বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জারবেরা ফুলের 'গোলাপ গ্রাম'

নতুনধারা
  ১২ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক

কাগজে-কলমে নাম বিরুলিয়া হলেও লোকমুখে 'গোলাপ গ্রাম' নামেই বেশি পরিচিত সাভারের এই এলাকাটি। যত দূর চোখ যায় ফুটে রয়েছে হাজার হাজার গোলাপ। তবে বেশ কিছুদিন থেকেই গোলাপের পাশাপাশি বিদেশি ফুল জারবেরাও চাষ হচ্ছে এ গ্রামে।

বিদেশি জাতের জারবেরা ফুল ক্ষেত থেকে তোলার পর ১০ থেকে ১৫ দিন তাজা থাকে, বাজারে দামও ভালো। সে কারণে বিরুলিয়ার চাষিরা অধিক লাভের আশায় গোলাপের পাশাপাশি বিভিন্ন রঙের জারবেরা চাষ শুরু করেছেন। কেউ কেউ আবার গোলাপ বাদ দিয়ে মন দিয়েছেন শুধু জারবেরা চাষেই। যদিও এই ফুলের সব উপকরণ বিদেশ থেকেই আনতে হয়। তাছাড়া চাষে খরচও যথেষ্ট বেশি। তবুও লাভ বেশি পাওয়ায় বিত্তবান গোলাপ চাষিরা এখন জারবেরা চাষ করছেন।

সাভার উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ মৌসুমে সাভারে ৩০০ হেক্টর জমিতে প্রায় ৩০০ চাষি গোলাপসহ বিভিন্ন জাতের ফুল চাষ করছেন। এর মধ্যে ১৫ হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে জারবেরা ফুল। লাল, সাদা, হলুদ, গোলাপিসহ আটটি বাহারি রঙের জারবেরা চাষ হয় সাভারে। এর কোনো গন্ধ নেই। তবে গাছ থেকে তোলার পরও অমলিন থাকে অনেক দিন। এটি বিদেশি ফুল হওয়ায় চাষের জন্য প্রশিক্ষণেরও প্রয়োজন রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, প্রায় ২০ বছর ধরে বিরুলিয়া ইউনিয়নের শত শত একর জমিতে গাঁদা, গেস্নারিয়াস, গোলাপসহ নানা ধরনের ফুলের চাষ হচ্ছে। গত দুই-তিন বছর ধরে এ তালিকায় যুক্ত হয়েছে জারবেরা ফুলও।

দুই বছর আগে থেকে গোলাপ ছেড়ে এখন পুরোপুরিভাবে জারবেরা চাষ করছেন ফুলচাষি মনিরুজ্জামান পলাশ। তিনি জানান, প্রায় চার বিঘা জমির জন্য ভারত থেকে প্রতিটি বীজ ৭০ টাকা দরে এনে ২০১৭ সালে প্রথম জারবেরা চাষ শুরু করেন তিনি। পরে লাভ ভালো হওয়ায় ২০১৮ সালের শেষের দিকে আরও দুই বিঘা জমিতে এর চাষ করেন। এই ছয় বিঘা জমির ফুল ক্ষেতের ওপর ছাউনি দিতে আমদানি করা হয় বিশেষ ধরনের পলিথিন, যা তৈরি হয় ইউরোপের দেশগুলোতে। রোপণের ৯০ দিন পর (তিন মাস) গাছে ফুল আসতে শুরু করে। এক গাছ থেকে ধারাবাহিকভাবে দুই-তিন বছর ফুল পাওয়া যায়। জারবেরা গাছের জীবনকালে প্রায় ৪০ থেকে ৫০টি ফুল পাওয়া যায়।

পলাশ আরও জানান, বীজরোপণ, ক্ষেতের চারপাশে বাঁশের বেড়া দেওয়া, ছাউনি, সার, ওষুধ ও শ্রমিক খরচসহ তার এ পর্যন্ত ২২ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। ক্ষেতের এই ফুল পরিচর্যায় নয়জন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করেন।

সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, শুধু মনিরুজ্জামান পলাশেরই নয়, আজিজুল, মনিরুল হকসহ আরও অনেকের বাগানেই ফুটে রয়েছে লাল, সাদা ও হলুদসহ নানা রঙের জারবেরা ফুল। আবার কিছু কিছু ক্ষেতে গোলাপসহ নানা ফুলের গাছ কেটে বাঁশের বেড়া ও ভারত থেকে আনা পলিথিন দিয়ে জারবেরা চাষের জন্য ছাউনি দেওয়া হচ্ছে। ক্ষেতে ফুটে থাকা জারবেরা ফুলও সংগ্রহ করছেন কেউ কেউ। সেগুলো বাজারজাত করতে একসঙ্গে করে আঁটি বানাচ্ছেন কয়েকজন।

শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গোলাপ চাষের চেয়ে তুলনামূলক লাভ বেশি হওয়ায় বিরুলিয়ার প্রায় ১৫ হেক্টর জমিতে অন্তত ১০টি বাগানে জারবেরা ফুলের চাষ হচ্ছে। গোলাপ গ্রামে কাজ করে মাসে আট-নয় হাজার টাকা পাওয়া যায়। আর জারবেরা বাগানে কাজ করলে পাওয়া যাচ্ছে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা।

মনিরুজ্জামান পলাশের ফুলের বাগান দেখে উৎসাহিত হয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বিরুলিয়া ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মনিরুল হক তিন বিঘা জমিতে গত বছরের প্রথম দিকে জারবেরা চাষ শুরু করেন। প্রথম দিকে তেমন লাভ না পেলেও এখন ফুল বিক্রি করে বেশ ভালোই লাভবান হচ্ছেন তিনি।

মনিরুল হক বলেন, এখানকার জারবেরা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে পাঠানো হয় রাজধানী শাহবাগ ও আগারগাঁওয়ের ফুল মার্কেটে। গত ছয় মাসে প্রায় আট লাখ টাকার ফুল বিক্রি করা হয়েছে। গাছগুলো গরমকালে ভালো ফলন দেয়। তাই শীতের সময় আগের তুলনায় কিছুটা কম ফুল ফুটছে। বর্তমানে প্রতিদিন সাতশ থেকে আটশ ফুল সংগ্রহ করা যাচ্ছে। একটি ফুল ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। চাহিদা অনুযায়ী প্রতিদিন এই ফুলক্ষেত থেকে সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

তবে কঠোর পরিশ্রম করে জারবেরার চাষ করলেও এখনো এর ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন মনিরুল।

তিনি বলেন, আমরা ফুলের ন্যায্য দাম পাই না। ঢাকার বাজারগুলোতে নেওয়ার পর ফুলের দাম কমে যায়। পাইকাররা কম দামে ফুল কিনে বেশি দামে বিক্রি করে। আমি প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করব, গোলাপ ফুলের মতো আমাদের জারবেরা ফুলের জন্যও একটি উন্মুক্ত মার্কেট করে দেওয়া হোক, যেন আমরা ন্যায্য দামে ফুল বিক্রি করতে পারি।

সাভার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজিয়াত আহমেদ বলেন, বাজারে গোলাপের দাম একটু কম হওয়ায় অনেকে বিদেশি ফুল জারবেরা চাষে ঝুঁকছেন। এটি বিদেশি ফুল হওয়ায় চাষ করতে গেলে অনেক খরচ। তাই বর্তমানে বিত্তবান চাষিরাই এর চাষ করছেন। শুধু বিরুলিয়াতেই নয়, সাভারের ভাকুর্তা এলাকাতেও জারবেরা চাষ হচ্ছে। আমরা সারাক্ষণই জারবেরা চাষিদের খোঁজ-খবর রাখি। বর্তমানে জারবেরা বিক্রি করে চাষিরা বেশ খুশি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<84031 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1