শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জাবিতে পরিযায়ীদের 'জলকেলি'

যাযাদি ডেস্ক
  ১০ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০
জাবির লেকে পরিযায়ী পাখি

লাল শাপলার ওপর জলের স্পর্শ আর খাদ্যের খোঁজে ব্যাকুল পরিযায়ী পাখিরা। সারাক্ষণ মাতিয়ে রাখছে পুরোলেক, এ যেন তাদেরই ভূমি। কোনো ধরনের তারবার্তার সংযোগ ছাড়াই প্রকৃতির বার্তা পৌঁছে যায় হাজার হাজার মাইল দূরে এসব পরিযায়ী পাখিদের কাছে। প্রকৃতি তার সন্তানদের সংরক্ষণ করে নিজ মহিমায়। এজন্য পরিযায়ী পাখিরা আবহাওয়ার প্রতিকূলে না থেকে চলে আসে তাদের নিরাপদ ভূমিতে। খাবার ও উষ্ণতার খোঁজে শীতপ্রধান দেশগুলো থেকে নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে আসে অসংখ্য প্রজাতির পরিযায়ী পাখি।

নাতিশীতোষ্ণ নিরাপদ ভূমি হিসেবে এই পরিযায়ী পাখিরা চলে আসে বাংলাদেশের জাবিতে। ফলে শীতকালে পরিযায়ী পাখিদের আগমনে মুখর হয়ে ওঠে এই সবুজ নগরী। নামের সঙ্গে নগর যুক্ত থাকলেও বিশ্বের অন্যতম কোলাহল আর ঘনবসতিপূর্ণ শহর ঢাকার অদূরে অবস্থিত এ ভূমিটি তুলনামূলক কোলাহল মুক্ত। ফলে পরিযায়ী পাখিদের জন্যও অনেকটা সুবিধার বসবাসের জন্য।

প্রতিবছর নভেম্বরের শেষে ও ডিসেম্বরের শুরুর দিকে উত্তরের শীতপ্রধান অঞ্চল সুদূর সাইবেরিয়া, চীন, নেপাল, জিনজিয়াং, মঙ্গোলিয়া অঞ্চল থেকে খাবার ও উষ্ণতার খোঁজে নাতিশীতোষ্ণ বাংলাদেশে আসে অসংখ্য প্রজাতির পরিযায়ী পাখি। এসব পাখির মধ্যে থাকে- সরালি, গার্গেনি, পিচার্ড, মানিকজোড়, মুরগ্যাধি, জলপিপি, নাকতা, কলাই, ফ্লাইপেচার, পাতারি, চিতা টুপি, লাল গুরগুটিসহ নানা প্রজাতি। এ বছর শীত শুরু হতে না হতেই, অক্টোবরের শুরু থেকেই বিপুল সংখ্যক পরিযায়ী পাখি আশ্রয় নিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। আর এসব পরিযায়ী পাখি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধি পায় দেশ-বিদেশ থেকে আগত দর্শনার্থীর সংখ্যা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তথ্যমতে, ১৯৮৬ সালে সর্বপ্রথম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিযায়ী পাখি আসে। তখন ক্যাম্পাসে ৯৮ প্রজাতির পাখি দেখা যেত। বর্তমানে ১৯৫ প্রজাতির পাখির দেখা মেলে। এর মধ্যে ১২৬টি দেশীয় প্রজাতির এবং ৬৯টি বিদেশি। এদের বেশিরভাগই হাঁস জাতীয় পাখি। এ ক্যাম্পাসে যেসব পাখি আসে সেসবের মধ্যে ৯৮ শতাংশই ছোট কিংবা বড় সরালি। আর বাকি দুই শতাংশ অন্য প্রজাতির পাখি।

লাল মাটি ছেঁদ করে গড়ে ওঠা সবুজের এই লীলাভূমিতে ছোট বড় মিলিয়ে ২৬টি লেক বা জলাশয় আছে। এর মধ্যে চারটি লেকে আবাস গড়ে হাজারো পরিযায়ী পাখি। যাদের অনেকেই ভালোবেসে অতিথি পাখিও বলে থাকে। সবুজ গাছপালা আর দিনভর লেকের জলে পাখিদের ভেসে বেড়ানো আর জলকেলি খেলা চলতেই থাকে। পুরোটা সময় তাদের খুনশুটি আর ছোটাছুটি মাতিয়ে রাখে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে।

কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে জাবির ঘুম ভাঙে এসব পাখির কিচিরমিচির শব্দে। সকাল গড়িয়ে দুপুর, দুপুর গড়িয়ে বিকাল, তারপর সন্ধ্যা। চলতে থাকে পাখিদের কিচিরমিচির ও দলবেঁধে ছুটে চলা। সন্ধ্যা নামার পরপরই লেকগুলোতে নেমে আসে পিনপতন নীরবতা। রাতে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ক্ষণিকের আবাস গড়ে তোলে গাছের ডালে। ভোর হতে না হতেই আবার শুরু হয়ে যায় তাদের ছুটে চলা। রক্তকমল লাল পদ্ম ও শাপলার বেষ্টিত লেকে খাবারের জন্য ছোটাছুটি। বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এবার বেড়েছে জাবিতে পরিযায়ী পাখি সংখ্যা।

পাখি বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে পাখি বিশেষজ্ঞ ও জাবির প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান বলেন, এ বছর একটা দীর্ঘসময় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ছিল। ফলে উৎপাত কম হয়েছে। আর এ কারণেই হয়তো বেড়েছে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা। তবে দর্শনার্থী এবং যানবাহনের উৎপাত কম থাকলে আরও বেশি পাখি আসবে বলে ধারণা করছি। এ বছর এখন পর্যন্ত ছোট সরালি, বড় সরালি এবং লেঞ্জা হাঁসের দেখা মিলছে। মানুষের উৎপাত কম থাকলে বৃদ্ধি পাবে পাখির সংখ্যা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, এবার কিছু সময় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষার্থী এবং দর্শনার্থী কম ছিল। ফলে অতিথি পাখির সংখ্যা বেড়েছে। এখন আমাদের এটা ধরে রাখার দায়িত্ব। বিগত বছরের ন্যায় আমরা এবারও কিছু উদ্যোগ নিয়েছি ব্যানার ফেস্টুনের মাধ্যমে সচেতনতা বাড়ানোসহ নিরাপত্তা কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের নির্দেশ দিয়েছি। যাতে করে কেউ এসব পাখিদের উৎপাত না করতে পারে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<83712 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1