শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

তাবিথের ভোটের প্রচারে ফখরুল

দুই-একদিনের মধ্যেই ইশতেহার: তাপস তরুণরাও নেতৃত্ব দিতে পারে : ইশরাক
যাযাদি রিপোর্ট
  ২১ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০
আপডেট  : ২১ জানুয়ারি ২০২০, ০০:২৯
সোমবার মিরপুর এলাকায় উত্তর সিটির মেয়রপ্রার্থী তাবিথের পক্ষে গণসংযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল। খিলগাঁওয়ে দক্ষিণের মেয়রপ্রার্থী ফজলে নূর তাপস এবং সেগুনবাগিচায় ইশরাক হোসেনের প্রচারণা -যাযাদি

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দল মনোনীত মেয়রপ্রার্থী তাবিথ আউয়ালের জন্য ভোট চাইলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ঢাকায় আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরুর ১০ দিন পর এই প্রথম দলের সর্বোচ্চ পর্যায়ের কোনো নেতা ধানের শীষের প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইতে নামলেন। সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় ৭ নম্বর ওয়ার্ডে মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামের পাশে বাইতুল মোশাররফ জামে মসজিদের কাছ থেকে বিএনপি মহাসচিব গণসংযোগ শুরু করেন। সেখানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'এই নির্বাচনকে আমরা আমাদের দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য, গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি, জনগণকে এখানে সম্পৃক্ত করার আন্দোলন হিসেবে নিয়েছি। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বিএনপি জনগণকে সংগঠিত করে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পক্ষে নিয়ে যেতে চায়।' তাবিথের আউয়ালের বিজয়ের আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, 'যে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। আমরা মনে করি, অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন হলে অবশ্যই তাবিথ আউয়াল বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে।' নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, 'এই নির্বাচন কমিশন এখন পর্যন্ত তাদের যে দায়িত্ব তা সুচারুরূপে পালন করতে পারেনি। নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তন তাদের অযোগ্যতার আরেকটা প্রমাণ। তাদের দেখা উচিত ছিল এই তারিখের সাথে সরস্বতী পূজার বিষয়টা সম্পর্কিত।' পরে তাবিথ আউয়ালকে নিয়ে মির্জা ফখরুল হেঁটে হেঁটে ভোটারদের কাছে যান। এ সময় রাস্তার দুই পাশে নানা বয়সের মানুষের হাতে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীর লিফলেট তুলে দেন তিনি। ধানের শীষ হাতে নিয়ে তাবিথও রিকশাচালক, ঠেলাগাড়ি চালক, দোকানদার, পথচারীর কাছে গিয়ে দোয়া ও ভোট চান। এ সময়ে এই সড়কে মানুষের ঢল নামে। নেতাকর্মীরা তুমুল করতালি দিয়ে 'তাবিথ ভাই এগিয়ে চলো, মিরপুরবাসী তোমার সাথে', 'মুক্তি মুক্তি মুক্তি চাই, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই' ইত্যাদি স্স্নোগান দেয়। বিএনপি মহাসচিব ৪৫ মিনিট নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর পর দলের কার্যালয়ের উদ্দেশে রওনা দেন।

আমি উন্নয়নের বার্তা দেব: আতিকুল

আসন্ন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে নির্বাচিত হলে ঢাকা ওয়াসাসহ সকল সেবা সংস্থাকে সমন্বয় এবং জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে গুরুত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়রপ্রার্থী আতিকুল ইসলাম।

তিনি বলেন, মানুষের প্রত্যাশা সকল সেবা সংস্থার কাজ ত্বরিত গতিতে হোক, ভোগান্তি কম হোক। আমরা নির্বাচিত হলে সবার আগে সকল সেবা সংস্থার মধ্যে সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করব। নির্বাচিত হলে সিটি করপোরেশনকে যেমন জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে চাই, তেমনি ওয়াসাসহ সকল সেবা সংস্থাকেও জবাবদিহিতার মধ্যে আসতে হবে।

সোমবার খিলক্ষেত রেলগেট এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা ও গণসংযোগের সংক্ষিপ্ত পথসভায় তিনি এ প্রতিশ্রুতি দেন।

