শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাসায়নিক দুর্যোগ মোকাবিলায় দক্ষ জনশক্তি গড়ার পরামর্শ

হাসান আরিফ
  ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

রাসায়নিক দ্রব্য খুবই বিষাক্ত। যা দিয়ে সহজেই রাসায়নিক অস্ত্রও তৈরি সম্ভব। তাই রাসায়নিক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি করে দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষা একান্ত প্রয়োজন বলে মনে করছে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ। আর দেশের অভ্যন্তরে যেকোনো রাসায়নিক দুর্যোগ বা দুর্ঘটনা মোকাবিলায় দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলারও পরামর্শ দিয়েছে এই বিভাগ।

জানা গেছে, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের পরামর্শেই এই খাতের দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলছে সরকার। রাসায়নিক অস্ত্রের কারণে দেশ আক্রান্ত হলে প্রশিক্ষিতরা যাতে দ্রম্নত উদ্ধার, চিকিৎসা ও দুর্যোগ-পরবর্তী ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে পারে সে জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি বা সরঞ্জামাদির প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেয়ারও ব্যবস্থা করা হয়েছে।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রাসায়নিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ আইন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে দেশে-বিদেশে বহুমাত্রিক ও বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম এবং ইন্টারেক্টিভ সেশন পরিচালনার মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে রাসায়নিক অস্ত্র (নিষিদ্ধকরণ) আইনের 'জাতীয় কর্তৃপক্ষ'।

জানা গেছে, জাতীয় কমিটি বা 'জাতীয় কর্তৃপক্ষ' বছরে একটি সাধারণ সভার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট আইন বাস্তবায়নে জাতীয় কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম পর্যালোচনা ও নীতিনির্ধারণী কর্মকান্ড পরিচালনা করে থাকে। কর্তৃপক্ষের মূল্যায়ন অনুযায়ী কাজের পরিধি উলেস্নখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনস্থ বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সুপারিশ করেছে জাতীয় কমিটি। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর সদস্যদের অন্তর্ভুক্তি নেই।

দেশের অভ্যন্তরে কোনো প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগ বা দুর্ঘটনায় জীবন ও সম্পদ রক্ষার ক্ষেত্রে দুর্যোগ-পরবর্তী উদ্ধার কার্যক্রম, হতাহতদের চিকিৎসা কার্যক্রম এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের সাথে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। এক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় তথ্যের আদান-প্রদান, নীতি নির্ধারণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য এই প্রতিষ্ঠান তিনটির সক্রিয় অংশগ্রহণ একান্ত প্রয়োজন। তাই সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ কর্তৃপক্ষ চাচ্ছে এসব মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অধিদপ্তর থেকে যুগ্মসচিব পদমর্যাদার একজন করে প্রতিনিধিকে রাসায়নিক অস্ত্র (নিষিদ্ধকরণ) আইনের 'জাতীয় কর্তৃপক্ষ'-তে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে।

সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রস্তাবে আরো বলা হয়েছে, তিন প্রতিষ্ঠানের তিন জন এ ছাড়া ভবিষ্যৎ প্রয়োজনে এই আইনটি জাতীয় পর্যায়ে সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট জাতীয় কমিটিতে পারিপার্শ্বিক ও সময়ের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে আরো নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্তির প্রয়োজন হতে পারে। এ বিবেচনায় জাতীয় কমিটি কর্তৃক নতুন সদস্য 'কোঅপ্ট' করার বিধান রাখা যুক্তিসংগত হবে বলে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ মতামত দিয়েছে।

পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য 'রাসায়নিক অস্ত্র (নিষিদ্ধকরণ) আইন, ২০০৬ (সংশোধন, ২০১৯) শীর্ষক একটি খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। এবং প্রস্তাবিত আইন সংশোধনের প্রস্তাবটি সার-সংক্ষেপ আকারে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত প্রধানমন্ত্রী নীতিগত অনুমোদন করেছেন বলে প্রতিরক্ষা সচিব আখতার হোসেন ভূইয়া স্বাক্ষরিত এক চিঠির সূত্রে জানা গেছে। এ ছাড়া আইনের বর্তমান বিধান ও প্রস্তাবিত বিধানের একটি তুলনামূলক বিবরণী এবং আইনটি সংশোধনের স্বপক্ষে যৌক্তিকতাও প্রস্তুত করা হয়েছে। এখন সংশোধিত আইনটি বিল আকারে মন্ত্রিসভার নীতিগত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হয়েছে।

উলেস্নখ্য, নেদারল্যান্ড ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা 'অর্গানাইজেশন ফর দ্য প্রহিবিশন অব কেমিক্যাল উইপন্স (ওপিসিডবিস্নউ)'-এর উদ্যোগে রাসায়নিক অস্ত্রের উন্নয়ন, উৎপাদন, মজুদ, ব্যবহার নিষিদ্ধকরণ এবং ধ্বংসকরণ সম্পর্কিত প্যারিসের আন্তর্জাতিক কনভেনশনে সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ ১৯৯৩ সালের ১৩ জানুয়ারি স্বাক্ষর করে। ওই কনভেনশনের চাহিদা অনুযায়ী সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের উদ্যোগে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয় মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ বিভাগ কর্তৃক প্রত্যক্ষভাবে 'রাসায়নিক অস্ত্র (নিষিদ্ধকরণ) আইন, ২০০৬ (২০০৬ সনের ৩৭ নং আইন) প্রণয়ন করা হয়। এই আইনের ষষ্ঠ অধ্যায়ের ২৩ ধারার উপধারা ২ অনুযায়ী বাংলাদেশ রাসায়নিক অস্ত্র (নিষিদ্ধকরণ) আইনের 'জাতীয় কর্তৃপক্ষ' ১৮ জন সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত। যাতে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার চেয়ারম্যান এবং আটটি মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও বিভিন্ন সংস্থার যুগ্মসচিব/উপযুক্ত পদমর্যাদার প্রতিনিধিরা রয়েছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<79817 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1