শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আমানত সংগ্রহই ব্যাংক খাতের বড় চ্যালেঞ্জ

যাযাদি রিপোর্ট
  ২৭ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

চলতি বছরের এপ্রিল থেকে ব্যাংক ঋণের সুদহার এক অংকে নামিয়ে আনা হবে। যা বাস্তবায়নে প্রয়োজন ছয় শতাংশে আমানত। এটি সংগ্রহ করাই ব্যাংক খাতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলছেন বিশ্লেষক, ব্যাংকার ও খাত সংশ্লিষ্টরা।

ব্যবসায়ীদের দাবি ও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাংক ঋণের সুদহার এক অংকে নামিয়ে আনতে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সঙ্গে ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) এবং ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) বৈঠক হয়। উভয় পক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, চলতি বছরের এপ্রিল থেকে সব ধরনের ঋণের সুদহার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ হবে। আর সাধারণ জনগণকে আমানতের বিপরীতে ছয় শতাংশের বেশি সুদ দেবে না। তবে ক্রেডিট কার্ডে সুদহার বেশি হবে। এসব সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে ১ এপ্রিল থেকে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রজ্ঞাপন জারি করবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, বর্তমানে বেশিরভাগ বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক বৃহৎ ও মাঝারি শিল্পে ১০ শতাংশের বেশি সুদে ঋণ বিতরণ করছে। অনেক ব্যাংক ১৬-১৭ শতাংশ সুদেও ঋণ দিচ্ছে। ক্ষুদ্র শিল্পে সর্বোচ্চ ১৮ ভাগ হারে ঋণ বিতরণ করছে কোনো কোনো ব্যাংক।?

গবেষণা সংস্থা বিআইডিএসের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো গড়ে এখন ৯-১১ শতাংশে সুদে আমানত নিচ্ছে আর ১৩-১৫ শতাংশ হারে ঋণ বিতরণ করছে।

এমন পরিস্থিতিতে ৯ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণের জন্য ছয় শতাংশ সুদে আমানত নিশ্চিত করতে হবে। এ হারে আমানত সংগ্রহ করাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, জোর করে সুদহার কমানো যায় না। একটি নিয়মের মধ্যে তা করতে হয়। ব্র্যাক ব্যাংকের এই চেয়ারম্যান বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ছয়-নয় সুদহার বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে। কারণ বেসরকারি ব্যাংকগুলোর পরিচালন ব্যয় অনেক বেশি। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে গবেষণা উন্নয়ন ও তথ্য-প্রযুক্তিগত অনেক অর্থ ব্যয় করতে হয় এত সব খরচের পর কম সুদে ঋণ দিলে আয় কমে যাবে বলে জানান তিনি।

ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন এবিবির সাবেক সভাপতি ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী (সিইও) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, বর্তমানে দেশের বেশিরভাগ অর্থনৈতিক সূচক ভালো রয়েছে। এখন ব্যাংকের সুদহার কমানো হচ্ছে। আশা করছি এতে বেসরকারি ঋণ প্রবাহ বাড়বে। তবে এক্ষেত্রে প্রয়োজন ছয় শতাংশ হারে আমানত নিশ্চিত করা। এটা বাস্তবায়ন করাই ব্যাংকগুলোর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

তিনি আরও বলেন, সুদহার কমলে ঋণের চাহিদা বাড়বে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ছয় শতাংশ সুদে আমানত পাওয়া খুব কঠিন। তাই কম সুদে আমানত সংগ্রহ করতে না পারলে চাহিদা অনুযায়ী ঋণ দেয়া সম্ভব হবে না।

