শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ডেঙ্গু এখন 'সারা বছরের' রোগ

যাযাদি ডেস্ক
  ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে বাড়তে থাকা ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ডিসেম্বরে এসেও শেষ হয়নি। এখনো প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে নতুন ডেঙ্গু রোগী।

এ বছর ডেঙ্গুর জীবাণু বাহক এডিস মশার বিস্তার ঘটেছে দেশের প্রায় সব এলাকায়। এ কারণে এখন থেকে ডেঙ্গু সারা বছরই কমবেশি থাকবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

আগে এডিস মশার বিচরণ শহর এলাকাতেই বেশি ছিল। এখন গ্রামাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ায় আরও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। সেই সঙ্গে বিপদ এড়াতে দেশজুড়ে সারা বছর মশক নিধন কার্যক্রম চালানোর তাগিদ দিয়েছেন তারা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার হিসেবে, বছরের শুরু থেকে ১৩ ডিসেম্বর সকাল ৮টা পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ লাখ ৯২৩ জন। মশাবাহিত এ রোগে এখন পর্যন্ত ১৩৩ জনের মৃতু্যর তথ্য নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত এবং মৃতু্যর সংখ্যা- দুটোই বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ। এর আগে ২০০২ সালে সবচেয়ে বেশি ৬ হাজার ২৩২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। আর ২০০০ সালে সবচেয়ে বেশি ৯৩ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, গত কয়েক বছর ধরে ডেঙ্গুর প্রকোপ ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী মশা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ায় এ বছর শীতের শুরুতেও ডেঙ্গু আছে।

'এ বছর বৃষ্টিপাত, আর্দ্রতা, তাপমাত্রা ছিল এডিস মশার প্রজননের জন্য খুবই সহায়ক। এটা শুধু বাংলাদেশে না, আশপাশের দেশগুলোতেও একই পরিস্থিতি ছিল। মশা যেভাবে ছড়িয়েছে, তাতে এখন থেকে মোটামুটি সারাবছরই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকবে।'

সরকারি পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০০০ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি ছিল। এ সময় ১৫ হাজার ১২৫ জন হাসপাতালে ভর্তি হন, মারা যান ২৩৩ জন।

২০০৭ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ কিছুটা কমে আসে। সে সময় মোট আক্রান্ত হন ৬ হাজার ৬৫৬ জন; মারা যান ৯ জন।

২০১৫ সাল থেকে ডেঙ্গুর প্রকোপ আবার বাড়তে থাকে। ২০১৫ থেকে ২০১৮- এই চার বছরে ২২ হাজার ১৩৯ জন আক্রান্তের পাশাপাশি ৫৪ জনের মৃতু্য হয়।

২০০০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মোট ৫০ হাজার ১৪৮ জনের ডেঙ্গুর চিকিৎসা নেওয়ার তথ্য নথিভুক্ত হয়েছে সরকারের খাতায়। আর ২০১৯ সালে এর দ্বিগুণেরও বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে।

এ বছর মে মাস থেকেই ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হয়, জুন ও জুলাইয়ে ক্রমশ বেড়েছে আগস্টে তা মারাত্মক রূপ নেয়।

ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার পর এ বছরের জুলাইয়ের শেষ দিকে বিভিন্ন আবাসিক, বাণিজ্যিক ও নির্মাণাধীন বাড়িতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। এছাড়া বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিরুনি অভিযান চালানো হয়।

এডিস মশার লার্ভা পাওয়ায় বাড়ি মালিকদের জরিমানাও করা হয়। মসজিদ, স্কুলে চালানো হয় ডেঙ্গুবিষয়ক সচেতনতামূলক প্রচার। তবে এসব কার্যক্রম এখন প্রায় বন্ধ।

এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে ঢাকা উত্তর সিটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোমিনুর রহমান মামুন দাবি করেন, মাঝখানে কিছুদিন শিথিল থাকলেও এডিস মশা নির্মূলে আবার কার্যক্রম শুরু করেছেন তারা।

'আমরা এডিস নিয়ন্ত্রণে কাজ যে করিনি এমন না। তবে কিউলেক্স মশাটা নিয়ন্ত্রণে কিছুটা জোর দিয়েছিলাম। কিউলেক্স যতটা নিয়ন্ত্রণ আনার তা হয়েছে। এখন আবার এডিসের ওপর প্রায়োরিটি দিচ্ছি। প্রতিটি ওয়ার্ডে আমাদের ১০ জন করে কর্মী মশক নিয়ন্ত্রণ এবং উৎসস্থল ধ্বংসে কাজ করছে।'

ডেঙ্গুর বিষয়টি আর 'হালকা করে' দেখছেন না জানিয়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ডেঙ্গু প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, আগে পাওয়া না গেলেও ডেঙ্গু এখন 'অফ সিজনে' পাওয়া যাচ্ছে। সেজন্য 'বৃহৎ কর্মপরিকল্পনা' নিয়ে কাজ করছে সরকার।

\হ'আমরা একটা কর্মপরিকল্পনা করে এগোনোর চেষ্টা করছি। ডেঙ্গুর জন্য দায়ী মশার বাহক নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছি। এজন্য ইউনিয়ন, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন এবং ঢাকা শহরকে এই পরিকল্পনার অংশ করেছি।'

এখন মশা মারার চেয়ের মশার প্রজননস্থল ধ্বংসের দিকে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে বলে জানান মন্ত্রী।

তিনি বলেন, 'মশার ওষুধ মশা মারার সঙ্গে অন্যান্য উপকারী কীটপতঙ্গেরও ক্ষতি করে। এ কারণে মশা মারতে শুধু কীটনাশক ব্যবহার করলেই হবে না। আমরা ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী মশা নিয়ন্ত্রণে বেশি জোর দিচ্ছি।' বিডিনিউজ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<79994 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1