শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

পতাকা তৈরিতে ব্যস্ত দিন পার করছেন কারিগররা

যাযাদি রিপোর্ট
  ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০
পতাকা তৈরি করছেন কয়েকজন শ্রমিক

১৯৭১ সালে নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর এই ডিসেম্বরেই বাংলার আকাশে ওড়ে মুক্তির পতাকা। বিজয়ের মাস এলেই তাই সারাদেশ ছেয়ে যায় লাল-সবুজে। এরই ধারাবাহিকতায় এ মাসে জাতীয় পতাকার চাহিদাও বেড়ে যায় কয়েকগুণ। কারিগররা ভীষণ ব্যস্ত হয়ে পড়েন লাল-সবুজের পতাকা তৈরিতে।

বিজয়ের মাসে বাসা বাড়ির ছাদে, বারান্দায়, রিকশা, সাইকেল, মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, এমনকি সিটি সার্ভিসের বাসেও পতপত করে উড়তে দেখা যায় জাতীয় পতাকা। পতাকার এমন বাড়তি চাহিদার কারণেই রাজধানীর বিভিন্ন দর্জির দোকানে জাতীয় পতাকা তৈরির কাজ চলছে পুরোদমে।

সম্প্রতি রাজধানীর গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ, হকার্স মার্কেট, বঙ্গবাজারসহ বেশকিছু জায়গায় গিয়ে জাতীয় পতাকা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা যায় পতাকা বানানো কারিগরদের।

বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের উলটো দিকে সিটি সেন্টারের দোতলায় পতাকা বানাতে ব্যস্ত লক্ষ্ণীপুরের রায়পুর থানার ইয়াসিন। তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ দোকানে সারাবছরই পতাকা বানানো হয়। শুধু বাংলাদেশের পতাকাই নয়, অন্য যে কোনো দেশের পতাকাও সঠিক মাপে বানানো হয় এখানে। পতাকা বানানোর সঙ্গে যুক্ত থাকায় এ দোকানের মালিকের নামও হয়ে গিয়েছে 'পতাকা কামাল'। এ এলাকার সবাই তাকে পতাকা কামাল নামেই জানে। পতাকা কামাল প্রায় ১৬ বছর ধরে জাতীয় পতাকা তৈরির সঙ্গে জড়িত।

পতাকা বানানোর অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে ইয়াসিন বলেন, যে পতাকার জন্য ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছে, ২ লাখ মা-বোন সম্ভ্রম হারিয়েছে, সেই পতাকা বানাতে পেরে তিনি গর্বিত বোধ করেন।

কাজের চাপ কেমন- জানতে চাইলে পতাকা বানানো আরেক কারিগর মো. রিয়াজ বলেন, 'এই সময় আমাদের কাজের চাপ অনেক বেড়ে যায়। সকাল ৯টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত কাজ করেও শেষ করতে পারি না। আমরা দেড় ফুট থেকে শুরু করে দশ ফুট সাইজ পর্যন্ত পতাকা বানাই।'

তিনি আরও বলেন, 'পতাকার সিজন, যেমন- ২১শে ফেব্রম্নয়ারি, ২৬শে মার্চ, ১৬ই ডিসেম্বর, জাতীয় শোক দিবস এবং বাংলাদেশের ক্রিকেট খেলা চলাকালীন আমাদের কাজ বেশি হয়। তবে ১৬ ডিসেম্বরে সবচেয়ে বেশি পতাকা বিক্রি হয়। ফলে বিজয়ের এ মাসে আমাদের আয়ও অনেক ভালো হয়। ডিসেম্বরে আমি ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় করতে পারব বলে আশা করছি।'

দর্জি দোকানের মালিক পতাকা কামাল বলেন, 'সারা বছর বিভিন্ন স্কুল-কলেজ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পতাকা কিনলেও, আমরা পতাকা বিক্রির জন্য বিশেষ সিজনের অপেক্ষায় থাকি। পতাকা বিক্রির সব থেকে বড় সিজন হচ্ছে ডিসেম্বর। এই সময় ভালোই বেচাকেনা চলে। যেমন আজ আমি সারাদিনে পাইকারি ও খুচরা মিলিয়ে প্রায় ৪০ হাজার টাকার বিক্রি করছি। ১৬ ডিসেম্বর যতো কাছে আসবে বিক্রিও ততোই বাড়বে।'

পতাকার ব্যবসার সঙ্গে কেন জড়ালেন জানতে চাইলে পতাকা কামাল বলেন, 'আমি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারি নাই। তখন সে রকম বয়স থাকলে আমি অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধে যেতাম। আমি ও আমার পরিবার সবাই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক। ফলে পতাকা বানানো আমার কাছে সামান্য একটা পেশা নয়, তার থেকেও অনেক বেশি কিছু। এ ব্যবসার মধ্যে দিয়েই আমি আমার দেশপ্রেম বুঝি। বছরের অন্য সময় যখন বেচাবিক্রি হয় না, তখনও কিন্তু আমি এই পেশা ছাড়ি না। আমার বাকি জীবনটাও আমি পতাকা বিক্রি করেই কাটিয়ে দিতে চাই।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<79815 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1