মাহবুবুর রহমান জানান, সিঙ্গেল ডিজিটে ঋণ নামিয়ে আনতে এখন ব্যাংকগুলোকে পরিচালন ব্যয়সহ বিভিন্ন খরচ কমাতে হবে। নন পারফরমিং লোন (এনপিএল) কমাতে হবে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়াতে হবে। এসব ক্ষেত্রে সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে। ব্যাংক পরিচালনায় যেসব ক্ষেত্রে বাধার সম্মুখীন হয় তা দূর করে সরকারকে বিনিয়োগ-বান্ধব ব্যাংক পলিসিতে জোর দিতে হবে। আর এসব সহযোগিতা পেলেই কম সুদে ঋণ বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।

এক্সিম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী ড. মোহাম্মদ হায়দার আলী মিয়া বলেন, বর্তমানে ব্যাংক খাতের বড় চ্যালেঞ্জ ছয়-নয় সুদহার বাস্তবায়ন করা। সরকার চাচ্ছে সিঙ্গেল ডিজিটে ঋণের সুদ হার নামিয়ে আনা। এটি করতে হলে অবশ্যই ছয় শতাংশে সুদহার নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে সংকটে পড়বে ব্যাংক খাত।

তিনি বলেন, ব্যাংকগুলোকে বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ড দিতে হয়। ব্যাসেল থ্রি বাস্তবায়নে বেশকিছু শর্ত পরিপালন করতে হয়। এছাড়া ব্যাংকগুলোর বিদেশি প্রতিনিধির কিছু চাহিদা রয়েছে তা পূরণ করতে হয়। এটি না করতে পারলে বিদেশি ব্যাংকগুলো ব্যবসা-বাণিজ্য কমিয়ে দেবে। এ ক্ষেত্রে ব্যবসায় টিকে থাকা কঠিন হবে। আমরা সরকারের কাছে বিষয়গুলো তুলে ধরেছি, সরকার আমাদের সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পেলে ৬-৯ সুদহার বাস্তবায়ন করতে পারব বলে জানান তিনি।

এদিকে সিঙ্গেল ডিজিটে ঋণের সুদহার নামাতে ব্যাংককারদের দাবি অনুযায়ী সরকারের আমানতের সুদহার নির্দিষ্ট করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এতে সরকারের নিজস্ব অর্থের ৫০ শতাংশ বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকে রাখার বিধান রাখা হয়েছে। ব্যাংকের সুদহার বেঁধে দেয়ার পর আমানতকারীদের সবাই যাতে সরকারি ব্যাংকের দিকে ঝুঁকে না পড়েন, তা ঠেকাতে বেসরকারি ব্যাংকে ডিপোজিটে মুনাফা আধা শতাংশ বেশি রাখা হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অর্থ বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকে আমানত হিসেবে রাখলে সর্বোচ্চ সুদ পাবে ছয় শতাংশ। আর এই অর্থ যদি সরকারি ব্যাংকে আমানত হিসেবে রাখে তাহলে সর্বোচ্চ সুদ পাবে সাড়ে পাঁচ শতাংশ। অর্থাৎ বেসরকারি ব্যাংকে সুদ বেশি পাবে আধা শতাংশ।

জারিকৃত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, এডিপি এবং পরিচালন বাজেটের আওতায় প্রাপ্ত অর্থ, স্বায়ত্তশাসিত ও আধা-স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা এবং সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানির নিজস্ব তহবিলের উদ্বৃত্ত অর্থের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাংলাদেশে ব্যাংকিং ব্যবসায় নিয়োজিত বেসরকারি ব্যাংক অথবা অব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান অথবা উভয় ধরনের প্রতিষ্ঠানে আমানত রাখার জন্য নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

এদিকে এর আগেও ছয়-নয় বাস্তবায়নের জন্য করপোরেট ট্যাক্স কমানোসহ বেশকিছু সুবিধা নেয় বেসরকারি ব্যাংকগুলো। কিন্তু প্রতিশ্রম্নতি দিয়েও তা বাস্তবায়ন করেনি। উল্টো ঋণের সুদ বাড়িয়েছে। তবে এবার ছয়-নয় বাস্তবায়নে কঠোর রয়েছে সরকার।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<86152 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1