বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
বিদু্যৎস্পৃষ্টে তিনজনের মৃতু্যর ঘটনা

মাটিতে এখনো পোড়া গন্ধ

নতুনধারা
  ২৪ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট

রাজধানীর রায়েরবাজারের বারইখালীতে বুড়িগঙ্গার তীরে সীমানা পিলার বসানোর পাইলিংয়ের সময় বিদু্যৎস্পৃষ্টে তিনজনের মৃতু্যর ঘটনা এক দিন পার করেছে। ঘটনাস্থলের মাটিতে এখনো রয়ে গেছে পোড়া গন্ধ। ছোপ ছোপ কালো দাগ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে চারদিকে।

মারা যাওয়া ঝড়ু শেখ (৫৫), তার ভাই সাইফুল শেখ (৪৫) ও মনজু মিয়ার (৩৫) পরিবারের পক্ষ থেকে অপমৃতু্যর মামলা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, যেখানে তিনজন নিহত হয়েছেন, সেখানকার মাটি থেকে এখনো পোড়া গন্ধ বের হচ্ছে।

নিহত ব্যক্তিদের সহকর্মীরা জানালেন কী ঘটেছিল। ঘটনাস্থলের এ জায়গায় তাদের সঙ্গে কাজ করছিলেন জনাদশেক শ্রমিক। এর মধ্যে কয়েকজনের হাতে ছিল বাঁশ। পাঁচজন মিলে ২০ ফুট দীর্ঘ তিনটি লোহার পাইপ পাইলিংয়ের জন্য খাড়া করছিলেন। তিনটি পাইপের মাথা একসঙ্গে ছোট একটি রড দিয়ে আটকানো ছিল। লোহার পাইপগুলো দাঁড়া করানোর সঙ্গে সঙ্গে ওই তারের সঙ্গে লেগে যায়। উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বিদু্যতের তার স্পার্ক করে। স্পার্ক করার সঙ্গে সঙ্গে পাঁচজনের মধ্যে একজন সবার আগে ছিটকে পড়েন। তার নাম আবু বকর। বাকি চারজনের মধ্যে তিনজন মারা যান।

হাসপাতালে কথা হয় আবু বকরের সঙ্গে। তিনি জানান, সকালে শ্রমিকরা একসঙ্গে বসে ভাত খান। ঘটনাস্থলের ২০০ মিটার দূরে তাঁবু টানিয়ে থাকেন তারা। বুধবার সকাল ১০টার দিকে অন্য দিনের মতো ভাত খেয়ে তিনটা পাইপ পাইলিংয়ের জন্য খাড়া করেন তারা। তিনি বলেন, 'বিদু্যতের তার থেকে দেড়-দুই ফুট দূরে ছিল পাইপের মাথাগুলো। বিদু্যতের টানে পাইপটা হঠাৎ করে খাঁড়া হয়ে যায়। চুম্বকের মতো টেনে ধরল আমাদের। আমি ছিটকায়ে পড়ে গেলাম। ১৫ মিনিট জ্ঞান ছিল না। তারপর কী হয়েছে, আমি আর বলতে পারব না। এখনো পর্যন্ত আমার শরীর ঝিম হয়ে আছে। পায়ে ব্যথা। সারা শরীর ব্যথা।'

আরেক সহকর্মী আরিফ বলেন, 'একজন ছিটকায়ে পড়ে গেছে ঠিকই, বাকি তিনজনও মাটিতে শুয়ে পড়েন। তবে পাইপের গোড়ার সঙ্গে তিনজনের পা লেগে ছিল। ফলে তারা পুড়ছিলেন। আমরা কয়েকজন শুকনা বাঁশ নিয়ে ওই পা ছাড়ানোর চেষ্টা করি। মিনিট তিনেক আটকে থাকার পরে মনে হলো তাদের শরীর থেকে সব রক্ত শূন্য হয়ে গেল। তখন আপনাআপনি পা পাইপ থেকে সরে যায়।'

নিহত ব্যক্তিদের সহকর্মীরা বলেন, গতকাল (বুধবার) প্রচন্ড কুয়াশা ছিল। মাটিও ছিল ভেজা। পাইপের ওপরও কুয়াশার পানি পড়ে ভেজা ভেজা ছিল। সব মিলিয়ে বিদু্যৎবাহিত হওয়ার একেবারে অনুকূল পরিবেশ। এভাবেই কাজ করে আসছি। নদীর তীরে খুঁটি বসানোর আগে পাইলিংয়ের কাজ করি আমরা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিন মাস ধরে এই কাজ করি।

তারা বলেন, কাজের ধরন অনুযায়ী বেতন মাসে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা। তবে তারা বেতনের অংশ থেকে প্রতিদিন খোরাকিসহ তিনশ টাকা করে নেন তারা। বাকি টাকা মাস শেষে নেন। নিহত ঝড়ু শেখের প্যান্টের পকেটে তাদের খোরাকির ৪৫ হাজার টাকা ছিল। সেই টাকা কোথায় গেছে, তার সন্ধান পাওয়া যায়নি।

নিহত মনজুর বাড়ি বগুড়ার ধুনট উপজেলার তারাকান্দি গ্রামে। মনজুরের এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে। মনজুর চাচা ইয়াছিন বলেন, মনজু পেশায় একজন বাসচালক। লাইসেন্স নবায়নের জন্য আবেদন করেছিলেন। সব কাজ শেষ কেবল ফিঙ্গারিং বাকি ছিল। বেকার বসে থাকার চেয়ে এখানে শ্রমিকের কাজ শুরু করেন।

হাজারীবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকরাম আলী বলেন, এ ঘটনায় অপমৃতু্যর মামলা হয়েছে নিহত তিনজনের পরিবার থেকে। লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। ভূমি থেকে ১০-১২ ফুট ওপর দিয়ে ১১ হাজার কেভি বিদু্যতের ডিপিডিসির সরবরাহ লাইন ছিল। শ্রমিকরা কাজ করার সময় লোহার পাইপ ওই বিদু্যতের লাইনে জড়িয়ে বিদু্যতায়িত হন এবং তিনজন দগ্ধ হয়ে মারা যান। এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটি গঠন করার জন্য ডিপিডিসিকে বলা হবে। ঘটনা তদন্তে কারও গাফিলতি থাকলেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, আগে মাটি থেকে তারের দূরত্ব অনেক বেশি ছিল। নদীর পাড়ে অবৈধভাবে মাটি ভরার কারণে এই ব্যবধান কমে এসেছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<85738 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1