বিএনপি মনোনীত মেয়রপ্রার্থী তাবিথ আউয়ালের অভিযোগ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আতিকুল ইসলাম বলেন, আমার প্রতিপক্ষ, আমার ভাতিজা তাবিথ আউয়াল বলেছেন, আমি আচরণবিধি লঙ্ঘন করছি। উনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের কথা বলবেন, আর আমি বলব কীভাবে এলাকার উন্নয়ন করা যায়। আমি কোনো অভিযোগ করতে চাই না, আমি চাই মানুষের সমস্যা কীভাবে সমাধান করা যায়। কাজেই প্রতিপক্ষ অভিযোগ করবে, আর আমি উন্নয়নের বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছে দেব।

তিনি বলেন, মানুষ ভোগান্তির জন্য সিটি করপোরেশনের কাছে তাদের সমস্যার কথা বলবে, মানুষ চায় সিটি করপোরেশন সমন্বয় করুক। তাই আমরা চেষ্টা করব সকল সেবা সংস্থাকে কীভাবে জবাবদিহিতার মধ্যে আনা যায় সে বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে।

এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে আতিকুল ইসলাম বলেন, আপনাদের ভোটে যদি নির্বাচিত হই তাহলে অবৈধ দখল উচ্ছেদ করব। এখানে কোনো বাজার নেই, রাস্তার ওপর বাজার বসে। অবশ্যই একটি এলাকার জন্য বাজার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই কথা দিতে চাই, যদি নির্বাচিত হই এই এলাকায় একটি অত্যাধুনিক বাজার, শিশুদের জন্য খেলার মাঠ, একটি কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ করে দেব ইনশাআল্লাহ্।

