৈরি করে দিচ্ছেন।

তবে নতুন অডার্র নেয়ার চেয়ে ধার দেয়ার কাজই বেশি করছেন তোতা। এতে লাভও থাকছে বেশি।

‘একটা বটি বিক্রি করলে বেশি হলে ৫০-৬০ টাকা লাভ হয়। কিন্তু ধার দিতে ১০০-১৫০ টাকা নেই। এতে লাভটা থাকে বেশি। আমরা তো সারাবছর এই সময়টার আশায় থাকি। এই লাভ দিয়া সারাবছর চলতে হয়।’

ছোট ছুরি ৪০-৫০ টাকায়, বটি-চাপাতি ১০০-২০০ টাকায় ধার করে দিচ্ছেন বলে জানান তোতা।

এদিকে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরেও অনেক বিক্রেতা ছুরি-বটি-চাপাতি ধার করে দিচ্ছেন। ‘ছুরি ধার করাই, বটি ধার করাই’ হঁাক দিতে দিতে ক্রেতাদের বাড়ি বাড়ি পেঁৗছে যাচ্ছেন তারা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<8818 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1