বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য

খেলাপিতে ডুবছে নতুন ব্যাংকও

চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে চতুর্থ প্রজন্মের ৯ ব্যাংকের মোট খেলাপি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকা। তিন মাস আগেও যা ছিল ৫ হাজার ২৮ কোটি টাকা।
ইমদাদ হোসাইন
  ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০

খেলাপি ঋণের ফাঁদ থেকে বের হতে পারছে না ব্যাংক খাত। দেশের প্রচলিত পুরনো ব্যাংকগুলোর পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের ব্যাংকগুলোও খেলাপি ঋণে ডুবছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে চতুর্থ প্রজন্মের ৯ ব্যাংকের মোট খেলাপি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকা। তিন মাস আগেও যা ছিল ৫ হাজার ২৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে ব্যাংকগুলোর খেলাপি বেড়েছে ৭২৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা বা ১৪ দশমকি ৪৮ শতাংশ।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, খেলাপি ঋণের গ্রাহকদের কোনো শাস্তির ব্যবস্থা না করে উল্টো তাদের বারবার সুযোগ দেয়ার কারণে এসব ঋণ বাড়ছে। অপরাধীদের শাস্তির আওতায় না আনা পর্যন্ত এই ঋণের লাগাম টানা যাবে না। এ জন্য ব্যাংক নিয়ন্ত্রণকারী এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে আরও কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য হালনাগাদে দেখা যায়, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে নতুন এই ৯টি ব্যাংকের মোট খেলাপি ছিল ৪ হাজার ২২৮ কোটি টাকা। অথচ এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি বেড়েছে প্রায় ১ হাজার ৫২৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খন্দকার ইব্রাহীম খালেদ বলেন, যদি খেলাপি গ্রাহকদের শাস্তি দেয়া হতো তাহলে আজ এই পরিস্থিতি দাঁড়াত না। বরং দেখেছি, খেলাপি গ্রাহকদের বিভিন্নভাবে সুযোগ দিয়ে উৎসাহ দেয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, খেলাপি গ্রাহকদের বিভিন্ন সুযোগ দেয়ার পর, ভালো গ্রাহকরাও এখন খেলাপি হয়ে যাচ্ছে। কারণ তারাও ভাবছেন, খেলাপি হলে ৯ শতাংশ সুদে ঋণ পাওয়া যাবে। আর খেলাপি না হলে ঋণে সুদ হবে ১২ থেকে ১৩ শতাংশ।

তথ্য হালনাগাদে দেখা যায়, ডুবে যাওয়া থেকে সরকারি উদ্যোগে উত্তরণের ব্যবস্থা নেয়া হলেও খেলাপি বেড়েই যাচ্ছে। ফারমার্স ব্যাংকের, যেটি নাম পাল্টে এখন পদ্মা ব্যাংক। ব্যাংকটির আলোচিত সময়ে খেলাপি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৯৩২ কোটি ১২ লাখ টাকা। গত বছরের একই সময়ে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৭০ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। বছরের ব্যবধানে ব্যাংকটির খেলাপি বেড়েছে ৮৬১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।

এরপরই খেলাপি ঋণে সবচেয়ে শোচনীয় অবস্থায় আছে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক। আলোচিত প্রান্তিকে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে, ৫০৯ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। গত বছরের একই সময়ে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৩৫০ কোটি ৭০ লাখ টাকা। বছরের ব্যবধানে ব্যাংকটির ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।

মেঘনা ব্যাংকের খেলাপি ঋণও ধীরে ধীরে বাড়ছে। এই ব্যাংকটির সর্বশেষ প্রান্তিকে খেলাপি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা। অথচ গত বছরের সেপ্টেম্বরেও এর পরিমাণ ছিল ২৩৫ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। বছরের ব্যবধানে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১২৪ কোটি ১২ লাখ টাকা।

নতুন প্রজন্মের ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেপোরোয়া ইউনিয়ন ব্যাংক। এই ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ যেন লাগাম ছাড়া। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২২৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। গত বছরের একই সময়ে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ছিল ৮৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। বছরের ব্যবধানে খেলাপি বেড়েছে ১৩৯ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।

তবে খেলাপি নিয়ন্ত্রণে আশানুরূপ ফল পাচ্ছে এনআরবি গেস্নাবাল ব্যাংক। এই ব্যাংকটির সর্বশেষ প্রান্তিকে খেলাপি বেড়ে দাঁড়ায় ১৫৮ কোটি ১ লাখ টাকায়। এক বছর আগে এই ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১৫৭ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। বছরের ব্যবধানে ব্যাংকটির খেলাপি বেড়েছে মাত্র ৫৪ লাখ টাকা।

নতুন ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সুনাম কুড়িয়েছিল সাউথ বাংলা এগ্রিকালচারাল ব্যাংক। সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে এই ব্যাংকটির খেলাপি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪০ কোটি ১৮ লাখ টাকা। আগের বছরের একই সময়ে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৮৭ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। বছরের ব্যবধানে ব্যাংকটির খেলাপি বেড়েছে ৫২ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।

এছাড়া সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে মধুমতি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ১১৫ কোটি ৬২ লাখ টাকা, আগের বছর একই সময়ে যা ছিল ১০২ কোটি ১৮ লাখ টাকা। মিডল্যান্ড ব্যাংকের খেলাপি দাঁড়িয়েছে ১০৪ কোটি ২৪ লাখ টাকা, আগের বছর যা ছিল ৬৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। এনআরবির খেলাপি ২১৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা, এক বছর আগে যা ছিল ১১৭ কোটি ৬২ লাখ টাকা।

আলোচ্য সময়ে পুরো ব্যাংকিং খাতেরই খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি পেয়েছে। নানা তৎপরতা ও সুযোগ-সুবিধার পরও কমেনি খেলাপি ঋণ। বরং বেড়েছে। নতুন অর্থবছরের প্রথম ৩ মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ বেড়েছে। যা মোট বিতরণ করা ঋণের প্রায় ১২ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ৯ লাখ ৬৯ হাজার ৮৮২ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে পড়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা। যা মোট বিতরণ করা ঋণের ১১ দশমিক ৯৯ শতাংশ।

খন্দকার ইব্রাহীম খালেদ বলেন, ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে সঠিকভাবে খেলাপি ঋণ কমবে না, বরং এটাকে অন্যায়ভাবে কমিয়ে ফেলা হবে। কারণ ডাউন পেমেন্ট নিয়ে খেলাপি ঋণ নিয়মিত করলে খেলাপির পরিমাণ কম দেখাবে। কিন্তু বাস্তবে তো খেলাপি থেকেই যাচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<79673 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1