তাপসের ইশতেহার দুই-একদিনের মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়রপ্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস আগামী দুই-একদিনের মধ্যে তার নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশের আশা করছেন। সোমবার দুপুরে খিলগাঁও জোড়াপুকুর এলাকায় নির্বাচনী গণসংযোগের শুরুতে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, 'ঢাকাবাসীর উদ্দেশ্যে আমরা যে উন্নয়নের রূপরেখা দিয়েছি আমি বিশ্বাস করি তারা এটাকে সাদরে গ্রহণ করেছেন। এভাবে উন্নয়নের রূপরেখা এবারেও কেউ দেয়নি, এর আগে কখনো কেউ দেয়নি। সেই নির্দিষ্ট রূপরেখার আওতায় উন্নত ঢাকা গড়ার বিস্তারিত আমরা আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রকাশ করব। কিন্তু এ পর্যন্ত আমরা যেগুলো ঢাকাবাসীর মাঝে তুলে ধরেছি, তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে গ্রহণ করেছে।' কবে নাগাদ ইশতেহার ঘোষণা করা হবে জানতে চাইলে তাপস বলেন, 'আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়নের কার্যক্রম চলছে। নির্বাচন পরিচালনা কমিটি এর ওপরে কাজ করছে। আমরা আশা করছি দুই-একদিনের ভিতরে আমরা পূর্ণাঙ্গ ইশতেহার ঢাকাবাসীর সামনে তুলে ধরতে পারব।' বিএনপির আপত্তি থাকলেও রাজধানীবাসী ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) সাদরে গ্রহণ করেছে বলে মনে করেন তিনি। তাপস বলেন, 'বিএনপি প্রার্থীর নির্বাচন ঢাকাবাসীর উন্নয়নের জন্য নয়, ঢাকাবাসীকে সেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য নয়, কষ্ট লাঘবের জন্য নয়, ঢাকাবাসীকে উন্নত ঢাকা উপহার দেওয়ার জন্য নয়। বরং তারা বারবার বলছেন এটা তাদের আন্দোলনের একটি অংশ এবং তাদের নেত্রীকে মুক্ত করার আন্দোলনের অংশ হিসেবে তারা নির্বাচনকে দেখছে। সুতরাং আমি মনে করি না যে ঢাকাবাসী সেটাকে গ্রহণ করবে। এখন তারা ইভিএমের কথা বলছেন। তবে আমি মনে করি না এ ব্যাপারে ঢাকাবাসীর কোনো শঙ্কা রয়েছে। আমি মনে করি, আধুনিক প্রযুক্তি সবাই সাদরে গ্রহণ করেছে। একটি সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে ঢাকাবাসী তাদের সেবক নির্বাচিত করবেন।' ঢাকায় বায়ুদূষণ রোধে কোনো পরিকল্পনা রয়েছে কি না এমন প্রশ্নে নৌকার প্রার্থী বলেন, 'অবশ্যই পরিকল্পনা রয়েছে। সুন্দর ঢাকার যে রূপরেখা আমরা দিয়েছি সেখানে আবারও সবুজ-শ্যামল ঢাকা হিসেবে আমরা প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। আমরা এখন বায়ু দূষণে আক্রান্ত, সুন্দর ঢাকা করার মাধ্যমে আমরা সকল দূষণ রোধ করব।' তরুণরাও নেতৃত্ব দিতে পারে : ইশরাক ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়রপ্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন বলেন, 'সরকারদলীয় প্রার্থী আমার বয়স নিয়ে সমালোচনা করেন। আমি তরুণ সমাজকে বলব, আপনারা আমার সঙ্গে থাকবেন, আমাকে ভোট দেবেন, আমরা দেখিয়ে দেব যে, তরুণরাও নেতৃত্ব দিতে পারে।' সোমবার সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ১১তম দিনের প্রচারণা শুরুর আগে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সামনে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সভাপতি রফিকুল আলম মজনু ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা শাহিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক বলেন, 'ঢাকা শহরকে একটি বসবাসের অযোগ্য নগরীতে পরিণত করা হয়েছে। এই সরকার দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকেও এর পরিবর্তন করতে পারেনি। তাই এখন একটি পরিবর্তন দরকার। আপনারা যদি আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেন আমি এই ঢাকা শহরকে সুন্দর একটি বাসযোগ্য শহরে পরিণত করার পাশাপাশি আমাদের দলের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের যে আন্দোলন-সংগ্রাম চলছে তা ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে প্রাণপণ কাজ করে যাব।' এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ইশরাক হোসেন ঢাকার সাবেক সফল মেয়র সাদেক হোসেন খোকার সুযোগ্য সন্তান। আমি ঢাকার মেয়র ছিলাম, সাদেক হোসেন খোকা ঢাকার মেয়র ছিলেন। তখন ঢাকার এই পরিণতি ছিল না। ঢাকা একটি গোছানো শহর ছিল। তাই আমি বলব ইশরাক একজন যোগ্য প্রার্থী। 'আপনারা তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন। সিটি করপোরেশন পরিচালনায় আমার যে অভিজ্ঞতা ও সাদেক হোসেন খোকার যে অভিজ্ঞতা তা সমন্বয় করে ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনের মাধ্যমে একটি সুন্দর ঢাকা শহর গড়ে তুলব' যোগ করেন তিনি। নগরবাসী পরিবর্তন চায় হাজী মিলন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) জাতীয় পার্টি মনোনীত মেয়রপ্রার্থী হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন বলেছেন, বড় দুটি দল (আওয়ামী লীগ ও বিএনপি) বারবার নির্বাচিত হয়ে ঢাকাবাসীর উন্নতি হয়নি। তাই মানুষ পরিবর্তন চায় আর জাতীয় পার্টিই পারে এ পরিবর্তন এনে দিতে। ঢাকাবাসী শান্তিতে বসবাস করতে চায়। এরশাদ শাসনামলে মানুষ শান্তিতে ছিল। ভোটারা যদি ভোট দিতে পারে তাহলে নগরবাসী লাঙ্গলে ভোট দেবে। লাঙ্গল শান্তির প্রতীক। সোমবার রাজধানীর নবাবগঞ্জ, বাটা মসজিদ, আজিমপুর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহবাগ, বাংলামোটর, মগবাজার, মৌচাক, শাহজাহানপুর, কমলাপুর স্টেশন, মানিক নগর, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, শনিরআখড়ায় নির্বাচনী গণসংযোগ ও প্রচারণায় অংশ নেওয়ার সময় তিনি এসব কথা বলেন। হাজী মিলন বলেন, গণসংযোগকালে আমি ঢাকাবাসীর ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। জনগণ আমাকে লাঙ্গল মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করলে আমি নগরবাসীকে পরিচ্ছন্ন ও বাসযোগ্য ঢাকা উপহার দেব। এ সময় জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ, ভাইস চেয়ারম্যান মোস্তফা আল মাহমুদ, হাজী মিলনের ছেলে রাকিব উদ্দিন আহমেদ আবির, মহানগর জাপা নেতা আকতার হোসেন আউয়াল, সাকিব উদ্দিন শিফান, কামাল হোসেন, সাবের হোসেন, শাকিল হোসেন, মো. লিটনসহ নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। প্রচারণায় সময় নেতাকর্মীরা বাদ্যযন্ত্র, লাঙ্গলসহ নেচে নেচে ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে